নেত্রী মমতার পাখির চোখ তফশিলি-আদিবাসী-মতুয়া ভোট! নয়া ‘কার্ড’ মিশন ২০২১-এ
মমতার পাখির চোখ তফশিলি-আদিবাসী-মতুয়া ভোট! নয়া ‘কার্ড’ মিশন ২০২১-এ
২০১৯-এর লোকসভায় প্রান্তিক ভোট বেরিয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে। তফশিলি ভোট বিশেষ করে আদিবাসী ভোট, মতুয়া ভোট সব হাতছাড়া হয়েছে। ২০২১-এ বিজয় নিশ্চিত করতে সেই ভোট ফেরাতেই হবে। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক এখনও মমতার সঙ্গে। সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্ক নিয়েও বিশেষ চিন্তা নেই, যতটা চিন্তা প্রান্তিক ভোট নিয়ে।
তফসিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য
২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে কলকাতা-সহ ১০৭টি পুরসভা নির্বাচন আসন্ন। তৃণমূল কংগ্রেস সেদিকে চেয়েই এবার বাজেটে সামাজিক ক্ষেত্রের ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। বিশেষত তফসিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য বিশেষ ভাবনার কথা উপস্থাপন করেছেন। উপস্থাপন করেছেন আদিবাসীদের জন্য।
তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে
মমতা চান আদিবাসী-তফশিলিদের কাছে পৌঁছতে। রাজ্যের তফসিলি উপজাতির বেশিরভাগ ভোট গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তার ফলে বুমেরাং হয়েছিল তৃণমূলের। তা আবার নিজের দিকে ফেরাতে বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের সমর্থন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা তাঁর।
বাজেটের নয়া লক্ষ্য
সোমবার বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র উপস্থাপিত বাজেটে সেইসব দিক রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসও কমপক্ষে ছয়টি সংসদীয় আসনে উপস্থিত তফসিলি জাতিগোষ্ঠী, মতুয়া সম্প্রদায়, আদিবাসী মহল্লার দিকে চেয়ে রয়েছেন। তাঁদের জন্য আলাদা করে ভেবেছেন মমতা। ওবিসিদের জন্য চিন্তাভাবনা করেছেন।
পিছিয়ে পড়াদের পাশে
মোটকথা পিছিয়ে পড়া সমাজের উন্নতির জন্য, শিক্ষার অগ্রগতির জন্য সরকার ঝাড়গ্রামের বীরসা মুন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়, এসসি-অধ্যুষিত অঞ্চলে আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়।
সমাজ উন্নয়নে আলোকপাত
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নামে তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা যেতে পারে আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী তিন বছরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মোট কথা সমাজের বিশেষ শ্রেণির দিকে আলোকপাত করেছেন তিনি।
‘বন্ধু’ হয়েছে সরকার
জঙ্গলমহল অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী এসসি ও এসটি সম্প্রদায়ের উপর নজর রেখে বাজেট দুটি প্রকল্প ঘোষণা করেছেন তিনি। যার অধীনে ৬০ বছরের বেশি বয়সী তফশিল ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা সুবিধা পাবেন। তাদের প্রতি মাসে এক হাজার টাকা পেনশন দেওয়া হবে। যাদের কোনও পেনশন প্রকল্প নেই, তারা এই পেনশনের সুবিধা পাবেন।
পাখির চোখ উত্তরবঙ্গে
উত্তরবঙ্গে ২০১৯ লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস শূন্য পেয়েছে। এবার সেই উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের ফের জোর দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য তৃমমূল সরকার ৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য সরকার ‘চা সুন্দরী' নামে একটি আবাসন প্রকল্পে পাঁচশো কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে।
তিন লাখ শ্রমিক উপকৃত
এই প্রকল্পের আওতায় আগামী তিন বছরের মধ্যে রাজ্য সরকার সমস্ত স্থায়ী শ্রমিকের বাড়ি করে দেবে। অবশ্যই যাদের নিজস্ব বাড়ি নেই, তাঁরাই এই আবাসন প্রকল্পে আওতায় আসবেন। এই প্রকল্পটিতে রাজ্যের ৩৭০টি চা বাগানের প্রায় তিন লাখ শ্রমিক উপকৃত হবেন।
বেকারদের কর্মসাথী
এছাড়া অর্থমন্ত্রী ‘কর্মসাথী' প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। এই প্রকল্পে প্রতি বছর এক লাখ বেকার যুবক-যুবতী স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ঋণ পাবেন। ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যে কোনও নতুন আয়-উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণের জন্য তাদের স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া হবে এবং ভর্তুকিও সরবরাহ করা হবে। ঋণটি রাষ্ট্রায়ত্ত সমবায় ব্যাংক প্রদান করবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
লক্ষ্য ভোট ফেরত
উল্লেখ্য, এবার লোকসভা বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ১৮টি লোকসভা আসন জিতেছে। যা ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে ১৬টি বেশি। ১৮টি আসনের মধ্যে রয়েছে রানাঘাট ও বনগাঁ। এই দুটি মতুয়া অধ্যুষিত আসন। এছাড়া জঙ্গলমহলের উপজাতি এলাকাতেও সমস্ত আসনে জিতেছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গের সমস্ত আসন জিতেছে বিজেপি। ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই জাতীয় ভোটারদের ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য মমতার।