কংগ্রেস চাইলে বিজেপি বিরোধী তৃণমূলের জোটে স্বাগত, মমতার আহ্বানে কীসের বার্তা
কংগ্রেস চাইলে বিজেপি বিরোধী তৃণমূলের জোটে স্বাগত, মমতার আহ্বানে কীসের বার্তা
তৃণমূল গোয়া জয়কে পাখির চোখ করেছে ২০২২-এ। বিজেপিকে হারাতে তারা কংগ্রেসকে ভেঙে সংগঠন শক্তিশালী করছে। সম্প্রতি ভাঙল শারদ পাওয়ারের এনসিপিকেও। তারপর আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন, কংগ্রেস যোগ দিতে পারে তৃণমূলের জোটে। গোয়ায় দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বাণী ফের প্রমাণ করল, কংগ্রেসের সঙ্গে চলতে চাইলেও কংগ্রেসের দাদাগিরি তারা মানবে না।
তৃণমূলের জোটই বিকল্প গোয়ায়, বললেন মমতা
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গোয়ায় দলগুলির সঙ্গে জোট গঠন করেছে। কংগ্রেস যদি চায় তবে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে। কেননা এখন তাদের জোটই বিকল্প গোয়ায়। বিজেপি শাসনের অবসান চাইলে কংগ্রেসকে তাদের জোটে আসতে হবে।
কংগ্রেসকে ভাঙছে, আবার ডাকছেও জোটে
একুশের নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস একলা চলো নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। ভিন রাজ্যে তারা সংগঠন বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছে। আর ভিনরাজ্যে সংগঠন বাড়াতে গিয়ে তরা মূলত কোপ ফেলছে কংগ্রেসের ঘাড়েই। বিভিন্ন রাজ্যে তারা কংগ্রেসকে ভাঙছে। কিন্তু বিজেপিকে তারা সেভাবে এখনও ভাঙতে পারেনি। এক-আধজন ছিটকে চলে এসেছে তাদের দলে।
তৃণমূলের পদক্ষেপে রাজ্যে রাজ্যে লাভবান হচ্ছে বিজেপি
তৃণমূল লাগাতার কংগ্রেসকে ভেঙে চলায় অনেক রাজ্যেই তাঁদের জয়ের পথ মসৃণ হচ্ছে বিজেপির। বহু রাজ্যেই অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর রয়েছে। সেই প্রতিকূলতা বিজেপি কাটাচ্ছে প্রধান বিরোধী কংগ্রেসকে ভেঙে। নিজেরা তো ভেঙেছেই, এখন তৃণমূলের এই পদক্ষেপে বিজেপি লাভবান হচ্ছে। এবং রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির জয়ের পথ মসৃণ হচ্ছে।
বিজেপিকে চাইছে না গোয়ার মানুষ, তারা বিকল্প চাইছে
গোয়াতেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কংগ্রেসের শক্তিহরণ করে বিজেপির জয়ের পথ সুগম করে দেওয়া হচ্ছে প্রকারান্তরে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তৃণমূল তা মানতে নারাজ। তৃণমূলের দাবি, বিজেপিকে চাইছে না গোয়ার মানুষ। তাঁরা বিকল্প চান। কংগ্রেস সেই বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। তাই তৃণমূলকে পা রাখতে হয়েছে এবং তৃণমূলের দিকে চলে আসছেন বিরোধীরা। তাঁরা সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছেন।
যাঁরা চান বিজেপিকে হারাতে, আমাদের জোটে আসুন
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মর্মে বলেন, তৃণমূল গোয়ায় বিরোধী ভোট ভাগ করতে আসেনি। যাঁরা চান বিজেপিকে হারাতে, তাঁরা আমাদের জোটে শামিল হন। এমনকী কংগ্রেসের নাম করেই তারা আহ্বান জানান তাদের জোটে শামিল হতে। ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করেছে। কংগ্রেসেরে বহু বিধায়ক-নেতা তৃণমূলে শামিল হয়েছেন। এনসিপির একমাত্র বিধায়কও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
বিজেপিরই পাল্লা ভারী হয়েছে বিরোধী ভোট ভাগে
আবার কংগ্রেসও গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির সঙ্গে জোট গড়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চলেছে। কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূল বিজেপির হাত শক্ত করতে চাইলেও, গোয়ার মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। শুধু তৃণমূলই নয়, আম আদমি পার্টিও গোয়ায় পদার্পণ করেছে। বিজেপির হাওয়া খারাপ দেখে সমস্ত বিরোধীরাই জিততে চাইছে গোয়ার নির্বাচন। তারা এখনও সঠিকভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হতে পারেনি, ফলে বিজেপিরই পাল্লা ভারী হয়েছে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায়।
গোয়াতে একটি জোট তৈরি করেছি, বিজেপিকে হারাতে আসুন
মমতা এদিন কংগ্রেসকে জোটে আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই না। কংগ্রেস যদি মনে করে যে তারা বিজেপিকে হারাতে কাজ করতে চায়, তাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা এমজিপি (মহারাষ্ট্রবাদী গোমান্তক পার্টি)-র সঙ্গে গোয়াতে একটি জোট তৈরি করেছি। আমরা এনসিপি (ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি) এবং চার-পাঁচটি দলকে একসঙ্গে পেয়েছি এবং একটি জোট তৈরি হয়েছে। এই বিকল্প জোটে কংগ্রেস যদি আসতে চায় স্বাগত।
অন্য দল বিজেপিকে হারাতে পারলে তৃণমূল গোয়ায় আসত না
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূল বিজেপিকে হারাতে গোয়ার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে। অন্য কোনও দল এটা করতে পারলে আমরা আসতাম না। কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা দেখি নির্বাচনের আগে তারা অনেক কিছু বলে, ফেসবুক-টুইটারে বার্তা দেয়। তারা অন্য কিছু করে না। তারা বিজেপির সঙ্গে লড়ছে না। এর জেরে বেড়েছে বিজেপির টিআরপি। তাই ভাবলাম, তুমি না করলে আমরাও করব না, এটা হতে পারে না। তুমি যদি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারো, তাহলে আমরা কেন গোয়ায় আসতে পারব না?
বিজেপির সঙ্গে অর্ধ-সমঝোতা করে চলব না, বললেন মমতা
মমতা বলেন, আমরা বিজেপিকে হারাতে চাই, আমরা কাউকে না আসতে বলি না। আপনি আসতে চান, আসুন। আসুন একসাথে কাজ করি, আমাদের কোন সমস্যা নেই, তবে আমরা লড়াই করব। আমরা আপনার কথা শুনব না এবং বিজেপির সঙ্গে অর্ধ-সমঝোতা করে চলব না। যদি আমরা লড়াই করি, আমরা আমাদের ১০০ শতাংশ দিয়েই করি।
ওরা মনে করে ওদের জমিদারি আছে, খোঁচা কংগ্রেসকে
তিনি আরও বলেন, "আমি আগেও কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলাম। আমি কংগ্রেস ছেড়েছি কারণ সিপিএম বারবার আমাকে আক্রমণ করবে। আমার শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আঘাত লাগেনি। আমি জীবন্ত লাশের মতো। কিন্তু আমি দেখেছি সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের বোঝাপড়া ছিল। আমি কখনই তা করব না। তাই আমি তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছি।" কিছু রাজনৈতিক দল মনে করে তাদের জমিদারি আছে। তারা কিছু করে না এবং তারা আমাদেরও কিছু করতে দেয় না- এই বলে তিনি কংগ্রেসকেই নিশানা করেন।