এনআরএস কাণ্ড: ডাক্তারদেরই হুমকি দিয়ে বসলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীই!
সারা পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কারণ, চিকিৎসকদের পেটানোর ঘটনা। এই প্রথমবার ঘটল তা নয়। কাগজে-কলমে এই নিন্দ্যনীয় ঘটনা বন্ধ করার আইনও রয়েছে।
সারা পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কারণ, চিকিৎসকদের পেটানোর ঘটনা। এই প্রথমবার ঘটল তা নয়। কাগজে-কলমে এই নিন্দনীয় ঘটনা বন্ধ করার আইনও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেসব কোথায় কী? একপেশে মার খেতে খেতে এবার জুনিয়র ডাক্তাররাও ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা রাজ্য জুড়ে ডাক দেওয়া হয়েছে কর্মবিরতির। এর ফলে অসংখ্য রোগী এখন ভগবানের ভরসায় দিন কাটাচ্ছেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর খবরও এসেছে কয়েকটি। কিন্তু তবু ডাক্তাররা অনড়।
এনআরএস হাসপাতালে এক পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধের মৃত্যুর পরেই শুরু হয় এই সঙ্কট। মৃত্যুর পরেই লরি ভর্তি লোক এসে হামলা চালায় ডাক্তারদের উপরে; পরিবহ মুখোপাধ্যায় বলে একজন ইন্টার্ন মারাত্মক জখম হন। আর তাঁর আহত হওয়ার ঘটনার পরেই তেঁড়েফুঁড়ে কর্মবিরতি ডাকেন তাঁর সহকর্মীরা। যার জেরে সারা রাজ্যের চিকিৎসাব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।
প্রতিবাদী ডাক্তারদের দাবি, যতক্ষণ না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা পাকাপাকিভাবে বন্ধ না করার অভয় দিচ্ছেন, ততক্ষণ এই কর্মবিরতি উঠবে না।
এ এক অদ্ভুত অবস্থা। একদিকে ডাক্তারদের, বিশেষ করে জুনিয়রদের প্রাণ হাতে করে কাজ করার অবস্থা। অন্যদিকে, তাঁদের কাজে ধর্মঘট মানে অসংখ্য অসুস্থ মানুষের প্রাণ বিপন্ন। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
সামাজিক চুক্তির দফারফা
সমাজ এগোয় কিছু সহযোগিতার মাধ্যমে। আধুনিক মানবসভ্যতার বিবর্তনের আদিকালেই সামাজিক চুক্তির কথা বলে গিয়েছেন অনেক তাবড় জ্ঞানী লোকেরা। এই চুক্তি না থাকলে একটি সমাজ হয়ে দাঁড়ায় মগের মুলুক; জুলুমবাজির আখড়া। পারস্পরিক দেওয়া-নেওয়ার ভিতর দিয়েই নির্মাণ হয় সুস্থ সমাজের ভিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যা হচ্ছে তা সেই সুস্থতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ধন্বন্তরি বলে পরিচিত যে ডাক্তার, যাকে ভগবানের পরেই সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে মানুষ, তাকে নিগ্রহ করার মতো ঘৃণ্য কাজ কোনওমতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
কিন্তু অপরদিকে, ডাক্তার যদি তার নিজের কাজকে অবজ্ঞা করে, তবে সেটাই বা কী ধরনের ন্যায়? চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ডাক্তারদের প্রহার করা আজকে প্রায় রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থায়, আর তাতে ডাক্তারদের এতদিনের দানা বাঁধতে থাকা ক্ষোভ এবারে সমস্ত ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। এই প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাদেরকে ফের বুঝিয়ে কাজে ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব কার?
অবশ্যই প্রশাসনের। কিন্তু প্রশাসন কই?
প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথ হলে কি ডাক্তাররা ক্যারাটে-কুংফু শিখবেন?
একে ডাক্তারদের কোনও সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই; অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ডাক্তারদের চিকিৎসা শাস্ত্রের আগে ক্যারাটে কুংফু শিখতে হবে আগে। খাতায়-কলমে তাঁদের নিরাপত্তার কথা বলা থাকলেও তার কোনও প্রয়োগ দেখা যায়নি এযাবৎ। তাই বাধ্য হয়ে আইন তারা নিজের হাতেই তুলে নিয়েছে।
কিন্তু এই প্রতিবাদ এক্ষুনি না থামলে সমস্ত সমাজের সামনে সমূহ বিপদ। চিকিৎসার মতো জরুরি পরিষেবা না পেলে নির্দোষ মানুষ ক্ষেপে উঠবে খুব শিগগিরই এবং পাল্টা দিতে বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করবে না। পরিস্থিতি নিমেষে ঘোরালো হয়ে উঠে এক প্রবল সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে যা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষেও সামাল দেওয়া দুরূহ হতে পারে।
মমতা শেষ পর্যন্ত মুখ খুললেন কিন্তু তাঁর বক্তব্যে হয়রান ডাক্তাররাই
মমতা কেন এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করছিলেন না এ যাবৎ বা পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন না এখনও তা বোঝা দুষ্কর। তিনি টলিউডে বেতন বন্ধ হলেও যেখানে পদক্ষেপ নেন, সেখানে এতবড় সঙ্কটেও তিনি নিরুত্তর ছিলেন কেন?
তৃণমূল নেত্রী অবশেষে মুখ খুললেন বৃহস্পতিবার। এসএসকেএম হাসপাতালে বিক্ষোভরত ডাক্তারদের দিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি ছুড়ে দিলেন মাইক হাতে নিয়ে। বললেন কয়েক ঘন্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে নেবেন কড়া পদক্ষেপ। যেই ছেলেমেয়েগুলি রবিবারের ঘটনার পরে ন্যায়বিচার চাইছিল তাদের মনের অবস্থা সহজেই অনুমেয় কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিলেন রাজনীতির সস্তা পথকেই ।
দুর্ভাগ্যজনক।
[আরও পড়ুন: এনআরএস-এর ঘটনা তাৎক্ষণিক! দুপক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের আশ্বাস মমতার]
[আরও পড়ুন: 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'! মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা জবাবে হাওয়া বুঝিয়ে দিল SSKM ]