মমতার অভিনব 'দিদিকে বলো' জনসংযোগ দেখে 'নায়ক' ছবির অনিল কাপুরের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে
প্রখ্যাত অভিনেতা অনিল কাপুরের 'নায়ক' ছবিটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কাণ্ডকারখানা দেখে।
প্রখ্যাত অভিনেতা অনিল কাপুরের 'নায়ক' ছবিটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কাণ্ডকারখানা দেখে। বলিউডের সেই ছবিতে খলনায়ক মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেন্জ গ্রহণ করে একদিনের জন্যে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে রাজি হন সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করা অনিল। এবং সেই একদিনের মধ্যে তিনি যে ক'টি বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেন তার একটি হল সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্যে হেল্পলাইন যার মাধ্যমে সমস্যা জর্জরিত নাগরিকরা তাঁদের সমস্যার কথা তাঁকে ফোন করে বলতে পারেন।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেরকমই একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। 'দিদিকে বলো' নামে এই অভিনব জনসংযোগের কৌশলের মাধ্যমে তিনি পৌঁছতে চাইছেন মানুষের ঘরে ঘরে। একটি বিশেষ ফোন নম্বরও চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ সরাসরি তাঁদের সমস্যা নিয়ে পৌঁছে যাবেন নেত্রীর কাছে। পাশাপাশি, মমতা দলের প্রত্যেক নেতাকে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলস্তরে পৌঁছে মানুষের কথা শুনতে।
মমতা অবশ্য একদিনের জন্যে মুখ্যমন্ত্রী হননি
মমতা অবশ্য একদিনের জন্যে মুখ্যমন্ত্রী হননি। গত আট বছর ধরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের একচ্ছত্র নেত্রী। কিন্তু এই বছর লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে আর তাঁকে একচ্ছত্র মনে হচ্ছে না, কারণ বিজেপির ঝোড়ো উত্থান। ২০১৪ সালের তুলনায় এবারে ১২টি কেন্দ্র হাতছাড়া করে তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছে মাত্র ২২টি আসন। বিজেপির সেখানে দুই থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮। স্বভাবতই, নেত্রী এখন সিঁদুরে মেঘ দেখে তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন যাতে ২০২১-এর নির্বাচনে আরও বড় ধাক্কা না খেতে হয়।
এত কলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে মানে মানুষ মোটেই স্বস্তিতে নেই
'দিদিকে বলো' হেল্পলাইন সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাকি টেলিফোনের ঘন্টি থামতেই চাইছে না সরকারি দফতরে। অন্যান্য নেতারাও তাঁদের স্ব-স্ব অঞ্চলে মানুষকে এই হেল্পলাইন ব্যবহার করতে উৎসাহ দেবেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও কলের বন্যা দেখে বিরোধিতা কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না সরকারকে, বলছেন তাহলে দিদি দেখুন মানুষ কত কষ্টে আছে। কিন্তু তৃণমূলের কাছে সেসব বড় কথা নয়। এই বিপুল জনসংযোগের প্রকল্পটি করতে পেরেই যেন তারা কৃতার্থ।
কিন্তু অতশত খুঁটিনাটি জানা কেন?
কিন্তু যেটা ভাবাচ্ছে তা হল মানুষের সমস্যা বিশদে জানতে সমস্ত খুঁটিনাটি জানতে হচ্ছে কেন? বলা হচ্ছে, ওই নম্বরে ফোন করলে ভৌগোলিক অবস্থান তো বটেই, মায় সমস্যায় ভোগ মানুষের পেশার কথাও জানতে চাওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে কম সময়ে মানুষের কাছে সেরা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। প্রশাসনিক স্তরে এবং দলীয় পর্যায়ে এর আগে মানুষের মুখোমুখি যে বঙ্গের শাসকদল হয়নি তা নয়। কিন্তু এবারে জোর দেওয়া হচ্ছে হাই-টেক মাধ্যমের উপরে।
তৃণমূলের কাজের ধরনে বিজেপির ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে
তৃণমূলের এই জনসংযোগের প্রক্রিয়া দেখলে যে কেউই বলবেন যে এর মধ্যে বিজেপির কাজের ধরন দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই জনসংযোগের বুদ্ধিটি কার মাথায় এসেছে তাও বোধহয় অনুমেয়। এমন কর্পোরেট স্টাইলে পশ্চিমবঙ্গের আর কোনও দলকে এর আগে কাজ করতে দেখা গিয়েছে কি না জানা নেই। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কোনও বিশেষ ডেটাবেস তৈরীর কাজও হচ্ছে না তো?
তৃণমূল কংগ্রেস এখন 'প্রশাসনিক'-এর শাক দিয়ে 'রাজনৈতিক'-এর মাছ ঢাকার একটি চেষ্টা চালাচ্ছে। পৌনে দুই বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে এই কৌশল খুব খারাপ বলা যাবে না। কিন্তু মমতা এবং তাঁর প্রশাসন সত্যিই মানুষের জন্যে কতটা ভাবছেন আর নির্বাচনের কথা ভেবে কতটা কী করছেন, সেটাই এখন দেখার।