মুকুলের অভাব টের পাচ্ছেন মমতা, একুশের ভোট-কৌশল নিরূপণে ভরসা প্রশান্ত-য়
মমতার তৃণমূলে মুকুল রায় শুধু সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই ভোট ম্যানেজার। ২০টা বছর ধরে নিজের হাতে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এখন তাঁর অভাব বড্ড বোধ করছেন বুঝি মমতা।
তৃণমূল ছাড়ার পর মুকুল রায় দাবি করেছিলেন, দলটা আসলে তাঁরই। তিনি তাঁর দলে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সে যাই হোক, মমতার তৃণমূলে মুকুল রায় শুধু সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই ভোট ম্যানেজার। ২০টা বছর ধরে নিজের হাতে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এখন তাঁর অভাব বড্ড বোধ করছেন বুঝি মমতা।
একা মুকুল রায়ই যথেষ্ট
অন্তত প্রশান্ত কিশোরের মতো দক্ষ ভোট কৌশলীকে বাংলায় রাজনীতিতে ব্যবহার করার পরিকল্পনার মধ্যে সেই ছাপ রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনে হারার পর সত্যিই মুকুল-ফ্যাক্টর প্রকট হয়ে উঠেছে। এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফিরেও তাকাতে হয়নি সংগঠনের দিকে। একা মুকুল রায়ই যথেষ্ট ছিল সংগঠনে।
মুখ থুবড়ে পড়ল তৃণমূল
আর ১৯৯৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত যে সমস্ত নির্বাচন হয়েছে মুকুল-জমানায়, সব নির্বাচনেই উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে তৃণমূলের। মুকুল-বিহনে প্রথম নির্বাচনেই মুখ থুবড়ে পড়ল তৃণমূল। মুকুল রায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তারপর বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। আর বড় নির্বাচন বলতে ২০১৯-এর লোকসভা।
জোর ধাক্কা দিলেন মুকুল রায়
পঞ্চায়েত কোনওরকমে উতরে গেলেও, লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোর ধাক্কা দিলেন মুকুল রায়। যেমন কথা তেমন কাজ। ২ থেকে বেড়ে এক ধাক্কায় ১৮ সাংসদ। বাংলায় প্রথমবারের জন্য বিজেপির উত্থান হল। আর সেই উত্থানেই নড়ে গেল তৃণমূল। এই নির্বাচন আরও প্রকট করে দিল তৃণমূলে মুকুলের অভাব।
বিশাল দায়িত্ব পালন করতেন
মুকুল রায় যে তৃণমূল কংগ্রেসে যে বিশাল দায়িত্ব পালন করতেন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল লোকসবা নির্বাচন। তৃণমূলের চাণক্য বলে তিনি পরিগণিত হতেন। আবার কৌটিল্য নামেও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। কারণ তিনি ঘরে বসে যো অঙ্ক কষে দিতেন, তাই রূপায়িত হত বুথে বুথে।
নিজের পায়ে নিজে কুড়ল
এহেন মুকুল রায়কে দলে কোণঠাসা করে দিয়ে যে তৃণমূল নিজের পায়ে নিজে কুড়ল মেরেছে, তা বলাই বাহুল্য। আর শুধু দলে কোণঠাসা করে পদত্যাগে বাধ্য করাই নয়, সেই মুকুল রায় তৃণমূলকে শায়েস্তা করার ভাবনা নিয়েই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তিনি তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়েই তৃণমূলকে ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছেন।
একই পদ্ধতিতে ভাঙছে তৃণমূল
ঠিক যেভাবে মুকুল রায় কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, একই কায়দায় তৃণমূল ভেঙে বিজেপি গড়ছেন। লোকসভা ভোটের আগে বলেছিলেন, একটা নির্বাচনে জয়ের পরই তৃণমূল ভাঙন ধরে যাবে। সেইমতো লোকসভায় বিপুল জয় পাওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল ভাঙছে। মুকুল রায়ের দাবি ছিল, তৃণমূলের উপরটা সাজানো আছে ভিতরে ঘূণ ধরে যাচ্ছে।
কৌশলী ঠিক করে ফেলেছে তৃণমূল
এই পরিস্থিতিতেই মুকুলের পরিবর্তে দলে একজন কৌশলী ঠিক করে ফেলেছে তৃণমূল। ২০১৪-য় যাঁর মস্তিষ্কের উপর ভর করে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই প্রশান্ত কিশোরকে এনে মুকুলের অভাব দূর করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই পরিস্থিতিতে মুকুল রায় বাণ হানলেন, প্রশান্ত কিশোরকে দুশো কোটি টাকা দিয়ে নিয়োগ করার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত।