রাহুলের স্ট্র্যাটেজি আর প্রয়োগ নয়, এবার প্রশান্তর ভরসায় ভোট-নীতি বদলাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা
২০১৮-র শেষে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত রাহুলের স্ট্র্যাটেজি সফল ছিল, তবে লোকসভায় তা ফেল করে। মমতাও খানিকটা রাহুলের নরম হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরেছিলেন, তবে এবার পরিবর্তন করছেন কৌশল।
বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে নরম হিন্দু্ত্বের পথ বেছে নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। গুজরাটের বিধানসভা থেকে শুরু করে ২০১৮-র শেষে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত রাহুলের সেই স্ট্র্যাটেজি সফল ছিল, তবে লোকসভায় তা ফেল করে। মমতাও খানিকটা রাহুলের নরম হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরেছিলেন, তবে এবার পরিবর্তন করছেন কৌশল।
প্রশান্ত পরমার্শে কৌশল বদল
লোকসভায় ধাক্কা খেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়োগ করেছেন ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে। তিনি এসেই আমূল বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তৃণমূলে রণনীতি। তাঁর দেখান পথেই জনসংযোগে জোর দিয়েছে তৃণমূল। তার প্রয়োগে তৃণমূল ঘুরেও দাঁড়িয়েছে উপনির্বাচনে। তৃণমূল সুপ্রিমো চাই প্রশান্তর নীতিতে জনসংযোগ আর জনকল্যাণকেই হাতিয়ার করছেন।
‘ভুল’ থেকে শিক্ষা নিয়ে
লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে রাহুল গান্ধী যেমন নিজেকে শিবভক্ত, পৈতেধারী ব্রাহ্মণ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন, তেমই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নরম হিন্দু্ত্বের তাস ফেলেছিলেন তাঁর প্রচার-পর্বে। কিন্তু আদতে কোনও ফল পাওয়া যায়নি লোকসভা নির্বাচনে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ‘ভুল' থেকে শিক্ষা নিয়ে কৌশল বদলাচ্ছেন।
ধর্মের রাজনীতির মোকাবিলা ধর্ম দিয়ে নয়
সম্প্রতি উপনির্বাচনে ক্লিন সুইপ করার পর তৃণমূল সুপ্রিমো চাইছেন প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ অনুযায়ীই কৌশল রচনা করতে। তিনি ধর্মের রাজনীতির মোকাবিলা ধর্ম দিয়ে করতে চাইছেন না। তিনি চাইছেন, তাঁর উন্নয়ন চিন্তা মানুষের পাশে থাকার বার্তাই হবে আসন্না পুরসভা ও বিধানসভা ভোটের হাতিয়ার।
জনসংযোগে জোর দেওয়াই শ্রেয়
উপনির্বাচনে জিতে তিনি দলকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন। তিনি চাইছেন না এখনই বিজেপির বিরুদ্ধে অল আউট অ্যাটাকে যেতে। লোকসভায় বাংলা থেকে ১৮টি আসন পেয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের (২২) ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। তাই সমস্ত দিক বিচার করে জনসংযোগে জোর দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করছেন। চাইছেন জনকল্যাণকর প্রকল্পগুলো মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে।
বিজেপি পাতা ফাঁদে পা নয়
বিজেপি চায় তৃণমূল তাঁদের পাতা ফাঁদে পা দিক। জয় শ্রীরাম স্লোগান থেকে শুরু করে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী উদযাপন হল বিজেপির পাতা ফাঁদ। আর এতদিন সেই ফাঁদে পড়েই তৃণমূলকে হাঁসফাঁস খেতে হয়েছে। এবার পঞ্চায়েত ও লোকসভা থেকে শিক্ষা নিয়ে উন্নয়নের প্রচারে জোর দিতে চাইছে তৃণমূল। চাইছে জনসংযোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে।
‘দিদিকে বলো’র সাফল্য নিয়ে
আর তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল ‘দিদিকে বলো'। সেই দিদিকে বলো বেশ সফল। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। দিলীপ-গড়েও পদ্মকে বিলীন করে দিয়েছে তৃণমূল। আর পরিসংখ্যানও বলছে দিদিকে বলোর সাফল্যের কথা। এখ পর্যন্ত দিদিকে বলোতে ফোন এসেছে ২০ লক্ষাধিক। নেতারা বাংলার ৬ হাজার গ্রামে গিয়েছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতিকার করেছেন সমাধানের। মমতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন জনে জনে। তাই প্রশান্ত কিশোরের কৌশল অবলম্বন করেই ২০২১-এর ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মমতা।
বিজেপিতে ভাঙন জঙ্গলমহলে! লোকসভা ভোটের পরই পুরুলিয়ায় শক্তি বাড়ল তৃণমূলের