একদিকে 'বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ' বলছেন, অন্যদিকে আবার রায়গঞ্জ 'ঋণ' চাইছেন; এমন কেন দিদি?
প্রায়ই তাঁর এবং তাঁর দলের অন্যান্য হোতাদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে "বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ" স্লোগান। অর্থাৎ, এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি আসনেই ঘাসফুলের পতাকা ওড়াতে চায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রায়ই তাঁর এবং তাঁর দলের অন্যান্য হোতাদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে "বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ" স্লোগান। অর্থাৎ, এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি আসনেই ঘাসফুলের পতাকা ওড়াতে চায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপিকে রাজ্যের মাটিতে দাঁত ফোটাতে না দিতে পারার সবরকম বন্দোবস্ত করে রাখতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সেই জন্যেই বারংবার তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা বলে চলেছেন "বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ"।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে নির্বাচনী প্রচার করতে গিয়ে বললেন "এবারে রায়গঞ্জটা দিন। ভিক্ষা নয়, ঋণ চাইছি।" ইতিহাসগতভাবে কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টদের গড় রায়গঞ্জে ওই দু'টি দল কোনও কাজই করেননি বলে তিনি দাবি করেন।
অতএব, এবার রায়গঞ্জ ভোট দিক নতুন কোনও দলকে।
একদিকে "বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ" স্লোগান তুলে তারপর রায়গঞ্জের ভোটারদের কাছে "রায়গঞ্জ দিন" আর্তি পেশ করার মধ্যে বেশ স্ববিরোধিতা রয়েছে। আর এই স্ববিরোধিতার প্রধান কারণ শাসকদলের নিজের মরিয়া অবস্থানই।
উত্তরবঙ্গে এখনও তৃণমূল একক বড় শক্তি নয়
জননেত্রী এবারকার লড়াইকে মোটামুটি 'ভগবান-বনাম-শয়তান'ধর্মী করে ফেলার দরুন একথা বুঝেও বুঝছেন না যে খোদ বাংলার মাটিতেই এখনও অনেক জায়গায় তাঁর দলের প্রভাব সম্পূর্ণ আকার নেয়নি। দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল একচ্ছত্র অধিপতি হলেও মধ্য ও উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গাতে এখনও তারা সেভাবে বলিষ্ঠ নয়। সেসব স্থানে সাংগঠনিক জোর নয়, তৃণমূলের প্রধান ভরসা কংগ্রেস এবং বামেদের বিক্ষুব্ধের দলবদল। রায়গঞ্জে গত লোকসভা নির্বাচনে এলাকার প্রয়াত জননেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ভাইকে দাঁড় করিয়ে তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সির মুখের গ্রাস কেড়ে নেয় তৃণমূল, জিতে যায় সিপিএম। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়া লাল আগরওয়ালের তৃণমূলে যোগ দেওয়া এবং গতবছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের বেশ কিছু ঘাঁটিতে শাসকদলের জয় এবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশান্বিত করতেই পারে। কিন্তু গতবার চতুর্থ স্থান পাওয়া তৃণমূলকে প্রথম স্থান পেতে গেলে যে বেশ শক্ত লড়াই লড়তে হবে রায়গঞ্জে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
এইমস না হওয়ার দুঃখ কি রায়গঞ্জ ভুলে যাবে?
মমতাদেবী এবারে তাঁর জাতীয় স্বপ্নকে সফল করতে এতটাই মরিয়া হয়ে লড়ছেন এবং বিজেপির হঠাতে বদ্ধপরিকর যে ছোটোখাটো দুর্বলতাগুলি তিনি উপেক্ষা করেই চলছেন। দু'হাজার ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে একক প্রচেষ্টায় তৃণমূলকে জিতিয়েছিলেন দুর্নীতির নানা অভিযোগের মধ্যেও, এবারেও তাই চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে রায়গঞ্জে প্রস্তাবিত এইমস হাসপাতাল না হওয়াতে একটি আক্রোশ রয়েছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। বছর সাতেক আগে মমতা পরিষ্কার বলেন যে এইম্স নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি না থাকলেও প্রকল্পটির জন্যে জোর করে জমি অধিগ্রহনের তিনি বিপক্ষে। তাঁর সেই অবস্থান মমতার রায়গঞ্জ জেতার প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত জল ঢালতেই পারে।
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে হারানো এবং জাতীয় রাজনীতিতে ৪২টি আসন জিতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে তৃণমূল কোমর বেঁধে নামলেও শেষ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের কতগুলি আসন তারা জিততে পারে, ২৩ মে-র অন্যতম বড় আকর্ষণের বিষয় হবে সেটাই।