মমতার এক চালে মাত বিজেপি! পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে শুভেন্দু-সুকান্তদের সুর বদলে জল্পনা
মমতার এক চালে মাত বিজেপি! পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে শুভেন্দু-সুকান্তদের সুর বদলে জল্পনা
বাংলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা দেওয়া প্রায় এক বছর বন্ধ রেখেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বঙ্গের বিজেপি তাতেই সায় দিয়ে গিয়েছে বরাবর। শুভেন্দু-সুকান্তরা বারবার তদ্বির করেছে, যাতে কেন্দ্র টাকা না দেয় রাজ্যকে। কিন্তু রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে হঠাৎ কেন ভোলবদলে ফেললেন শুভেন্দু-রা?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালে মাত বিজেপি
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চালই শুভেন্দু-সুকান্তদের মাত দিয়ে গিয়েছে। তার ফলে বঙ্গ বিজেপি তাদের অবস্থান বদল করতে বাধ্য হয়েছে। নিজেরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কাছে গিয়ে বাংলায় একশো দিনের কাজের বরাদ্দ পাঠাতে তদ্বির করেছেন শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদাররা।
বিজেপির বঞ্চনা আর উসকানি যখন হাতিয়ার
বছর ঘুরলেই বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল মূল ইস্যু করতে চলেছে কেন্দ্রের বঞ্চনাকে। আর শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদাররা তাতে উসকানি দিয়ে গিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই বঞ্চনা আর উসকানিকে হাতিয়ার করে শুভেন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার অঙ্গীকার করেছেন।
বিজেপির পাতে মারার অবস্থান বুমেরাং হতে পারে
শুভেন্দু অধিকারীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পরিকল্পনা বুঝে গিয়েছেন। বুঝে গিয়েছেন রাজ্যকে হাতে না মারতে পেরে পাতে মারার এই অবস্থান বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে তাদের কাছে। গ্রামীণ ভোটে তাদের খালি হাতে ফিরতে হতে পারে এই অবস্থানের জন্য। তাই আগ বাড়িয়ে বাংলার জন্য দরবার করতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে ছুটেছেন শুভেন্দুরা।
একশো দিনের কাজের টাকা ছাড়ার জন্য সওয়াল
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, একশো দিনের কাজের টাকা ছাড়ার জন্য সওয়াল করেছেন তাঁরা। ওই টাকা কেন্দ্র দ্রুত ছেড়ে দেবে। তবে আসাব যোজনার টাকা বিলিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। যাঁরা আবাস যোজনার যোগ্য উপভোক্তা নয়, তারাই বেশি তালিকায় ঢুকে পড়েছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ
অর্থাৎ বিজেপি এতদিন আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিল। এবার একশো দিনের কাজের দুর্নীতি প্রকট করতে বদ্ধপরিকর তারা। কেননা বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের বঞ্চনার যে অভিযোগ আনছে তৃণমূল, তা ভোঁতা করতে এবং দুর্নীতি ইস্যুকে আরও শক্ত করতে নতুন এই অবস্থান নিয়েছে বা বলা যায় অবস্থান বদল করেছে।
একশো দিনের কাজের টাকা পাননি বাংলার শ্রমিকরা
তবে এতদিন একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে বাংলাকে বঞ্চনা করেছে বিজেপি, তা যেমন প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে পিছু হটেই যে তাদের অবস্থান বদল করতে হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবাস যোজনার টাকা ও একশো দিনের কাজের টাকা বাংলায় আনতে এতদিন কেন্দ্রের কাছে বহু অনুনয়-বিনয় করেছেন। বারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শরণাপন্ন হয়েছেন। তারপর আবাস যোজনার টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কিন্তু একশো দিনের কাজের টাকা পাননি বাংলার শ্রমিকরা।
বিধানসভার প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা
এবার তাই বিধানসভার প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল রাজ্যের তরফে। এই প্রতিনিধি দল নদী ভাঙন এবং একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে দরবার করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলের রাজ্য সভাপতিকে নিয়ে সটান চলে যান দরবার করতে।
বাংলার মানুষের কাছে বিশ্বাস হারাতে বসেছে বিজেপি
শুভেন্দুদের এই দরবারের আসল উদ্দেশ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের কাছ থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচারের হাতিয়ারকে ভোঁতা করে দেওয়া। কেননা টাকা আটকে রাখলে হিতে বিপরীত হবে তা বুঝতে পেরে গিয়েছেন শুভেন্দু-সুকান্তরা। রাজ্য একশো দিনের টাকার হিসেব দেয়নি তারপর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বরাদ্দ বন্ধ করে রাখে কেন্দ্র। কিন্তু বরাদ্দ বন্ধ করতে গিয়ে বাংলার মানুষের কাছে বিশ্বাস হারাতে বসেছে বিজেপি।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে অবস্থান বদল করার সিদ্ধান্ত
তাই এখন রাজ্য বিজেপি মনে করছে টাকা আটকে রাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে। রাজ্য যেভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের প্রচার করছে, তাতে বুমেরাং হতে পারে গ্রামীণ ভোটে। তাই রাজ্য বিজেপি মনে করছে, এখন কেন্দ্র যদি টাকা ছেড়ে দেয়, তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তারা পাল্টা চাপ দিতে পারবে তৃণমূল সরকারকে। সেজন্যই অবস্থান বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে বিপাকে বিজেপি
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবাস যোজনার টাকা বের করে নিতে সমর্থ হয়েছেন। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুযারে সরকারকে সেরার স্বীকৃতি দিয়ে পুরস্কৃত করতে চলেছে কেন্দ্র। এবার যদি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের বরাদ্দ আদায় করে নেন মমতা, তাহলে বিজেপির পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে। তাই বিজেপি আবার অবস্থান বদল করে নতুন চাল চালতে চাইছে রাজ্যে পঞ্চায়েতের আগে।
রাজ্যের দুর্নীতিকে সামনে এনে ফায়দা তোলার চেষ্টা
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নালিশের পর নালিশ করে গেলেও, একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে এখন নমনীয় শুভেন্দুরা! কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার পরিকল্পনার কাছে শুভেন্দুর ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তাই আবাস যোজনার টাকা দিয়ে যেমন রাজ্যের দুর্নীতিকে সামনে আনা গিয়েছে, তেমনই একশো দিনের কাজেও রাজ্যের দুর্নীতিকে সামনে এনে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি।