মমতা অনন্য রেকর্ডের সামনে, দেশের ইতিহাসে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীদের মেয়াদ একনজরে
মমতা অনন্য রেকর্ডের সামনে, দেশের ইতিহাসে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীদের মেয়াদ একনজরে
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই হতে চলেছেন দীর্ঘকালীন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া দিল্লির প্রাক্তন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ১৫ বছর ধরে পদে ছিলেন। টানা তিনবার তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন। এই মুহূর্তে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার এক অনন্য কৃতিত্ব গড়ে ফেললেন।
তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কৃতিত্ব মমতার
২০১১ সালে ৩৪ বছর ধরে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাম, ডান ও কেন্দ্রের বাধা পেরিয়ে টানা তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করতে চলেছেন। একুশের নির্বাচনে বিজেপির চ্যালেঞ্জ টপকে তাঁর দল সেরা জয় অর্জন করেছে। মমতা ছাড়াও দেশে আরও অনেক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেনয
শীলা দীক্ষিত দিল্লির সিংহাসনে
দিল্লিতে কংগ্রেসকে টানা তিনটি নির্বাচনে জয়ের পথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শীলা দীক্ষিত। তিনি ছিলেন দিল্লির দীর্ঘকালীন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি যে কোনও ভারতীয় রাজ্যের দীর্ঘকালীন দায়িত্ব পালনকারী মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নির্বাচন জিতেছিলেন। শীলা দীক্ষিত কংগ্রেসকে জাতীয় রাজধানীতে টানা তিনবার নির্বাচনী বিজয় এনে দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাঁর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন।
জয়ললিতা তামিলনাড়ুর কুর্সিতে
প্রাক্তন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জয়ললিতা, যিনি তামিলনাড়ুকে চার-মেয়াদ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আরও দুটি স্বল্প মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরে দ্রাবিড় আন্দোলনের চেহারা বদলে দিয়েছিলেন। তিনি তার পরামর্শদাতা এমজিআরের মৃত্যুর কয়েক বছর পরে ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর দল এআইএডিএমকে ক্ষমতা হারিয়েছিল। বরগুর আসনে ডিএমকে প্রার্থীর কাছে জয়ললিতা নিজেই পরাজিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ললিতাকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এরপর এআইএডিএমকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং তাঁকে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়েছিল। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে তাঁকে পদ ছাড়তে হয়েছিল একটি রাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থার মালিকানাধীন সম্পত্তি অর্জন-সহ ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষীসাব্যস্ত হয়ে। পনিরসেলভম মুখ্যমন্ত্রী হন।
জেল থেকে ফিরেও মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা
ছয় মাস পরে তাঁকে বেকসুর খালাস পেয়ে জয়ললিতা তাঁর মেয়াদ শেষ করেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে। এরপর চতুর্থবারের মতো এআইএডিএমকে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন দফতরের পরে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মেয়াদকালের তিন বছর পরে তাকে অসমর্থিত-সম্পত্তির মামলায় দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জয়ললিতার চার বছরের জেল হয়।
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা
সুপ্রিম কোর্ট এই রায় প্রত্যাহার করে এবং খালাস পেয়ে তাঁকে আবারও পদ ফিরিয়ে দেয়। ২০১৫ সালের ২৩ মে আবারও মুখ্যমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি ফের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর সেপ্টেম্বরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং ৭৫ দিনের হাসপাতালে ভর্তির পরে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মারা যান তিনি।
মায়াবতী পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেন
বিএসপি প্রধান মায়াবতী উত্তরপ্রদেশের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে খ্যাতি পান। বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী চারটি পৃথক মেয়াদে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি স্বল্পসময়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১৯৯৫ এবং ১৯৯৭ সালে। তারপরে ২০০২ থেকে ২০০৩ এবং ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত। তিনিই উত্তরপ্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন। রাজ্যের ইতিহাস দেখায় যে তাঁর আগে ৩১ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হননি।
বসুন্ধরা রাজে রাজস্থানের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী
ধোলপুর রাজপরিবারের প্রধান বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দু'বার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে লোকসভায় চারটি মেয়াদ শেষ করে ২০০৩ সালে রাজে রাজস্থানের রাজ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং বিজেপিকে বিপুল জয় এনে দিয়েছিলেন। বসুন্ধরা রাজে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি রাজস্থানে প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। ২০০৮ সালে তাঁর দলকে কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। ২০১৩ সালের রাজে দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শুরু করেছিলেন। ২০১৮ সালে আবার পরাজিত হন।