তারকেশ্বরে মহা ধুমধাম করে পালিত শিবরাত্রি, নামল ভক্তদের ঢল
তারকেশ্বরে মহা ধুমধাম করে পালিত শিবরাত্রি, নামল ভক্তদের ঢল
শিবরাত্রি উপলক্ষে তারকেশ্বর শিব মন্দিরে সকাল থেকেই অগণিত ভক্তের ঢল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ভিরও। সারা বছর তারকেশ্বর মন্দিরের পুণ্যার্থীদের আগমন থাকলেও শিবরাত্রি উপলক্ষে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর আগমন হয় তারকেশ্বরে।
এদিন মন্দিরের পূজারি জানান, সারা বছরই রাজ্য সহ ভিন রাজ্যের পুণ্যার্থীরাও এখানে ছুটে আসেন বাবার মাথায় জল ঢালতে। চলতে থাকে ভক্তের আনা গোনাও। কিন্তু এই সময় তারকেশ্বর শিব মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালতে আরও বেশি বেশি ভক্তের সমাগম হয়। তিনি জানান, মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার জন্য অনেকে শেওড়াফুলি থেকে পায়ে হেঁটে জল নিয়ে আসেন তারকনাথের মাথায় জল ঢালতে। বছরের এই একটা দিন মন্দির দিবারাত্র খোলা থাকে।
জানা গিয়েছে, এইদিনে কোনও পুজোর ভোগ হয়না। তবে ফল, দুধ, ঘি, মধু ও মিষ্টান্ন নিবেদন করা হয়। এই শিবরাত্রির দিনে পার্বতী স্বপ্নাদেশে শিবের দেখা পেয়েছিলেন। এই দিনেই শিব পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও মন্দিরের গেটে চলছে নিরাপত্তারক্ষীদের তল্লাশি। পুণ্যার্থীদের চেকিং করেই ঢোকানো হচ্ছে মন্দিরের ভিতর। যাঁরা মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করবেন তাঁদেরকে বিশেষভাবে চেকিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে । অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীদের রাখা হয়েছে। মন্দির চত্বর এবং মন্দির এলাকার বাইরেও সমস্ত এলাকা সিসি ক্যামেরা আওতাভুক্ত রয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশ ও মহিলা পুলিশ রাখা হয়েছে।
ইতিহাস বলছে, হুগলি জেলার এই মন্দিরের ইতিহাস অতি প্রাচীন। বিষ্ণুদাস নামে জনৈক শিবভক্ত অযোধ্যা থেকে হুগলিতে এসে সপরিবারেই সেখানে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। খানিকটা একঘরে হয়েই বাস করতেন বিষ্ণুদাস। পরিস্থিতি এমনটাই হয়ে দাঁড়ায় যে, বিষ্ণুদাসকে স্থানীয় মানুষ বাধ্য করে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে যে, তিনি সৎ মানুষ। বিষ্ণুদাসকে তপ্ত লোহার একটি দণ্ডকে খালি হাতে ধরতে বলা হয়। তিনি তা-ই করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সেই সঙ্গে মনে গভীর যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকেন। তিনি তাঁর ইষ্টদেবতা মহাদেবকে ডাকতে থাকেন এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য।
কয়েকদিন পরে বিষ্ণুদাসের ভ্রাতা স্থানীয় জঙ্গলে এক আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করেন। তিনি দেখেন, গরুরা প্রতিদিন জঙ্গলের একটি বিশেষ স্থানে গিয়ে দুধ দিয়ে আসে। তিনি এই স্থানে গিয়ে একটি পাথর দেখতে পান। এই সময়েই বিষ্ণুদাস স্বপ্নাদেশ পান যে, জঙ্গলে তাঁর ভাইয়ের দেখা ওই পাথরটিই মহাদেবের তারকেশ্বর রূপ। সেখানে বিষ্ণুদাস একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এবং সেই স্থানই তারকেশ্বর ধাম নামে পরিচিত হয়।