‘রাজনীতি বেশি হয়েছে, কাজ হয়েছে কম’, নাম না করেই অধীরকে কটাক্ষ মমতার
বহরমপুর, ২৭ সেপ্টেম্বর : 'এখানে রাজনীতি বেশি হয়েছে, কাজ হয়েছে কম। এই জেলায় অনেক কাজ করা হয়নি। অযথা ফেলে রাখা হয়েছে।' তাঁর খাসতালুকে দাঁড়িয়েই নাম না করে অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীরের গড় ইতিমধ্যেই ভেঙে দিয়েছেন। তারপরও তাঁর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে ছাড়লেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বৈঠকের পর বহরমপুরের জনসভায় মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এখানে রাজনীতি বেশি হয়েছে, কাজ হয়েছে কম। শুধু মমতাকে গালাগাল দিলে হবে না, মমতা ব্যানার্জির ১ শতাংশ কাজ করে দেখান। কাজ করব না, শুধু রাজনীতি করব, তা চলবে না।'
এদিন পরিবর্তনের মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের বার্তা দিলেও নির্দিষ্ট কোনও দিশা দিতে পারলেন না। মুর্শিদাবাদবাসী যে প্যাকেজের দিকে তাকিয়েছিলেন, তারও কোনও আভাস মিলল না মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, 'রাজনীতি স্থায়িত্ব পেলে কাজ গতিশীল হয়। এবার সেই কাজে গতি আসবে। মুর্শিদাবাদ একটি ঐতিহাসিক জেলা। এর ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। একদিন পলাশির প্রান্তরে ভারতের স্বাধীনতা সূর্য অস্ত গিয়েছিল। এই জেলায় সিরাজ ছিল, মিরকাশিম ছিল, আবার মিরজাফরও ছিল।
সেই ঐতিহাসিক গুরুত্বের মুর্শিদাবাদে এতদিন উন্নয়নমূলক কাজ থমকে ছিল। এবার উন্নয়ন হবে। এই জেলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে বলে বারবার যে অভিযোগ ওঠে, তার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, কোনওদিনও কোনও জেলাকে তিনি উন্নয়নের প্রশ্ন আলাদা করে দেখেননি, কোনও বঞ্চনা করেননি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত পাঁচ বছরে মুর্শিদাবাদ জেলার জন্য কী কী করেছেন, তার খতিয়ানও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'এই জেলায় তিনটি মাল্টিসুপার হাসপাতাল হয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাব করেছি। কান্দি মাস্টার প্ল্যানে ৩৭৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণেও বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা। জেলায় ২৫টি কর্মতীর্থ হয়েছে। কন্যাশ্রী-শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের আওতায় এসেছে জেলার ৮০ হাজার পড়ুয়া।
এদিন ৩ হাজার ছাত্রছাত্রীকে সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল দেওয়া হয়। আগামীকাল বাকি ২৫ হাজার সাইকেল বিতরণ করা হবে। এছাড়া হকারদের জন্য পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তাহলে এই জেলা বঞ্চিত কেন বলা হবে। আসলে এখানে কাজ করা হয়নি। এবার সেই শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যাবে। উন্নয়নের স্রোত বয়ে যাবে জেলায়।'
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিগত পাঁচ বছরে একশো দিনের কাজে গতি এসেছে রাজ্যে। গতবছরের রাজ্যে একশো দিনের কাজে গড় ছিল ৩৩ দিন। এবার ইতিমধ্যেই ৩২দিন কাজ হয়ে গিয়েছে। পাঁচ বছরে মোট ১ কোটি ১০ লক্ষ সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু বৃত্তিতে দেওয়া হয়েছে ২৩৫০ কোটি টাকা। সরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। দেশেরর আর কোথাও নেই এই পরিষেবা, একমাত্র বাংলাতেই রয়েছে। মা-শিশুদের কল্যাণে সরকারি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। শিশুদের জন্য ২৫টি এসএনসিইউ চালু করা হয়েছে।
প্রাথমিক পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পোশাক, জুতোও দেওয়া হচ্ছে।' এদিন বৈঠকে জেলার উন্নয়ন নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা হয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। জেলা থেকে ব্লক স্তরের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে। ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্যরাও।