রায়গঞ্জ: দীপা কি পারবেন কংগ্রেসের পুরোনো দূর্গ ফের জিততে? কাজটা সহজ নয়
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে রায়গঞ্জ বরাবরই একটি উল্লেখযোগ্য নাম। নির্বাচন-উপনির্বাচন মিলিয়ে উত্তর দিনাজপুরের এই কেন্দ্রটিতে আজ পর্যন্ত কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ১৩বার।
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে রায়গঞ্জ বরাবরই একটি উল্লেখযোগ্য নাম। নির্বাচন-উপনির্বাচন মিলিয়ে উত্তর দিনাজপুরের এই কেন্দ্রটিতে আজ পর্যন্ত কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ১৩বার। এমনকী, ১৯৭১-৭২ সালের নির্বাচনে রায়গঞ্জ থেকে জেতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ও। ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্টদের কাছ থেকে এই আসন ফের কংগ্রেসের কাছে ছিনিয়ে নিয়ে আসেন প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর স্ত্রী দীপাদাশমুন্সি ওই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। এক মেয়াদ (২০০৯-২০১৪) পূর্ণ করার পরে অবশ্য প্রিয়জয়া পরাজিত হন সিপিএম-এর মহম্মদ সেলিমের কাছে; হারের ব্যবধান ছিল মাত্র ১,৬৩৪ এবং তার অন্যতম কারণ তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাশমুন্সি পরিবারেরই সত্যরঞ্জনকে (প্রিয়র ভাই) মনোনীত করা এই কেন্দ্রে যার ফলে কংগ্রেসের ভোটবাক্সে দেখা দেয় ফাটল।
এবারেও ফের লড়াইতে দীপা দাশমুন্সি এবং তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ প্রয়াত স্বামী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সম্মান পুনরুদ্ধার করা। ২০০৯ সালে দীপা রাজগন কেন্দ্রে সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়ে জিতলেও গতবার তাঁর ভোটের সংখ্যা নেমে আসে তিন লক্ষ পনেরো হাজারের কিছু বেশিতে। অন্যদিকে, পবিত্ররঞ্জনের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ বিরানব্বই হাজারের কিছু বেশি। কংগ্রেসের তাই এবারের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের ভোটবাক্সের ঐক্যকে বজায় রাখা।
তৃণমূল দাঁড় করিয়েছে কানাইয়া লাল আগরওয়ালকে
তবে, চোদ্দ সালের মতো এবারও দীপার লড়াই সহজ হবে না। কারণ, তৃণমূল এবারেও দাঁড় করিয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা কানাইয়া লাল আগরওয়ালকে। পূর্বে ইসলামপুরের কংগ্রেস বিধায়ক কানাইয়া লাল যে দীপার ভোটব্যাঙ্কে যে বড়সড় আঘাত হানতে পারেন, তা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউই। তার উপরে, এবারে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সঙ্গে কোনও জোট না হওয়াতে দীপার নিজের গড়েও তাঁর জয় সুরক্ষিত তা হলফ করে বলেন রাজি নন অতি বড় বিশেষজ্ঞও। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কংগ্রেস তাদের প্রচুর আসন খোয়ায় তৃণমূলের কাছে।
কংগ্রেস রায়গঞ্জে এখন দুর্বল, বলছেন বাম প্রার্থী
রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদ মহম্মদ সেলিম তো বলেই দিয়েছেন সরাসরি যে দীপা দাশমুন্সির সমর্থনে এখন অনেকটাই ভাঁটা পড়েছে, কারণ কংগ্রেস থেকে অনেকেই এখন তৃণমূলে গিয়ে নাম লেখাচ্ছেন। উল্টে, সেলিমের শক্তপোক্ত দাবি যে তিনি সাংসদ হিসেবে রায়গঞ্জে যে কাজ করে দেখিয়েছেন গত পাঁচ বছরে, তাতে বামেদের এখানে ফের জেতার সম্ভাবনাই বেশি।
[আরও পড়ুন:প্রথম দফায় ভোটের সময় নিয়ে নির্দেশিকা জারি! বাংলায় ভোট শুরু ৭ টা থেকে]
বিজেপির হাতিয়ার গতবছরের দাঁড়িভিট স্কুলকাণ্ডে ছাত্রমৃত্যু
অন্যদিকে, বিজেপি এবার রায়গঞ্জে দাঁড় করিয়েছে দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবশ্রী চৌধুরীকে। গতবার এই কেন্দ্রে পদ্মবাহিনীর অভিনেতা-প্রার্থী নিমু ভৌমিক দুই লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেন। আর এইবারে দাঁড়িভিট ছাত্রমৃত্যুকাণ্ডের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে হিন্দু ভোটের একত্রিত হওয়ার উপরে ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিজেপি। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে বাম-কংগ্রেস জোট হোক বা না হোক, তাদের কিছু অসুবিধে হবে না। বিজেপির ধারণা, ঐরকম কিছু হলে আখেরে ঝুলি ভরবে তাদেরই কারণ কংগ্রেস বা বামেদের গোঁড়া সমর্থকরা কখনই একে অপরের দিকে ঝুঁকবে না।
উত্তরবঙ্গের ওই অঞ্চলে তৃণমূলের শক্তি এতদিন সেভাবে না গড়ে উঠলেও রাজ্যের শাসকদল অবশ্য দমবার পাত্র নয়। বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশটাই পাওয়ার লক্ষ্যে অটল তৃণমূলের কাছে সাংগঠনিক দুর্বলতা ইত্যাদি ব্যাপার এই মুহূর্তে গৌণ।
পারবে কী তৃণমূল রায়গঞ্জে যারা অতীতে ছড়ি ঘুরিয়েছে, সেই কংগ্রেস এবং বামেদের পরাস্ত করে আসনটি জিতে নিতে?
রায়গঞ্জে এবারে ভোট ১৮ এপ্রিল এবং ফলাফল ২৩ মে।