তৃণমূলের ‘ভবিষ্যৎরা’ই বিদ্রোহীর তালিকায়! একুশে বুমেরাং কি তবে সময়ের অপেক্ষা
তৃণমূলের ‘ভবিষ্যৎরা’ই বিদ্রোহীর তালিকায়! একুশে বুমেরাং কি তবে সময়ের অপেক্ষা
তৃণমূল কংগ্রেসে যাঁরা ভবিষ্যৎ হয়ে উঠছিলেন, তাঁরাই এখন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন। ফলে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসে দেখা দিয়েছে সিঁদুরে মেঘ। বিজেপির চ্যালেঞ্জ নিতে যখন ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের দরকার, তখন তৃণমূল বিদ্রোহের আঁচে দগ্ধ হচ্ছে। যে সমস্ত নেতারা তৃণমূলকে ফের ফিরিয়ে এনেছিন জয়ের সরণিতে, তাঁরাই বিদ্রোহী আজ।
তৃণমূলকে জয়ের দিশা দিয়েছিলেন শুভেন্দু-রাজীবরা
২০১৯-এ তৃণমূল কংগ্রেস ৪২-এ ৪২-এর লক্ষ্য নিয়ে ভোট ময়দানে নেমেছিল। কিন্তু ৪২-এর টার্গেটে নেমে মাত্র ২২-এই থেমে যেতে হয়েছিল তাদের। বিজেপি ২ থেকে বেড়ে হয়েছিল ১৮। বিজেপির এই উত্থানের পর তৃণমূল যখন ভাঙন আতঙ্কে তটস্থ, তখনই বুক চিতিয়ে লড়ে তৃণমূলকে ফের জয়ের দিশা দিয়েছিলেন শুভেন্দু-রাজীবরা।
শুভেন্দু-রাজীবের কাঁধে গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরাই বিদ্রোহী
লোকসভা নির্বাচনের পরে তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের তৃণমূলকে খাদের কিনারা থেকে তাঁরা টেনে তুলেছিলেন অদম্য লড়াইয়ে ভর করে। যে দুই কেন্দ্রে কোনওদিন জেতেনি তৃণমূল, সেই দুই কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন তাঁরা।
দিলীপের আসনে তৃণমূলের জয়ের কাণ্ডারি ছিলেন শুভেন্দু
খড়গপুর সদরে দিলীপ ঘোষের আসনে তৃণমূলের হয়ে জয়ের কাণ্ডারি ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর নেতৃত্বগুণে লোকসভায় বিরাট জয়ের পরএও পিছু হটেছিল বিজেপি। ৫০ হাজারের ব্যবধান মুছে ফেলে তিনমাসের মধ্যে তৃণমূলের জয়ের সরণিতে এনেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। খড়গপুর সদরে প্রথমবার জয়ী হয়েছিল তৃণমূল।
শুভেন্দু ও রাজীব জুটি ক্যারিশ্মা দেখিয়েছিল কালিয়াগঞ্জে
তেমনই উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনটিও তৃণমূলের কাছে অধরা ছিল। এই আসনে শুভেন্দু ও রাজীব জুটি ক্যারিশ্মা দেখিয়েছিল। লোকসভা বিজেপির ৫৬ হাজারের জয়ের ব্যাবধান মুছে ফেলে এই কেন্দ্রেও তৃণমূল জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। কালিয়াগঞ্জেও প্রথম জয় পেয়েছিল তৃণমূল।
একুশের লড়াই কঠিনতর হবে রাজীব-শুভেন্দু মুখ ফেরালে
কিন্তু আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখনই কোনও ক্রাইসিস হয়েছে শুভেন্দু মুশকিল হাসান হয়েছেন। আর রাজীব তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং লড়াকু মানসিকতা দিয়ে কাজের কাজ করে দেখিয়েছেন। তাঁরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেন ২০২১-এর লড়াই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে তৃণমূলের কাছে।
দলের ভবিষ্যৎদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হননি মমতা
উভয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আবার অবহেলাও জুটেছে মাঝেমধ্যে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন তৃণমূল নেত্রী তাঁর দলের ভবিষ্যৎদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হননি। তাই আজ সমস্যায় পড়েছেন তিনি। মোক্ষম সময়ে তাঁরা সরে যেতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশ থেকে।
তাহলে একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের কামব্যাক করা সমস্যা
শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা সরে গেলে তৃণমূলে ধস নামতে বাধ্য। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, যদি তৃণমূলে এত বড় ফাটল দেখা দেয়, তাহলে ২০২১-এর নির্বাচনে তৃণমূলের কামব্যাক করা সমস্যা হয়ে যাবে। পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।