শেক্সপিয়ার-রবি ঠাকুরে একটু নয় গুলিয়ে গেল, ক্ষতি কী? উনি তো মুখ্যমন্ত্রী!
তিনি কখনও 'সিধু-কানু-ডহর' ত্রয়ীর ডহরবাবুর পরিবারকে খুঁজে বের করবেন বলে দাবি জানান, তো কখনও ডক্টরেটকে ডাক্তারবাবু বলে সম্বোধন করেন। জওহরলাল নেহরুর লেখা 'ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া'- বইটিকে অবলীলালয় 'ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট' বলে যেতে পারেন উনি। রবীন্দ্রনাথ আর শেক্সপিয়ারে একটু গুলিয়ে গেলে তবে এত কথা উঠছে কেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কিত অন্যান্য খবর পড়তে ক্লিক করুন এখানে
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময়ই বেশ নির্ভয়ভাবে 'স্মার্টলি' প্রকাশ্যে ভুলভাল তথ্য দিয়ে থাকেন (অবশ্যই তাঁর অজান্তে)। মঙ্গলবার কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনে এসেও ভুল তথ্য না দিলেও যা বললেন তাতে যথেষ্ট বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী !
মঙ্গলবার মিলম মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হল ৩৯ তম বইমেলা। সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোদনে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর ও শেক্সপিয়ার জমানার প্রসঙ্গ টানেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, "শেক্সপিয়ারটা আমাদের ছেলেমেয়েরা খুবই ভালবাসে। এমনকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন গিয়েছিলেন লন্ডনে, যখন গীতাঞ্জলির জন্য তিনি রচনা করছেন, কিটস এবং শেক্সপিয়ার এই যে জমানাটা এটার সঙ্গে তার একটা ভাল রিলেশন ছিল।"
বিভ্রান্তিটা কোথায়?
গীতাঞ্জলি - প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। কবিতাগুলি ভারতেই লিখেছিলেন রবি ঠাকুর। ১৯১২ সালের গোড়ায় রবীন্দ্রনাথের লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশ্রামের সময় তখন গীতাঞ্জলির কবিতাগুলি ইংরাজিতে অনুবাদের কাজ শুরু করেন তিনি। পরে ১৯১২ সালের শেষের দিকে লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে প্রকাশিত গয় গীতাঞ্জলি। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন , এমনকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন গিয়েছিলেন লন্ডনে, যখন গীতাঞ্জলির জন্য তিনি রচনা করছেন'।
শেক্সপিয়ারের জন্ম ১৫৬৪ সালে। মৃত্যু ১৬১৬ সালে। অর্থাৎ রবীন্দ্র নাথ লন্ডন যাওয়ার প্রায় ৩০০ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন শেক্সপিয়ার। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এমনকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন গিয়েছিলেন লন্ডনে...কিটস এবং শেক্সপিয়ার 'এই যে জমানাটা' মানে উনি কী বলতে চেয়েছেন লন্ডনে যখন রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন তখন শেক্সপিয়ার জমানা ছিল?
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার যে অংশ ঘিরে চমক
বিরোধী নেতারা (বর্তমানে দলীয় কিছু নেতারাও বটে) বারে বারে অভিযোগ তুলে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধিতা করলেও বিরোধিতা নিতে পারেন না। মানে তার বিরুদ্ধে কোনও কথা হোক প্রশ্ন উঠুক তা তিনি সহ্য করতে পারেন না। আর তাঁর শাসনকালে তার উদাহরণও মিলেছে ভুরি ভুরি।
ব্যঙ্গচিত্র আঁকায় গ্রেফতার হতে হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। মঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় মাওবাদী তকমা পেয়ে জেলে যেতে হয়েছিল শিলাদিত্য চৌধুরিকে। অপছন্দের সংবাদপত্র গ্রন্থাগারে নিষিদ্ধ করে সরকারি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। অর্থাৎ তাঁর বিপক্ষে বলার বাকস্বাধীনতাটুকুও প্রায় হরণের পথেই নেমেছিলেন তিনি। আর এখানেই তো চমক।
মঙ্গলবার এই মুখ্যমন্ত্রূই বললেন, মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা সবার থাকা উচিত। বিরোধীদের বক্তব্য তবে কী বিভিন্ন দিক থেকে কোণঠাসা হয়ে এই গভীর সত্য উপলব্ধি করেছেন মমতা। নাকি ভোটের আগে 'ভেটবাজি'?
আমাদের প্রশ্ন, অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্য চৌধুরির ঘটনা এখন ঘটলে কোন পথে হাঁটবেন মমতা?