'বখাটে' ছেলেদের চাকরি দেওয়ার আগে 'লক্ষ্মী' ছেলেদের ভালোই সামলালেন মমতা
কয়েকদিন আগেই তিনি বলেছিলেন যে এবারে পাড়ার 'বখাটে' ছেলেদের তিনি কাজে লাগাবেন দলের পুনঃনির্মানে। কাঁচরাপাড়ার একটি জনসভায় এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। একে তো উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরে গুরুতর ধস নেমেছে। তার উপরে কলকাতার এক নামী হাসপাতালে ডাক্তারদের ধর্মঘট এবং তাঁর কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও কাজ হয়নি। আর সবার উপরে রয়েছে বিজেপির হিন্দুত্ব ভূত। জেরবার মুখ্যমন্ত্রী সেদিন তাই বলেই ফেলেন যে দলের কাজে তিনি এবারে পাড়ার ছেলেদেরই লাগাবেন এবং কাজও দেবেন। অর্থাৎ, আর্থিক প্রতিশ্রুতির বদলে কাজের সংস্থান আর পাশাপাশি, দলের জনভিত্তি জোর করার উদ্যোগ।

গরম মমতা, নরম মমতা
তবে রাগের মাথায় সেদিন মমতা 'বখাটে' ছেলেদের কাজে লাগানোর কথা বললেও সোমবার, ১৭ জুন, ধর্মঘটি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় মীমাংসা আলোচনা করার সময়ে কিন্তু তিনি উচ্চারণ করলেন "আমার লক্ষ্মী ভাইবোনেরা" কথাটি। আর মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সেই প্রশংসা শুনে তো গলেই জল জুনিয়র ডাক্তাররা।

প্রশাসক মমতার বোধহয় এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত
জনসভার মমতার সঙ্গে এদিনের নবান্নের মমতার এক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। গত আট বছরে প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে অনেক সমালোচনা শোনা গিয়েছে। কিন্তু সোমবার মমতার যে মুখটি দেখা গেল, তাকে তাঁর আট বছরের শাসনকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশাসনিক মুখ বললে অত্যুক্তি হয় না। ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে শুনলেন ডাক্তারদের যাবতীয় অভিযোগ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের দিয়ে গেলেন নানা আদেশ। এটাও বলতে ভুললেন না যে তাঁর একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়; আইন প্রয়োগের নির্দেশ তিনি দিতে পারেন কিন্তু সেটাকে বাস্তবে বলবৎ করেও দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি-এজেন্সিদের। কিন্তু তবুও যেহেতু তিনি প্রশাসনের সর্বোচ্চ মুখ, তাঁর কথার একটি আলাদা দাম তো থাকবেই প্রতিবাদীদের কাছে।

প্রথম রাউন্ডে খারাপ খেললেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ভালো ফিরে আসেন মমতা
আসলে প্রথম রাউন্ডে হঠকারিতা করে ফেললেও মমতা দ্বিতীয় রাউন্ডে মোক্ষমভাবে ফিরে এলেন। তিনি জানতেন বল রয়েছে ধর্মঘটিদের কোর্টে আর তাঁরা যদি আবারও মমতার বৈঠকে বসার আহ্বান অবজ্ঞা করে, তবে তা শেষ পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধেই যাবে। "লক্ষ্মী ছেলেরা" অবশ্য ব্যাপারটাকে আর বিলম্বিত করেনি। বখাটে ছেলেদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী করবেন তা ভবিষ্যৎই জানে, কিন্তু আপাতত "লক্ষী ছেলেদের" তিনি ভালোভাবেই সামলেছেন।