For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

নির্বাচনের পরে মানুষের উপরে অভিমানী মমতা; আবেগ দেখাচ্ছেন বেশি, বাস্তব বুঝছেন কম

শনিবার, ২৫ মে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতেই বসেছিল সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে পর্যালোচনার সভা।

  • By Shubham Ghosh
  • |
Google Oneindia Bengali News

শনিবার, ২৫ মে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতেই বসেছিল সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে পর্যালোচনার সভা। সেখানে এই নির্বাচনে কেন রাজ্যের সবক'টি আসন জেতার লক্ষ্যে নেমেও শেষ পর্যন্ত ২২টির বেশি পাওয়া গেল না, তা নিয়ে পোস্টমর্টেম করতে বসেছিলেন নেত্রী সহ দলের সমস্ত প্রার্থী, নেতা-হোতারা। বিজেপি এবারে জিতেছে ১৮টি আসনে এবং ভোট শতাংশের হিসেবে দু'টি দলের মধ্যে খুব কমই ব্যবধান।

মমতা পর্যালোচনা করতে গিয়ে কয়েকটি কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটি হল যে তিনি নাকি উন্নয়নের কাজ একটু বেশি করে ফেলেছিলেন। দু'টাকার চাল, বিনা লোডশেডিং, চিকিৎসার সুবিধে, চাষের কাজের অগ্রগতি ইত্যাদি নানা দিক তিনি দর্শান এবং বলেন এবারে তিনি দলের দিকে বেশি নজর দেবেন। অতীতে রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক ছাড়তে তাঁর এক মিনিট লেগেছিল জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন চেয়ারের প্রয়োজন তাঁর নেই; বরং চেয়ারকেই তাঁর প্রয়োজন। মমতা বলেন যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন ঠিক করেছিলেন কিন্তু দল তাঁর কথা মানেনি বলে তাঁর অভিমত।

অভিমানী মমতা আট বছরে প্রশাসনে কতটা অক্সিজেন জোগাতে পেরেছেন?

অভিমানী মমতা আট বছরে প্রশাসনে কতটা অক্সিজেন জোগাতে পেরেছেন?

উন্নয়ন নিয়ে মমতার এই কথার মধ্যে প্রচ্ছন্ন লুকিয়ে রয়েছে অভিমান, অসহায়ত্ব এবং আত্মসমর্পনের সুর। আজকের ভারতের রাজনীতিতে উন্নয়ন একটি সাধারণ ন্যারেটিভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব নেতাই উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন কারণ এর মধ্যে দিয়ে জাতপাত, ধর্মের হানাহানি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ইত্যাদি অনেক কিছুই ঢেকে দেওয়া যায়। মমতা ক্ষেত্রে উন্নয়নের খতিয়ান যে একেবারে শূন্য তা বলা চলে না, কিন্তু উন্নয়নের পাশাপাশি তার চেয়ে অনেক অধিক মাত্রায় মমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাঁর দলের দলবাজি এবং তাঁর নিজের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। যে মেশিনারি দিয়ে মমতা এখন নির্বাচনে লড়েন, তা প্রকারান্তরে তাঁর পূর্বসূরি বামেদেরই দেখানো পথে এগিয়েছে কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর একচ্ছত্র আধিপত্য এবং মিডিয়ার রমরমাতে মমতার এই শাসনব্যবস্থার ঘুণ দিনে দিনে আরও প্রকট হয়েছে। যেহেতু তিনি দলের এবং প্রশাসনের মাথা, তাই তাঁর প্রশাসন দিনের শেষে তাঁর দলের 'সাপ্লাই লাইন'-এর উপরেই নির্ভরশীল এবং যেহেতু দল সেভাবে দক্ষ নেতা তৈরী করে উঠতে পারেনি গত আট বছরে, তাই প্রশাসনেও মমতার সরকার ক্রমাগত ধাক্কা খেয়েছে। বামেদের ক্ষেত্রে দল ও সরকারের মধ্যে প্রথমদিকে একটি ব্যবধান থাকলেও পরে সরকার দলের কাছে মাথা নত করে। তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এই মাথা নত হওয়ার ব্যাপারটি ঘটে গিয়েছে প্রথম থেকেই কারণ দলের মাথা, সংগঠন, আদর্শ যা কিছু সব ওই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।

