পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ স্থির হয়েই গেল রাজ্যে! হঠাৎ কেন ভোলবদল মমতার
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত দফতরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে। পঞ্চায়েত দফতরের সেই রিপোর্টই মুখ্যমন্ত্রীর মত পরিবর্তনে সহায়ক হয়।
শুধুই কি সংবিধান সংকট নাকি অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নয়া সিদ্ধান্তে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনতে। আসন্ন শীতেই এই ভোটপর্ব সেরে নেওয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু হঠাৎ নবান্নে বৈঠক ডেকে তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবার সময়েই হবে ভোট।
কিন্তু কেন মমতা পিছু হটলেন? কেন তিনি সময়মতোই ভোট করার পক্ষেই সহমত হলেন? তা নিয়েই এখন চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সম্প্রতি তিনি পঞ্চায়েত দফতরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে। পঞ্চায়েত দফতরের সেই রিপোর্টই মুখ্যমন্ত্রীর মত পরিবর্তনে সহায়ক হয়। পঞ্চায়েত দফতর মমতাকে রিপোর্ট দেয়, আগে ভোট হলে সংবিধান সংকট দেখা দেবে। নতুন বোর্ড গঠন করার জন্য চার মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে।
পঞ্চায়েত আইনেই রয়েছে, বিগত বোর্ডের পাঁচ বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ না হলে, সেই বোর্ড ভাঙা যাবে না। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট করে নিলেও নতুন বোর্ড গঠনের জন্য জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই জটিলতা বৃদ্ধি পাবে নতুন বোর্ড গঠনে। সেই জটিলতা এড়াতেই শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদল করেন মমতা। তিনি শীতকালে ভোটের আশা দূরে সরিয়ে নির্দিষ্ট সময়েই ভোটে রাজি হন।
নিয়ম হল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর যেদিন বোর্ড গঠন হয়েছে, ২০১৮ সালে সেই তারিখের আগে ভোট করতে হবে। সেইমতোই আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ের আগে ভোট করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত মানেই ত্রিস্তর অর্থাৎ পঞ্চায়েত, সমিতি ও জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন। অদ্ভুত জটিলতা তৈরি হবে নয়া বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে।
তার উপর এই যে দীর্ঘ চারমাস বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে, সেইসময়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কেনাবেচার একটা সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থা তৈরি হোক আদৌ চাইছে না রাজ্য সরকার। কেননা এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তাৎপর্য সম্পূর্ণ আলাদা। রাজ্য-রাজনীতিতে তৃণমূলের মূল প্রতিযোগী হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করছে বিজেপি।
তৃণমূলের এতদিনের ভোট ম্যানেজার, মমতার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুকুল রায় গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। সেই নিরিখেও এই ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। বিজেপিতে যোগ দিয়েই পরিবর্তনের আওয়াজ তুলেছেন মুকুল রায়। তারপর পঞ্চায়েত যুদ্ধেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মমতাকে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কোমর বেঁধেই নামছেন পঞ্চায়েত যুদ্ধে। কোনওরকম হঠকারিতা করতে চাইছেন না তিনি। অঙ্ক কষেই তিনি এগোতে চাইছেন গ্রাম দখলের যুদ্ধে।