পদ্ম উপরে ঘাসফুল ফোটানের চ্যালেঞ্জ, জঙ্গলমহলের 'খেলায়' মমতার ভরসা ছত্রধর
একসময় ছত্রধর মাহাতো মৃত নক্সাল নেতা কিষেণজির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই ছত্রধর মাহাতোই এখন জঙ্গলমহলে তৃণমূল কংগ্রেসের ভরসা। এখন তিনি একে-৪৭ বহনকারী সুরক্ষা কর্মীদের নিয়ে ঘোরেন। জেলখাটা প্রাক্তন এই মাওবাদী নেতার উপরই এখন জঙ্গলমহলে ঘাসফুল ফোটানোর দায়িত্ব। এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'উন্নয়নের গান' গাইতে গাইতেই মানুষের মনে তৃণমূলের প্রতি ভরসা ফেরানোর ছক কষছেন ছত্রধর।
জঙ্গলমহলের রূপ বদলে যায় ২০১১ সালে
একদা মাওবাদী গড় হিসেবে পরিচিত জঙ্গলমহলের রূপ বদলে যায় ২০১১ সালে। ক্ষমতায় এসে জঙ্গলমহলে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে একদশকে জঙ্গলমহলে রাজনৈতিক মানচিত্রে বদল এসেছে। গত লোকসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপি গেরুয়া ঝড় বইয়ে দেয়। আর এরপরই হারানো জমি ফিরে পেতে জঙ্গলমহলের ময়দানে ছত্রধর মাহাতোরকে নামান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নজরে জঙ্গলমহলের ৪৪টি আসন
জঙ্গলমহলের ৪ জেলা, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুরা মিলিয়ে মোট ৪৪টি বিধানসভা আসন রয়েছে। এই ৪৪ আসনকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। তবে ক্ষমতা দখলে রাখতে যে এই ৪৪টি আসন গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, তা বুঝেছেন মমতাও। আর তাই তিনিও জঙ্গলমহলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচারে নেমেছেন। আর তাঁর হয়ে সেই প্রচারের ছক কষছেন ছত্রধর মাহাতো।
ভোটারদের কী বোঝাচ্ছেন ছত্রধর মাহাতো
জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ বিষয়ে ছত্রধর নিজে বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই এলাকাকে ফিরে পাবেন। মানুষ বিজেপির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনে শুনে তিতি বিরক্ত। আমি নিজে নির্বাচনে লড়ছি না। তবে আমি প্রচারে নেমে এই এলাকার আদিবাসীদের বলছি যে বিজেপি কীভাবে তাদের বিভক্ত করতে চাইছে। ২০১৯ সালে ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা বিজেপিকে হারিয়েছে। এবার আমাদের পালা।'
জঙ্গলমহলে এগিয়ে বিজেপি
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের সবকটি আসন জিতেছিল বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনেও সেই ফলাফল ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি। আর তাই খড়্গপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুরায় জনসভা করে গিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে তোপ দেগে প্রধানমন্ত্রী মোদী বারংবার অভিযোগ তুলেছেন যে মাওবাদীদের সাহায্য করেছেন তিনি। এই আবহে ঝাড়গ্রামে মমতার ভরসা প্রাক্তন এক মাওবাদী ঘনিষ্ঠ নেতা।
বিজেপির ভালো ফলের নেপথ্যে রয়েছে আরএসএস
এদিকে জঙ্গলমহলে বিজেপির ভালো ফলের নেপথ্যে রয়েছে আরএসএস। এই এলাকায় আরএসএস বিগত কয়েক বছরে যেভাবে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করেছে, তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে ভোট বাক্সে। এছাড়াও বিজেপির তরফে প্রতিশঅরুতি দেওয়া হয়েছে যে কেন্দ্রীয় সরকারের 'হর ঘর জল' যোজনার মাধ্যমে সবার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে।
ঘুঁটি সাজাচ্ছেন ছত্রধর মাহাতো
এদিকে বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূল চেষ্টা করছে জঙ্গলমহল থেকে যটা সম্ভব আসন জেতা। ২০১৬ সালে এই এলাকার ৪৪টির মধ্যে ৩৭টি গিয়েছিল তৃণমূলের ঝুলিতে। অঙ্ক বলছে, যদি সেই সংখ্যার আর্ধেকও এবার তৃণমূল ধরে রাখতে পারে, তাহলে বিজেপির নবান্ন অভিযান খুব কঠিন হতে চলেছে। তৃণমূলের আশা, একদা লালদুর্গ হিসেবে পরিচিত জঙ্গলমহলে মমতা ম্যাজিক যদি কাজে লেগে যায়, তাহলে সরকারে টিকে যাবে তারাই। আর সেই সূক্ষ্ম অঙ্ক কষেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন ছত্রধর মাহাতো।
পুরুলিয়ার ৭টি আসনের কোথায় এগিয়ে কোন ফুল, ভোটের আগে একনজরে পরিসংখ্যান