বারবার বোঝাতে চেয়েছেন যে বিজেপি বাংলার মাটিতে এগোবে না

বারবার বোঝাতে চেয়েছেন যে বিজেপি বাংলার মাটিতে এগোবে না

বিজেপির কাছে আজ জমির অনেকটাই খুইয়ে মমতা তাই আজ বিরক্ত, দিশাহীন, অভিমানী। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে বাংলার জমিতে হিন্দুবাদী শক্তি সহজে কল্কে পাবে না এবং তাঁর দূর্গ দুর্ভেদ্যই থাকবে; এক সময়ে বামেদের যেমন ছিল। তাই তিনি এই নির্বাচনের প্রচারে মোদী, অমিত শাহ এবং বিজেপিকে ক্রমাগত বহিরাগত হিসেবে আক্রমণ করে গিয়েছেন; বোঝাতে চেয়েছেন যে বিজেপির সঙ্গে বঙ্গীয় সমাজ-সংস্কৃতির কোনও সাযুজ্য-সঙ্গতি নেই। সম্প্রতি বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা পড়লে তাই নিয়েও তিনি গর্জে ওঠেন এই দাবিটি প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই।

বিজেপি বঙ্গে রামমন্দির তৈরী করার জন্যে আসেনি, এসেছে মমতাকে হারাতে

বিজেপি বঙ্গে রামমন্দির তৈরী করার জন্যে আসেনি, এসেছে মমতাকে হারাতে

কিন্তু মমতা বোঝেননি যে বিজেপির উত্থান ঘটেনি বামেদের ভোট সমর্পণ করার জন্যে (কেউ নিশ্চই যেচে নিজের ভোট শতাংশ অন্যকে দিয়ে দেয় না) বা তাঁর প্রতি মানুষের 'অবিচার'-এর কারণে। বিজেপি হয়তো শাসকদল হওয়ার সুবিধে পেয়েছে কিন্তু সেটাই তৃণমূলের এই অস্বস্তির প্রধান কারণ নয়। মমতার বিরুদ্ধে ভোট চলে যাচ্ছে কারণ তিনি বাস্তব থেকে ছিন্ন হচ্ছেন; অতীতের ক্ষমতান্ধ ও উদ্ধত বামেদের মতো দেখতে পারছেন না বাস্তব। পশ্চিমবঙ্গের সমাজজীবনে হিন্দুবাদের প্রভাব আগের চেয়ে বেড়েছে নিঃসন্দেহে কিন্তু এই নির্বাচনের ফলাফলের অন্যতম বড় কারণ রাজনৈতিক এবং তা হচ্ছে মমতার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া আরও তীব্র হওয়া।

আজ মমতা শুধুই সরকার দেখুন বা দল, তাঁর প্রয়োজন পড়বে দক্ষ, ভাল সহকর্মীর। আর এখানেই তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কাজ করে দিয়েছি বলে আত্মপ্রসাদ বোধ করা প্রকৃত সফল প্রশাসকের কাজ নয় কিন্তু মমতা সেই মানসিকতা থেকে বেরোতে পারছেন না। তিনি হয়তো ভাবছেন যে একবার একটি কিছু করে দিলেই মানুষের বেনিফিট অফ ডাউট তিনি পাবেন আর তোলাবাজি, দাদাগিরির মতো ঘৃণ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ তাঁকেই আপন করে নেবে; কিন্তু এই কৌশল কিছুকাল চললেও চিরকাল চলবে না।

শিল্প করতে পারেননি, সামনে দেখিয়েছেন কুমিরছানার মতো ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তত্ত্ব

শিল্প করতে পারেননি, সামনে দেখিয়েছেন কুমিরছানার মতো ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তত্ত্ব

এছাড়া মমতা যেই জায়গায় সবচেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তা হল আর্থিক ক্ষেত্রে। রাজ্যে তিনি চাকরি-কারখানা-শিল্প কিছুই আনতে পারেননি এবং সিঙ্গুরে জমি ফিরিয়ে তিনি তাঁর সাম্যবাদী ভাবমূর্তিটির একটি প্রতীকী জয় প্রতিষ্ঠা করলেও রাজ্যের এবং সিঙ্গুরের মানুষ জানে যে টাটা মোটরস-এর প্রস্থান রাজ্যকে পিছিয়ে দিয়েছে শতগুণ। গত আট বছরে ক্ষমতায় থাকার পরেও মমতা, যিনিই কী না টাটাদের পিছু হঠিয়ে নিজের ভোটব্যাঙ্কটি চাঙ্গা করতে বিরাট আন্দোলনের ডাক দেন, ওই অঞ্চলে ফের শিল্প তৈরির পথে হাঁটেননি। উল্টে সস্তা হাততালি পেতে বলেছেন জমি তিনি দখল করবেন না; কুমিরছানার মতো 'ল্যান্ড ব্যাঙ্ক'-এর কাহিনী পেশ করেছেন নানা মঞ্চে। স্বভাবতই এই সমস্ত ভ্রান্ত আর্থিক নীতির কারণে রাজ্যের কপাল ফেরেনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আর মমতার প্রতি মানুষের হতাশা আরও বেড়েছে।

পর্যালোচনায় এই আত্মসমীক্ষা কি উঠে এসেছে?

English summary
Mamata’s soul-searching after Lok Sabha election results; she is more emotional than realistic
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X