অচ্যুতানন্দনের নজির টেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে তীব্র কটাক্ষ শুভেন্দুর
নন্দীগ্রামের হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে জয়লাভ করে শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা। আর 'মেজো বোন' নন্দীগ্রামে পরাজিত হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই তৃণমূল সুপ্রিমোর 'বড় বোন' ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটে জয়ী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় গতকাল বিধানসভায় গিয়ে ইস্তফা দিয়ে জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে ভোটে লড়বেন, সে কারণে আমি ইস্তফা দিলাম। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার ৬ মাসের মধ্যে কোনও আসন থেকে ভোটে জিতে আসার নিয়ম রয়েছে। সবচেয়ে নিরাপদ ভবানীপুর থেকেই তাই জয়ের হ্যাটট্রিক সারতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর একেই তীব্র কটাক্ষ করলেন শুভেন্দু অধিকারী।
অচ্যুতানন্দন হতে পারলেন না মমতা
শুভেন্দু অধিকারী এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, নৈতিক কারণেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসা উচিত হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর দল বাংলার বিধানসভা ভোটে জিতলেও তিনি নিজে নন্দীগ্রামে হেরেছেন। মানুষ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৯৯৬ সালে কেরলে এলডিএফ জিতেছিল, কিন্তু নিজের আসনে হেরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভি এস অচ্যুতানন্দন। ওই পরাজয়ের পর আর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও উদ্যোগই নেননি।
কৃষক নয়, ক্যাডার!
প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধিতে রাজ্যের মাত্র ৭ লক্ষ কৃষক টাকা পাওয়ায় সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এ ব্যাপারে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ২০১১ সালের জনগণনা ধরলে রাজ্যের ৭০ লক্ষ কৃষকের উপকৃত হওয়ার কথা ছিল এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু সেটা হয়নি রাজ্য সরকারের কারণেই। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমাদের দল বিজেপির তরফে বারবার এই বিষয়টির কথা তুলে ধরা হয়েছে। গত বছর কৃষি দফতর একটি পোর্টাল তৈরি করে এবং সেখানে নাম নথিভুক্ত করেন ৪০ লক্ষ কৃষক। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও টাকা পেলেন ৭ লক্ষ কৃষক। এর কারণ হলো শুধু তৃণমূলের নেতা আর ক্যাডারদের নামই কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছে তৃণমূল সরকার। তার মধ্যেও আবার বেশিরভাগ নাম একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের, যাকে তৃণমূল ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে। বিজেপি বা অন্য দলের সমর্থন করেন এমন কৃষকরা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হলেও তাঁদের নাম কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়নি। আবার যে কৃষকরা এই প্রকল্পের টাকা পেলেন তাঁদের আশ্বস্ত করতে মরিয়া হয়ে প্রতিটি বিডিও অফিসি মুখ্যমন্ত্রী লিফলেট বিলি করে বলেছেন, তাঁর লড়াইয়ের ফলেই নাকি এই টাকা কৃষকরা পেলেন! আরও একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে নিজেদের বলে চালানোর সুবিধাবাদী প্রয়াস ছাড়া এটা কিছুই নয়। সামনে বাংলায় কোনও নির্বাচন না থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করে যাচ্ছেন! নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক প্রচার হতেই পারে, কিন্তু বাংলায় সেটা ৩৬৫ দিনই চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল।
শক্তিশালী গঠনমূলক বিরোধিতা
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, অন্য রাজ্যে বিরোধী দলনেতাকে কাজ করার সুযোগ, সম্মান, স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বাংলায় তা হয় না। সরকারে থাকাকালীন ১০ বছর ধরে অন্তত সেটা আমি দেখেছি। বিরোধী দলনেতাকে সম্মান প্রদর্শন কখনও করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু আমাকে যখন আমাদের দল বিরেধী দলনেতা করেছে, নিজের সর্বশক্তি ও উদ্দীপনা দিয়ে আমি সেই দায়িত্ব পালন করব। বিরোধী দল হিসেবে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করব, বিধানসভার মর্যাদা শিরোধার্য করে বিভিন্ন ইস্যু জোরালোভাবেই উত্থাপন করব। দুই বিজেপি বিধায়কের পদত্যাগের পরেও আমাদের ৭৫ জন বিধায়ক বিধানসভায় রয়েছেন। বিরোধী দল হিসেবে এটা যথেষ্টই ভালো শক্তি।
বিজেপির পরাজয়
বিধানসভা ভোটে দুশোর বেশি আসন জয়ের লক্ষ্যে বিজেপি ঝাঁপিয়েছিল। কিন্তু তার কাছাকাছিও পৌঁছানো যায়নি। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, দিল্লিতে গিয়ে আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা-র সঙ্গে দেখা করব। বিধানসভা ভোট নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তাঁদের জানাব। এটা দলের ভিতরেই আলোচনা করা হবে, মিডিয়ার সামনে নয়।
নারদকাণ্ড নিয়ে
নারদ কাণ্ডে চার হেভিওয়েটের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, এটা বিচারাধীন বিষয়। তবে গ্রেফতারির সময় নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা অবান্তর। ভোটের সময় গ্রেফতার করা হলে তখন বলা হতো, একটি দল নির্বাচনের আগে বাড়তি সুবিধা পেতে এটা করছে। একটাই কথা বলব, আইন আইনের পথেই চলবে।
ভোট পরবর্তী হিংসা
গতকালই ঘাটালের বিধায়ক শীতল কপাট আক্রান্ত হন। অভিযোগের তির তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকেই। আজ আহত বিধায়ককে দেখতে যান শুভেন্দু অধিকারী।ভোট ও গণনা পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এই সময়কালে আমাদের ৩০ জনের বেশি কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। এখনও লুঠ, জুলুম, হিংসার ঘটনা চলছে। পুলিশের কাছে ১০ থেকে ১২ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। কোথাও কোথাও আবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর মতো পরিস্থিতিও নেই। অনেকেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও এই ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিচারব্যবস্থার প্রতিও আমাদের আস্থা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও দেশের বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে এই বিষয়ে যথোচিত পদক্ষেপ করা হবে বলেই আশা রাখি। আতঙ্কের পরিবেশে, ভয়ে বাংলা ছেড়ে অসম, ঝাড়খণ্ড, ওডিশাতে পালিয়ে গিয়ে রিফিউজি হিসেবে ত্রাণশিবিরে রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আমরা যাতে আন্দোলন সংগঠিত করতে না পারি অতিমারি আইনকে ঢাল করে তা নিশ্চিত করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু একই বিধিনিষেধ জারি থাকলেও সিবিআই দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। সিবিআই অফিসে গিয়ে নিজে ধরনা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী! অথচ তার আগেই করোনা চিকিৎসায় গাফলতির প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে আমাদের তিনজন বিধায়ক যখন শান্তিপূর্ণ ধরনায় বসেছিলেন, তখন সেখান থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁদের আধ ঘণ্টা আটক করে রেখেছিল!