বিজেপির হিন্দুত্ব বুমেরাং হয়েছে! একুশের ‘কুরুক্ষেত্রে’ যে সমীকরণে কুর্সিতে ফের মমতাই
বিজেপির হিন্দুত্ব বুমেরাং হয়েছে! একুশের ‘কুরুক্ষেত্রে’ যে সমীকরণে কুর্সিতে ফের মমতাই
বাংলার নির্বাচন শেষ। বাংলার মানুষ বিকল্প হিসেবে ফের তৃণমূলকেই আর এক বার বেছে নিয়েছে। তাঁরা বিজেপির হিন্দুত্বকে আমল দেয়নি। বরং বিজেপির হিন্দুত্বের প্রতিবাদে মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর আদিবাসী মহিলারা তৃণমূলের পক্ষে রায় দিয়েছে। ফলে বিজেপির পরিবর্তনের স্বপ্নপূরণ হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেসের আরও জোরালো জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলায়।
ধর্মীয় অনুশাসন বড় নয়, পাশে কারা থাকছে
দরিদ্র লোকেরা অন্য সবার মতো ভাবনা চিন্তা করে না। তারা কী ধরনের সমাজে থাকতে চায় এবং কীভাবে সেখানে যেতে পারে সে সম্পর্কে ওয়াকিবাহল হওয়া জরুরি। তাঁদের মনের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন বড় হয়ে থাকে না। তাঁদের পাশে কারা থাকছে, কোন সরকার তাঁদের হয়ে কথা বলছে, সেটা একটা বড় ব্যাপার।
মমতা থাকলে সুফল মিলবে, মহিলাদের সমর্থন
রাজ্যের নির্বাচনে অবশ্যই তাঁদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে মমতার সরকারের জনহিতৈষী কিছু প্রকল্পের সুবিধা প্রাপ্তি। রাজ্যের সরকার মেয়েদের জন্য অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করেছে। ফলে মেয়েরা এই সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। মমতার সরকার তাঁদের জন্য যে ভেবেছে, কিছু দিয়েছে, তার প্রতিদানও পেয়েছে। মানুষ ভেবেছে, সরকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলে, তবেই তাঁরা সুফল পাবেন।
দরিদ্রদের ভোট, যে দল বেশি গুরুত্ব দেয়
ভারতের মতো গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলি দরিদ্রদের নামে ভোট সংগ্রহ করেছে। ফলস্বরূপ দরিদ্ররা নিজেরাই ন্যায়বিচার, সাম্য এবং মর্যাদার ধারণাগুলি বরাদ্দ করেছে নিজেদের মতো করে। দরিদ্ররা সেইসব রাজনৈতিক দলগুলিকে সমর্থন করে, যারা তাঁদের মর্যাদাকে গুরুত্ব সহকারে দেখে। যেহেতু দরিদ্র লোকেরা কর্মসংস্থান ও খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য অভিজাত শ্রেণির উপর নির্ভরশীল, তাঁরা পুরোপুরি শ্রেণি দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করতেও পারে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্যাণমূলক পরিকল্পনা
বামফ্রন্ট সরকার ভূমি সংস্কার থেকে শুরু করে বৈষয়িক সম্পদের পুনরায় বিতরণ এবং দরিদ্রদের আরও মর্যাদাকে পুনর্বিবেচনার সুযোগ দিয়ে তাঁদের মনজয় করে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। ফলস্বরূপ নিরবচ্ছিন্নভাবে ৩৪ বছর ধরে রাজ্য শাসন করতে সক্ষম হয়েছিল বামফ্রন্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্যাণমূলক পরিকল্পনায় দরিদ্রদের নিজের দিকে রাখতে একই ভূমিকা পালন করেছে।
৫৫ শতাংশা নিম্নবিত্ত মহিলার তৃণমূলকে সমর্থনে
মমতা সরকারের সমাজ ও জন কল্যাণমূলক কর্মসূচি দরিদ্র এবং নিম্ন শ্রেণির মহিলাদের ব্যাপক সমর্থন জিতেছে। যার ফলে ৫২ শতাংশ দরিদ্র মহিলা এবং ৫৫ শতাংশ নিম্নবিত্ত মহিলারা টিএমসির পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিপরীতে ধনী মহিলারা বিজেপির পক্ষে ছিলেন।
আদিবাসী মহিলাদের মধ্যে বিজেপির থেকে তৃণমূল এগিয়ে
রাজ্যের দরিদ্র আদিবাসী মহিলাদের মধ্যে বিজেপির থেকে তৃণমূল ১০ শতাংশ মানুষের সমর্থন বেশি পেয়েছে। বিপরীতে অভিজাত মহিলাদের মধ্যে বিজেপির পক্ষে সমর্থন তৃ তৃণমূলের তুলনায় বেশি ছিল। দরিদ্রতম শ্রেণির মহিলাদের মধ্যে তৃণমূলের সমর্থন অপ্রতিরোধ্য। তার ফল একুশরে বিধানসভা পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল।
৭৫ শতাংশ মুসলমান তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছে
মুসলমানদের মধ্যে তৃণমূলের সমর্থনও প্রশ্নাতীতওভাবে বেশি। এই মুসলিম সমাজের মধ্যেও অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় দারিদ্র্যের মাত্রা বেশি। ফলে সেই শ্রেণির মনোরঞ্জন ঘটিয়ে তৃণমূল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।। সিএসডিএস পোস্টের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ মুসলমান তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
মুসলিম সমাজের সমর্থন আদায়ে সিএএ-র ভূমিকা
এছাড়াও মুসলিম সমাজের সমর্থন আদায় করে নেওয়ার পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের ধারাবাহিক বিরোধিতা করে যাওয়াও একটা কারণ। বাংলাভাষী মুসলমানদের নাগরিকত্বের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়ার এবং তাদেরকে রাষ্ট্রহীন করে দেওয়ার হুমকি বলেও গণ্য করা হয়েছে সিএএকে।