বাজেট বাড়ল পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে, আগামী বছর ভোটের আগে কাজের বিস্তারিত খতিয়ান
বাজেট বাড়ল পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে, আগামী বছর ভোটের আগে কাজের বিস্তারিত খতিয়ান
বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে ২০২৩ সালে। রাজ্য বাজেটে তাই স্বাভাবিকভাবেই সকলের নজর ছিল পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের ব্যয়-বরাদ্দের দিকে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই দফতরের জন্য ২৫,১৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। রাজ্যে দ্বিতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর ৭ জুলাই যে বাজেট পেশ করা হয়েছিল তাতে এই দফতরের জন্য ব্যয়-বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৩,৯৮৩.২৭ কোটি টাকা।
শ্রম দিবস
বাজেট পেশের সময় রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ৩০.১৩ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে পরিবারপিছু কর্মে নিযুক্তির গড়ে ৪২ দিন শ্রমদিবস হয়েছে। গড় এই সময়ের মধ্যে ৭২ লক্ষ পরিবারের ১০২.৭৪ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষকে কাজ দেওয়া সুনিশ্চিত করেছে রাজ্য সরকার। প্রায় ৮.৯৬ লক্ষ নতুন জব কার্ড প্রদান করা হয়েছে। গত ডিসেম্বর অবধি ২৭,৭৮৯টি জলাধার-সহ জলসংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। ১৩৩২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। একক সুবিধাভোগী প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৪০,৭০৪টি পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। এখন থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই ৯৯.৮ শতাংশ শ্রমিকদের মজুরি হাতে পৌঁছে যাচ্ছে।
আবাস যোজনা
বাংলার আবাস যোজনায় ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই রাজ্য গ্রামীণ ক্ষেত্রে ১,৪৫,৮৫৫টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। খরচ হয়েছে ৪,১১৮ কোটির বেশি টাকা, যার বেশিরভাগেরই এক বা দুটি কিস্তি দেওয়া হয়েছে। এই যোজনা ২০১৬-১৭ সালে শুরু হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত বাংলাতেই সবচেয়ে বেশি বাড়ি তৈরির কাজ হয়েছে বলে দাবি রাজ্য সরকারের। ৩৪,৫৭,১৬৩টি বাড়ি তৈরির মঞ্জুর করা হয়েছে।
গ্রামীণ সড়ক
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলার গ্রামীণ সড়ক যোজনা- ১-এর অধীন ৩৪,৫৬৩.৩৬ কিমি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে বলে বাজেটে উল্লেখ করেছে রাজ্য সরকার। ব্যয় হয়েছে ১৬,০৯৯.৫৬ কোটি টাকা। ১০টি সড়ক সংযোগকারী ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৪৭টি ব্রিজ তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে। বাংলার গ্রামীণ সড়ক যোজনা ২-এর অধীনে অর্থবরাদ্দের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং বাংলার সড়ক যোজনা-১-এর নির্মাণ কাজের ৯৫ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। বাংলার সড়ক যোজনা-৩ পর্বের জন্য বিবেচিত হওয়ায় তার প্রস্তুতি পর্বের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বাংলার সড়ক যোজনা ১ ও ২ পর্বের কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্য়ে শেষ হবে বলেও জানানো হয়েছে।
উন্মুক্ত শৌচমুক্ত
রাজ্য সরকার আরও জানিয়েছে, বাংলার সব পঞ্চায়েত এখন উন্মুক্ত শৌচমুক্ত বলে ঘোষিত হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে শুরুর সময় থেকে গত ডিসেম্বর অবধি বাংলার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৬,৩৪,৯৬৭টি গৃহশৌচালয় তৈরি হয়েছে। আরও ৬,২৫৭টি সর্বসাধারণের জন্য শৌচালয় নির্মিত হয়েছে। ৩৩১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশন কর্মসূচি শুরুর কথাও জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
জয় বাংলা পেনশন প্রকল্প
রাজ্য দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষজনের জন্য চলতে থাকা বিভিন্ন একক পেনশন প্রকল্পগুলিকে জয় বাংলা প্রকল্পে এক ছাতার তলায় আনার কাজ শুরু করেছে। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে সামাজিক সুরক্ষা পেনশনের অর্থসাহায্যে ৪০০ বা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই উপভোক্তারা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। গ্রামীণ এলাকায় দুঃস্থ পরিবারের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একমাত্র রোজগেরে সদস্যের আকস্মিক মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন ৪০ হাজার টাকা নিকটাত্নীয়কে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। গত ডিসেম্বর অবধি ২৩,১৬,০৫৮ জন সুবিধাভোগীকে এই সুবিধা দিতে ২,৩৪৮ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার।
স্বনির্ভর মহিলারা
রাজ্য সরকারের দাবি পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ জীবিকা মিশন কর্মসূচির অধীনে ৯৫.৮ লক্ষ গ্রামীণ মহিলাকে ৯.১০,৫৩৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে স্বনিযুক্তির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর অবধি ৬,৫৭,৫৬২টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ৯৮৫.৩৩ কোটি অর্থসাহায্যের কথাও বাজেট বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে। বাংলা দেশের মধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী উন্নয়নে চতুর্থ সেরা রাজ্যের খ্যাতি অর্জন করেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করতে ঢাকুরিয়ায় সৃষ্টিশ্রী নামে গ্রামীণ বাংলার শহুরে বাজার চালু হয়েছে। সরস মেলাও আয়োজন করা হয়।
আনন্দধারা
আনন্দধারা কর্মসূচির মাধ্যমে ৩২,৪৪৪টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্যোগে ৬৩.৯৪ লক্ষ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর স্কুল ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ৩৮৩.৬৫ কোটি টাকার ব্যবসাও হয়েছে। রন্ধনশালা তৈরি করে অঙ্গনওয়াড়়িতে পাঠানো হচ্ছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি বছরে আনুমানিক ১৮ কোটি টাকার ব্যবসা করবে বলে আশাপ্রকাশ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ডিসেম্বর অবধি ডব্লুবিএসআরএলএম প্রকল্পের অধীনে ১০৭.৪০ কোটি টাকা রাজ্যের তরফে মঞ্জুর করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে মিলেছে ১৬১.১০ কোটি টাকা।
বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৩.৮ গুণ! ৯০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না বলে তোপ মমতার