গুরুং-কে সামনে রেখে কাকে শাসানি দিলেন মমতা, জল্পনা রাজনৈতিক মহলে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন আমরা শান্তি চাই। কিন্তু সমাঝোতা হয় শান্তির সঙ্গে, বোমা-বারুদের সঙ্গে নয়। আইনভঙ্গ করলে তার শাস্তি পেতেই হবে।
শান্ত পাহাড়ে নতুন করে হিংসার জন্য রাজনীতির উসকানি-কেই দায়ী করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলে এই উসকানি নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তাহলে, কী নাম না করে বিজেপি-র দিকেই আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, পাহাড়ে স্কুলে বাংলা আবশ্যিক করা নিয়ে বিমল গুরুংরা যেভাবে বিরোধিতা করছিলেন তাকে স্পষ্টভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া।
এমনকী, গুরুং-এর নির্দেশে রোশন গিরিরা এই নিয়ে কলকাতায় রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করে গিয়েছিলেন। আর এরপর পাহাড়ে হিংসাত্মক আন্দোলনে নামে মোর্চা। ফলে, মুখ্যমন্ত্রী যে রাজনৈতিক উসকানির কথা বলছেন তা স্পষ্টতই বিজেপি-র দিকেই দেখায় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শনিবার শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় বৈঠক করার তপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনায় কখনও-কখনও উসকানি দেওয়া হয়। তারই জেরে পাহাড়ে অশান্তির বীজ বপন করা হয়েছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই মমতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিভেদ করে আগুন লাগিয়ে ভালো থাকা যায় না। অনেক আপস করেছি, আর নয়। সমাঝোতা হয় শান্তির সঙ্গে, বোমা-বারুদের সঙ্গে নয়। আমাদের দিক থেকে আমরা শান্তি চাই। কিন্তু আইনভঙ্গ করলে তার শাস্তি পেতেই হবে।
তবে কি গ্রেফতার হবেন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ? মমতা জানিয়েছেন, গুরুং গ্রেফতার হবেন কি না, তা স্থির করবে প্রশাসন। সবার জন্যই সমান আইন এবং তা ভাঙলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের উপর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর জন্য যা করা দরকার সরকারের পক্ষ থেকে তা করা হবে।
মমতা এদিন অভিযোগ করেন, 'আসলে আমি প্রতি মাসে পাহাড়ে আসি বলেই এত রাগ। আগে তো কেউ আসতই না। পাহাড়ে সব লুটেপুটে খেত।' স্পষ্টতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তির মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং-এর দিকে। তিনি বলেন, পাহাড়ে অযথা উত্তাপ ছড়ানো হয়েছে। পর্যটনের ভরা মরশুমে অশান্তি ছড়িয়ে পর্যটকদের একপ্রকার বিতাড়িত করা হয়েছে। এসব তিনি আর বরদাস্ত করবেন না।
পাহাড়ে অশান্তি ছড়ানোর ফলে ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে পর্যটন শিল্পে। পাহাড়ের অর্থনীতি যে শিল্পের উপর নির্ভর করে আছে, সেখানেই চরম আঘাত নেমে এল নোংরা রাজনীতির জন্য। এর দায় তো তাদের নিতেই হবে। যারা বনধ ডাকল, জঙ্গি আন্দোলন করল, ভাঙচুর তরল, আগুন ধরালো, সেই দায় তারা নেবে না? মমতা জানিয়েছেন, প্রশাসন এই হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। ফলে শান্তি ফিরে এসেছে পাহাড়ে। আমরা চাই সবাই ভালো থাকুক। আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবার।
শনিবারের এই সাংবাদিক বৈঠকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, দার্জিলিঙে সব জায়গায় এবার সমস্ত গাড়ি যাবে। অর্থাৎ সিকিমের গাড়িও দার্জিলিংয়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে পর্যটকদের ফেরাতে রবিবারও ফ্রি বাস পরিষেবা জারি থাকবে বলে জানান তিনি।
চা বাগানে যৌথ সংগ্রাম সমিতির ডাকা বনধ নিয়েও সরব হন মমতা। ১২-১৩ তারিখ বনধ ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি বনধের বিরুদ্ধে। বনধ মানেই শ্রমদিবস নষ্ট করার চক্রান্ত। রাজ্য মনে করে বনধ মানেই বেআইনি। আদালতও বনধকে বেআইনি বলে মান্যতা দিয়েছে। তাই রাজ্য বনধের বিরোধিতা করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন বনধের রাজনীতি করে কোনও লাভ হবে না।