'কাটমানি' নিয়ে মমতার হুঁশিয়ারি দেওয়া উচিত ছিল আরও আগেই; এখন দেরি হয়ে গিয়েছে
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন ভূত তাড়ানোর মতো অবস্থা। গত মঙ্গলবার, ১৮ জুন, দলের কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার সময়ে সরকারি প্রকল্পের সুবিধে দেওয়ার সময়ে 'কাটমানি' নেওয়ার সংস্কৃতিকে তীব্র ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকে সাধারণ মানুষের থেকে, তা যেন এখুনি ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। 'সমব্যথী'র মতো প্রকল্পে, যেখানে গরিব-গুর্বো মানুষদের তাদের বাড়িতে কেউ মারা গেলে অন্ত্যেষ্টির জন্যে ২,০০০ টাকা দেওয়ার সুবিধে রয়েছে, সেখানেও ২০০ টাকা ঘুষ খাওয়ার ঘুষ খাওয়া হয় বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী রীতিমত কড়া অবস্থান নিয়ে বলেন যে চোরেদের তিনি দলে রাখবেন না।
মমতা দুর্নীতির প্রসঙ্গে কড়া হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যজুড়ে দেখা যায় নানা প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনা। বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মালদা ইত্যাদি নানা জেলায় সাধারণ মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পথে নামেন, তাঁদের বাড়ি ঘেরাও করেন। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ঘুষের টাকা ফেরাতে হবে।

শুধু 'টাকা ফেরত দিন' বললেই কাজ হবে?
ব্যাপারটি বেশ উদ্ভট আকার ধারণ করতে চলেছে। তৃণমূল নেত্রীর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা অবশ্যই প্রশংসনীয় কিন্তু তাঁর প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে সন্দিহান হতেই হয়। যে যে টাকা ফেরত নিয়েছেন, ফেরত দিন বললে কি আদৌ কোনও সুরাহা হবে সমস্যার? কোনও তদন্ত না করে স্রেফ আদেশ দিয়ে কি এই প্রবণতা থামানো যাবে? দুর্নীতি বন্ধের জন্যে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া-প্রচেষ্টা। তদন্ত-মামলা-আইন-আদালত ইত্যাদির প্রয়োজন সেখানে রয়েছে। দরকার আইনের শাসন দৃঢ় করারও। কিন্তু সেসবের ধার মুখ্যমন্ত্রী ধারেননি। সে-যুগের রাজার মতো "নিয়ে যায় ব্যাটাকে ঠ্যাং ধরে" ধরনের নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। এতে হিতে বিপরীত হতে বেশিক্ষণ লাগবে না। কাল যদি এই বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভের ফলে রাজ্যজুড়ে নৈরাজ্য দেখা দেয়, তাহলে কিন্তু প্রশাসনই সমস্যায় পড়বে।

এটা নিজের ভাবমূর্তি বাঁচানোর চেষ্টাই কী শুধু?
আরেকটি প্রশ্ন না করে থাকা যায় না। নির্বাচনের ভরাডুবির পরে, দলে চূড়ান্ত ভাঙন দেখা দেওয়ার সময়ে হঠাৎ নেত্রীর বোধোদয় হল যে দলের মধ্যেই ঘুষখোর রয়েছে? তিনি এমন এক সময়ে তাঁর এই যুদ্ধ ঘোষণা করলেন যে অনেকের মনেই সন্দেহ জাগবে। নিতান্তই কি ঠেকায় পড়ে মমতা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন, সাধারণ মানুষের মনে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে?

যাদের তাড়াবেন, তাদের জন্য অন্য দল অপেক্ষা করে রয়েছে এখন
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই রাজ্যজুড়ে যেভাবে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এই বিষয়ে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। 'কাটমানি'র ব্যাপারে অসন্তোষ যে চাপা ছিল এবং এখন মুখ্যমন্ত্র মুখ খোলাতে তা প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়েছে, সেটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। কিন্তু কীভাবে নেত্রী এই অভিযুক্তদের মোকাবিলা করবেন? শুধু দল থেকে তাড়িয়ে দিলেও কি এখন আর কাজ হবে? দল থেকে তো এমনিই দলে দলে লোক চলে যাচ্ছে বিজেপিতে। যখন একটি বিকল্প মঞ্চের খোঁজ লোকে পেয়েছে, তখন তাদের তাড়িয়ে আদৌ কিছু অর্জন হবে মমতার? অথচ এই পদক্ষেপটি তিনি যদি নিতেন প্রথম থেকেই, তাহলে আজ এই গেরোয় পড়তে হতো না।