শুভেন্দু-রাজীবদের বিজেপি-যোগেও বড় ট্রাম্প-কার্ড মমতা, একুশের লড়াই সেয়ানে-সেয়ানে
শুভেন্দু-রাজীবদের বিজেপি-যোগেও বড় ট্রাম্প-কার্ড মমতা, একুশের লড়াই সেয়ানে-সেয়ানে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে হারিয়ে বাংলায় পরিবর্তনের সরকার গড়াই লক্ষ্য বিজেপির। কিন্তু বিজেপি এখনও বাংলায় তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে। কারণ তৃণমূলের পক্ষে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের দুই জনপ্রিয় মুখ শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও অভাব পূরণ হয়নি বিজেপির, অভিমত সিংহভাগ বিশেষজ্ঞের।
বাংলায় পরিবর্তনের মুখ কে, দিশা দিতে ব্যর্থ বিজেপি
বিজেপি পরিবর্তন আনার স্বপ্নে বিভোর বাংলায়। কিন্তু কার হাত ধের পরিবর্তন আসবে, বাংলায় পরিবর্তনের মুখ কে হবেন, তার দিশা দিতে ব্যর্থ। শুধু শাসক দলকে ভেঙে কি সরকার গঠন করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। মমতার দলের নেতারাই ভরসা। আর ভরসা মমতার সরকারের ১০ বছরের অ্যান্টি ইনকামবেন্সি।
জনপ্রিয় নেতাদের তৃণমূল থেকে ছিনিয়ে নিক বিজেপি
একুশের বিধানসভা নির্বাতনের তৃণমূলের সবথেকে বড় শক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ট্রাম্প কার্ডকে হারানোর মতো শক্তি নেই বিজেপির হাতে। যতই শুভেন্দু অধিকারীদের মতো জনপ্রিয় নেতাদের তৃণমূল থেকে ছিনিয়ে নিক বিজেপি, মমতার বিকল্প মুখের অভাব রয়েই গিয়েছে বিজেপিতে।
শুভেন্দুর মতো নেতাকে হারিয়ে মমতা সম্মুখ সমরে
২০১৯-এর ভোটে নরেন্দ্র মোদীর বিপক্ষে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের পিছিয়ে গিয়েছিল ঠিক যে কারণে, ২০২১-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের বিরুদ্ধে বিজেপি-সহ বিরোধীদের সেই একই অবস্থা। লড়াইটা যে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই কারণেই শুভেন্দুর মতো নেতাকে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন।
বিজেপির উত্থানের পর বাম-কংগ্রেস একেবারেই তলানিতে
তৃণমূলের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জার বিজেপি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির উত্থানের পর বাম-কংগ্রেস একেবারেই তলানিতে নেমে গিয়েছে। বিজেপি এখন বাংলায় দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। এখন তাদের লক্ষ্য প্রথম হওয়া। ৪০ শতাংশ ভোট নিয়ে বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বর্তমানে। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট সেখানে অনেক পিছনে।
বিজেপির হাওয়া উড়িয়ে মমতার নেতৃত্বে সরকার!
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহলের একটা বড় অংশ মনে করছে, বিজেপির হাওয়া উড়িয়ে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে ২০১৯ সালে বিজেপি প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। তৃণমূলের ভোট ছিল ৪৩ শতাংশ। এই তিন শতাংশের ব্যবধান মুছে ফেলা সহজ হবে না বিজেপির পক্ষে।
২০১৯-এ যেমন মোদী, একুশে তেমনই মমতা
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে তৃণমূল ১৬৪টি বিধানসভা ক্ষেত্রে এগিয়েছিল। এই সংখ্যা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেতা আসনের চেয়ে কম। আর বিজেপি লোকসভা ভোটের নিরিখে এগিয়ে ১২১টি বিধানসভা নির্বাচনে। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচন হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে। এবার হবে উল্টো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে।
এখন পর্যন্ত ২০১১ সালে তৃণমূলের সেরা পারফরম্যান্স
এখন পর্যন্ত ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন ছিল তৃণমূলের সেরা পারফরম্যান্স। সেবার ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ফলে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের দীর্ঘ শাসনের সমাপ্তি ঘটে সেবার। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবার তৃণমূলের ভোট শতাংশ হ্রাস পেয়ে হয় ৩৯। তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ শতাংশে।
মমতার বিকল্প মুখের অভাবই বিজেপিকে পিছিয়ে দিচ্ছে
২০১৯-এ নরেন্দ্র মোদী-ঝড়ের সামনেও তৃণমূল ৪৩ শতাংশ ভোট পেতে সমর্থ হয়। কিন্তু অনেক আসন হারিয়ে ফেলে বিজেপিতে কাছে। বিজেপি সেই উত্থানের উপর ভর করেই এবার ২০২১-এ তৃণমূল সরকারকে হারিয়ে বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু তৃণমূলকে বিধানসভা নির্বাচনে হারানোর মতো মুখের অভাবই বিজেপিকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
মুসলিম ব্যতিরিকে বাংলার যে ভোট বিজেপির লক্ষ্যে
লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তুলনায় অনেক বেশি লড়াই করছে বিজেপি। সাফল্যের হার ২০১৯-এর মতো রাখাই মস্তবড় চ্যালেঞ্জ। তারপর আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে বিজেপিকে। সেইমতো মুসলিম ভোট ব্যতিরিকে হিন্দু উচ্চবর্ণের ভোটের একটি বড় অংশ এবং অন্যান্য বর্ণ গোষ্ঠীগুলি সময়ের সাথে সাথে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে।
বিজেপি বনাম তৃণমূল লড়াই এবার শেয়ানে শেয়ানে
আর বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূল খানিক ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। ১৭ তৃণমূল বিধায়ক, একজন সাংসদ এবং একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট ছেড়েও বিজেপিতেও গিয়েছেন অনেক বিধায়ক ও নেতা-নেত্রী। শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়, তারাও বি্জেপিতে। তাই লড়াই এবার শেয়ানে শেয়ানে।
বামেই ভরসা রামের, নীল সাদাতেও 'লাল' রেখা! বাংলার রথের খেলায় শেষ পর্যন্ত জিতবে কে?