মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রান্তকারী! পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফেসবুকে লেখা খোলা চিঠিতে আক্রমণ কুণালের
ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছু়ড়লেন দলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ। এমনকী দল ও দলনেত্রীকে ঘুরিয়ে চক্রান্তকারী বলতেও পিছপা হলেন না তিনি।
কলকাতা, ৩০ মার্চ : ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছু়ড়লেন দলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ। এমনকী দল ও দলনেত্রীকে ঘুরিয়ে চক্রান্তকারী বলতেও পিছপা হলেন না তিনি। পার্থবাবুকে উদ্দেশ্য করে লেখা ফেসবুক-চিঠিতে তিনি আবেদন করলেন- একটু ভেবে দেখবেন পার্থবাবু...। প্রশ্ন তুললেন, কেন অ্যালকেমিস্ট ও অ্যালকেমিস্টি কর্তা দলের সাংসদ কেডি সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? কেন শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি এর বেলায় চুপ?
বুধবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে কুণাল ঘোষ লিখেছেন, পার্থবাবু আপনার কাছে সবিনয় নিবেদন, 'আমি এজন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে দল আমাকে সাসপেন্ড করেনি। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে আমি দলের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত চাওয়ায় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি আমকে সাসপেন্ড করে। সেই সাসপেনশনের চিঠি আজও আমি হাতে পাইনি। দলকে আমি সদস্য হিসেবে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা দিই, তাও গ্রহণ করে দল। আমার বিরুদ্ধে অনেকে সরব হয়ে বলেছেন, আমি কেন দলের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি না। এমনও প্রশ্ন তো উঠতে পারে, একজন সাসাপেন্ডেড সাংসদের সদস্যপদের টাকা কেন দল নিচ্ছে?
এখন প্রশ্ন, পার্থবাবু শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি কেন দলেরই সাংসদ কেডি সিং-এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কেন সাসপেনড করছে না। দলনেত্রী বলেছেন কেডি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে তাহলে দলবিরোধী কাজের জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমি তো চিটফান্ড মলিক ছিলাম না, তাহলে কি আমি প্লেন দিতে পারিনি বলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমার কাঁধে বন্দুক রেখে আমাকে বলি দেওয়া হয়েছে।
কেন কেডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? পার্থবাবুর আপানকে প্রশ্ন করতে চাই, কেডি-র বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে আপনার কমিটি? কেডি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কি হাত কাঁপছে? এরপর তিনি লেখেন, শব্দের জাগরালিতে এই প্রশ্নের উত্তর এড়াতেই পারেন, কিন্তু এর জবাব আপনাদের দিতেই হবে। আমি দীর্ঘদিন ধরে বলছি সারদা-সহ চিটফান্ড কাণ্ডে একটি তদন্ত কমিটি করা হোক। সেই কমটির সম্মুখীন হতে চাই আমি। আমাকে আক্রমণ করে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
কুণাল ঘোষের অভিযোগ, কেডি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অনেক বিপজ্জনক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলেই মিটমাট করে নেওয়ার দৌত্য চলছে। আমি প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলাম বলে ব্যবস্থা নেওয়া হল। আর অন্যজন যখন শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন, দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না, মহান শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তখন নীরব। পার্থবাবু আপনাকে উত্তর দিতে হবে কেন এই পিছুটান? কারা তৃণমূলে যোগ দেওয়ালেন কেডিকে? কেন যোগ দেওয়ালেন? তাঁকে এ রাজ্যে এনে কেন রাজ্যসভায় পাঠানো হল? অ্যালকেমিস্টের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করল কে? যিনি কেডি-র দেওয়া প্লেন ব্যবহার করলেন তিনি কেন সুবিধাবাদী, চক্রান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন না?
পার্থবাবুর কাছে তিনি আরও প্রশ্ন করেন, কীসের ভয় পাচ্ছেন আপনি? কাকে বাঁচাতে, কার কথায় আপনি নীরব? চাকরি না বাঁচছে, কিন্তু মান বাঁচবে তো? নব্য তৃণমূলীদের অতিপ্রেমে আজ আমাএক অপ্রিয় করে অনেককে আড়াল করছেন, সৎ সাজছেন, কিন্তু এমনি করে চিরকাল জিততে পারবেন তো?
এর আগে এক বেসরকারি চ্যানেলে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের পর নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ছিলেন কুণাল ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীকে সুবিধাবাদী তকমা দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের। বলেছিলেন, 'দূর থেকে কাপুরুষরা অনেক বাজে কথা বলে। সাহস থাকলে আর একটিবার আমাকে সাক্ষাৎকার দিন। আমি কিছু প্রশ্ন করব। একটিবারও আপনার উত্তর মাঝপথে থামাবো না।' তারপর ফের পার্থবাবুকে ফেসবুক-চিঠি লিখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বার্তা দিতে চাইলেন কুণালবাবু।