সবুজ ঝড়ের পরও অস্বস্তিতে মমতা, নন্দীগ্রাম-সহ পূর্ব মেদিনীপুরে দলের ভোটব্যাঙ্কে বড় ধস
নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর কাছে মমতা হেরেছেন, রুখতে পারেননি ভোটব্যাঙ্কে বিপুল ধস
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এবার সকলেরই নজর ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। ফলাফল সকলেরই জানা। বাংলায় যেখানে সবুজ ঝড়, সেখানে শেষ রাউন্ড অবধি লড়াইয়ে ১৯৫৬ ভোটে জয় ছিনিয়ে নিয়ে জায়ান্ট কিলার তকমা পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ভোট প্রচারে গিয়ে নন্দীগ্রামে সচিবালয় গড়া থেকে সেতুর মাধ্যমে হলদিয়া ও নন্দীগ্রামকে জোড়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতেও জনগণের মন যে তৃণমূল জিততে পারেনি তার প্রমাণ হলদি নদীর দুই পাড়েই তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে বিপুল ধস।
নন্দীগ্রাম ও তৃণমূল
২০০৯ সালের বিধানসভা উপনির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে জেতেন শহিদ-মাতা ফিরোজা বিবি। সেবার তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৫৮.২৮ শতাংশ। বিজেপির তখন ভোট ছিল ১.৭২ শতাংশ। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফিরোজা বিবি ফের বিধায়ক হন, তৃণমূলের শতকরা ভোটের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬১.২১ শতাংশ। বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার আগের মতোই ছিল। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে ৮১,২৩০ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়ে হয়েছিল ৬৭.২০ শতাংশ।
দুই বছরে ধস তৃণমূলে
তমলুক লোকসভা এলাকার অন্যতম এই নন্দীগ্রাম বিধানসভা ক্ষেত্র। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক লোকসভার সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রেই লিড পান দিব্যেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে বিজেপির চেয়ে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ৬৮,৩৯১ ভোটে। শুভেন্দু অধিকারী এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম জেতার হুঙ্কার দিয়ে প্রার্থী হন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ হাসি অবশ্য হেসেছেন শুভেন্দু অধিকারীই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন ৪৭.৬৪ শতাংশ ভোট। শুভেন্দু অধিকারী পেয়েছেন ৪৮.৪৯ শতাংশ ভোট। ২০১৬ সালের তুলনায় এবারের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের ভোটের হার কমেছে ১৯.৫৬ শতাংশ। বিজেপির ভোটের শতকরা হার বেড়েছে ৪৩.০৯ শতাংশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়ের সঙ্গে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে এই বিপুল ধস দলনেত্রীর আটকাতে না পারা নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা।
পূর্ব মেদিনীপুরের চিত্র
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১৬টি বিধানসভা আসন। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ১৬টিতেই জেতে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জেতে ১৩টি, বামেরা জেতে ৩টিতে। বিজেপি একটিতেও জিততে পারেনি। কিন্তু এবারের বিধানসভা ভোটে শূন্য থেকে শুরু করে সাতটি বিধানসভা আসন জিতে নিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের আসন সংখ্যা এই জেলায় ১৩ থেকে কমে হয়েছে ৯। বামেদের হাতছাড়া হয়েছে তিনটিই। পাঁশকুড়া পূর্ব ও তমলুক জিতেছে তৃণমূল। হলদিয়ায় সিপিআইএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বিজেপিতে যোগ দিয়ে ফের বিধায়ক হয়েছেন। হলদিয়া বিধানসভা ক্ষেত্রে তৃণমূলের লিড ছিল ৬৩,৮২১ ভোটের। সেই হলদিয়া আসনটি বিজেপি বছর দুয়েকের মধ্যেই জিতে নিল ১৫ হাজার ৮ ভোটে।
ক্ষয়িষ্ণু তৃণমূল
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুটি লোকসভা আসন তমলুক ও কাঁথি। গত লোকসভা ভোটে এই দুই লোকসভা ভোটের ১৪টি বিধানসভা ক্ষেত্রেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এবারের বিধানসভা ভোটে কাঁথি লোকসভায় চণ্ডীপুর, পটাশপুর ও রামনগরে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও চারটিতে এগিয়ে বিজেপি। রামনগর বাদে দুটি বিধানসভা আসনে আবার তৃণমূলের মার্জিন ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের তুলনায় বেশ খানিকটা কমেছে। তমলুক লোকসভার সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে আবার তিনটিতে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, ভগবানপুর ও খেজুরিতে বিজেপি এগিয়ে। বামেদের হাতে থাকা পাঁশকুড়া পূর্বে লোকসভা ভোটে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ৭,৩৬০ ভোটে, সেটা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,৬৬০। যদিও জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র পিংলা ছেড়ে তমলুকে এসে জিতেছেন মাত্র ৭৯৩ ভোটের ব্যবধানে, বিজেপির থেকে ০.৩৪ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে। এখানকার সিপিআই বিধায়ক ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। জেলায় দলের কাঙ্ক্ষিত ফল না হওয়ায় অনেক আসনেই অন্তর্ঘাতকে দায়ী করছে তৃণমূল। তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও অস্বস্তি কাটছে না। যেমন, তমলুক লোকসভার মধ্যেই ২০১৯ সালে ময়নাতে তৃণমূলের লিড ছিল ১২,৩৮৩, সেখানে এবার ১২৬০ ভোটে জিতেছেন বিজেপির অশোক দিন্দা। নন্দকুমারে লোকসভা ভোটের সময় তৃণমূল যেখানে এগিয়ে ছিল ১৫,৩৫৮ ভোটে, এবার সেই মার্জিন কমে এসেছে ৫,৪০৬-এ। মহিষাদলে মার্জিন ১৬,৯১৬ থেকে দুই বছরেই কমে হয়েছে ২,৩৮৬। তবে মেদিনীপুর লোকসভা আসনের এগরা ও ঘাটালের পাঁশকুড়া পশ্চিমে লোকসভা ভোটের লিড ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। এই দুটি আসন দখলে রেখেছে তৃণমূল।
জল্পনার অবসান! মুখ্যমন্ত্রীত্বের দৌড়ে সর্বানন্দকে পিছনে ফেলে পদ্মশিবিরের পছন্দ হিমন্ত বিশ্বশর্মাই