কলকাতা পুরভোটের প্রচারে সিন্ডিকেট-বার্তা, প্রয়োজনে সব অনলাইন করে দেবেন মমতা
গোয়া থেকে ফিরেই উত্তর কলকাতার ফুলবাগানে নির্বাচনী জনসভায় কাউন্সিলরদরে উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীদের সমর্থনে ফুলবাগানে নির্বাচনী জনসভা করে তিনি বলেন, কাউন্সিলররা নিজেদের দায়িত্ব না পালন করলে, তাকে সরে যেতে হবে।


বুধবার নির্বাচনী জনসভা থেকে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কলকাতা পুরবাসীর কোন সমস্যা হলে প্রথমে কাউন্সিলরকেই এগিয়ে যেতে হবে। আর তিনি যদি কাজ না করতে পারেন তবে তাঁকে সরে যেতে হবে। তিনি এই মর্মে তাঁর নিজের ওয়ার্ডের তুলনা টেনে রতনা মালাকারকে কেন প্রার্থী করা হয়নি তাঁর ব্যাখ্যাও দেন।
আর এই জনসভা থেকে কাউন্সিলরদের তিনি সিন্ডিকেট বার্তা দেন। তাঁর সাফ কথা, কোনও সিন্ডিকেট চালানো যাবে না। কাউন্সিলররা ঠিক করে দেবে না বাড়ি-ঘর তৈরির জিনিসপত্র কোথা থেকে আসবে। বা তার কাছ থেকেই বাড়ি তৈরির জিনিসপত্র নিতে হবে বা কাউন্সিলর করে দেবেন বাড়ি তৈরির কাঁচামাল। প্রত্যেক কাউন্সিলরকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন স্বচ্ছতা রাখতে এবার সব অনলাই করে দেব।
এবার মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ওয়ার্ড ৭৩ নম্বরে বিদায়ী কাউন্সিলর রতন মালাকারের পরিবর্তে প্রার্থী করা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রতন তাই নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু অভিষেক রতনের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে বিরত করেন। কিন্তু কেন রতনকে প্রার্থী করা হল না তা প্রকারান্তরে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্থানীয় কাজ সাংসদ-বিধায়করা করতে পারেন না। সেই কাজ করতে হয় কাউন্সিলরদের। এলাকায় জল নেই, রাস্তা নেই, আলো খারাপ- তার সমাধান আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়, তা দেখতে হবে কাউন্সিলরকে। কাউন্সিলরদের যা দায়িত্ব, তা কিন্তু করতে হবে। নাম না করেই তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে কিছুদিন আগে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ কয়েকজন আমার গাড়ি দাঁড় করিয়ে জানান কলের পাইপ খারাপ হয়ে গিয়েছে, কবে থেকে বলছি, কাজ হচ্ছে না। তখন কাউন্সিলরকে সেখান থেকে ফোন করে বলেছিলাম। কী র তোকে পাইপ সারিয়ে দিতে বলেছে, সারিয়ে দিসনি। এটাও কি আমি সারিয়ে দেব। এবারে আর তাকে টিকিট দিইনি।
মমতা বলেন, দুঃস্বপ্ন নয়, কলকাতা এখন স্বপ্নের শহরে পরিণত হয়েছে। কলকাতা এখন আলো ঝলমলে প্রাণের শহর। কলকাতার চেহারাই বদলে গিয়েছে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর। পানীয় জলের পরিষেবা আরও পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি নিকাশি নিয়েও তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন। দেশের অন্য শহরের তুলনা টেনে তিনি বলেন, কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা তুলনায় অনেক গুণ ভালো।
তৃণমূল সুপ্রিমো প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, বাংলায় পানীয় জলের আর কোনও অভাব থাকবে না। ২০২৪-এর মধ্যে ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে। শুধু কলকাতা নয়, গোটা বাংলাই ২০২৪-এর মধ্যে পানীয় জল পাবে। আর নিকাশি সমস্যা দূর করার জন্য কলকাতায় আর পাম্পিং স্টেশন করা হবে। আরও ২০০ পাম্পিং স্টেশন হবে কলকাতায়।
পরিবহণ সমস্যা মেটাতেও তৎপর হবে পুরসভা। কলকাতার গতি এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। কলকাতা শহরের গতি আরও বাড়াতে তৈরি হবে আরও উড়ালপুল। অনেক উড়ালপুল তৈরি হয়েছে, হচ্ছেও অনেক, হবে আরও। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের ঘর দেওয়া হবে। মোট কথা, কলকাতাবাসীর পরিষেবা দানে তাঁরা তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছেন।
কোন কোন কাজে অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁরা পুর পরিষেবা প্রদান করবেন আগামী দিনে, তাও এদিন জানিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, নারী সুরক্ষায় অন্যতম নিরাপদ শহর কলকাতা। এই শহরকে সবদিক থেকে আদর্শ রাখাই তাঁদের পরিচালিত পুরসভা ও সরকারের উদ্দেশ্য ছিল। ,সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাব। এবার কলকাতায় কমিউনিটি হল তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের ইস্তেহারে। প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিউনিটি হল তৈরি হবে। উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য তা ব্যবহার করতে পারবেন। অনলাইনে চাইলে সাতদিনে পাবেন কমিউনিটি হল। আমরা যা বলি তা করি। এবার স্বচ্ছতা রাখতে সব অনলাইন করে দেব।