মমতার ধৈর্য আর কুটকৌশলে মাত গুরুং, বনধ তুলেও পাহাড়ে ‘নো এন্ট্রি’
সুযোগের জন্য অপেক্ষা করেছেন। যখন যে সুযোগ পেয়েছেন, তা কাজে লাগিয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই বিনয় তামাং বসেছেন রাজপাটে। আর বিমল গুরুংয়ের স্থান হয়েছে অজ্ঞাসবাসে।
রাজনৈতিক কুট-কৌশলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এখন কতটা পারদর্শী, তা ফের প্রমাণ করলেন তিনি। শুধু ধৈর্য আর বুদ্ধি দিয়ে কিস্তিমাত করে দিলেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংকে। পাহাড়ের স্বঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী এখন নিজেই পাহাড় ছাড়া। নিরূপায় হয়ে শেষপর্যন্ত মোর্চার বনধ প্রত্যাহারে নির্ধারিত হল পাহাড়-যুদ্ধে গোহারা গুরুং।
পাহাড় বনধ 'সেঞ্চুরি' দিন পূর্ণ করে ফেলেছিল। টানা সাড়ে তিনমাস ধরে বনধে নাজেহাল পাহাড়বাসী। এই অবস্থা সত্ত্বেও এতটুকু ধৈর্য হারাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সময় ও সুযোগের জন্য অপেক্ষা করেছেন। আর যখন যে সুযোগ পেয়েছেন, তা কাজে লাগিয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই বিনয় তামাং বসেছেন রাজপাটে। আর বিমল গুরুংয়ের স্থান হয়েছে অজ্ঞাসবাসে।
এই নয়া স্ট্র্যাটেজিতেই কিস্তিমাত মমতার। একেবারে ধরাশায়ী গুরুং। এখন তাঁর অবস্থা হল অনেকটাই সুভাষ ঘিসিংয়ের মতো। তিনিও একটা সময় পাহাড়ে ঢুকতে পারেননি। এখন বিমল গুরুংও বনধ তুলে নেওয়া সত্ত্বেও পাহাড়ে ঢুকতে পারবেন না। পাহাড়ে ঢুকতে গেলে তাঁকে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে।
এই অবস্থায় গুরুং কী করবেন? তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েই যায়। ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত। তারপর রয়েছে লুক আউট নোটিশ ও গ্রেফতারি পরোয়ানা। তাই এসব না উঠলে তিনি কোন ভরসায় পাহাড়ে পা রাখবেন! সম্প্রতি রোশন গিরিকে কব্জায় পেয়েও সিআইডি ছেড়ে দেয় বলে রটনা। অন্য তিন মোর্চা নেতাকে পাকড়াও করলেও রোশন গিরিকে ছেড়ে দিয়ে বিমল গুরুংকে বনধ তোলার জন্য সুপারিশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে খবর রটে যায়।
এই ঘটনা যদি সত্যি হয়, তবে পাহাড়ে হয়তো ফেরার পথ প্রশস্ত করতে পারেন বিমল গুরুং। সেটাও কিন্তু মমতার কাছে হার স্বীকারই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রশাসনের কৃপাদৃষ্টি পেলেই তিনি পাহাড়ে ফিরতে পারবেন। এরপর তিনি ফিরলে কী সমীকরণ হবে, তা পরের কথা। কিন্তু সবটাই হবে মমতার কথায়। আসলে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ে গিয়েছেন গুরুং। তাঁর রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়া এখন দূর অস্ত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পাহাড়ের শাসন তাঁর হাতে রাখার জন্য মমতা আসল চালটি দেন নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকে। তার আগে পরিকল্পনামাফিক বিমল গুরুংকে কোণঠাসা করে দিয়েছেন। তারপর বিনয় তামাং এবং অনীত থাপাকে নিজের অধীনে নিয়ে এসে গুরুংয়ের কফিনে শেষ পেরেকটি পুতে দিয়েছেন। আর তাতেই শেষ গুরুং।
প্রশাসনিক বোর্ড গড়েছেন পাহাড়ে। সেই বোর্ডের মাথায় বসিয়েছেন বিদ্রোহী মোর্চা নেতা বিনয় তামাংকে। তারপর ধীরে ধীরে পাহাড়ের দোকান-বাজার, স্কুল-কলেজ, সরকারি অফিস-আদালত খুলতে শুরু করেছিল। চালু হয়েছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। যখন পাহাড় প্রায় স্বাভাবিক তখন বনধ তোলা না তোলায় কিছুই এসে যেত না। তাই কেন্দ্রীয় সরকার মুখরক্ষার বার্তা দিতেই বনধ তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন গুরুং।
মহাসপ্তমীর সকাল থেকে পাহাড় ফের স্বাভাবিক। স্বাভাবিক দোকান-বাজার খুলেছে। পরিবহণ ব্যবস্থাও স্বাভাবিক হয়েছে। পাহাড়ের রাস্তায় ফের যানবাহন চলতে দেখা গিয়েছে আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই। শুধু পুজোর পাহাড় যেমন পর্যটক ঠাসা থাকত, সেই দৃশ্য দেখা যায়নি। প্রশাসন মনে করছে কালীপুজোর মধ্যেই ফের পর্যটকে ভরে উঠবে পাহাড়। ফের হাসবে পাহাড়।