বিজেপিতে আর ‘তারকা’ নন লকেট! ব্রাত্য আরও অনেকে, জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে
বিজেপিতে আর ‘তারকা’ নন লকেট! ব্রাত্য আরও অনেকে, জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে
বিজেপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়ে আগেই। ক্রমেই তালিকা লম্বা হচ্ছিল। তার মধ্যে এক বিদ্রোহী জয়প্রকাশ মজুমদার তল্পিতল্পা গুছিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তা বেল বিদ্রোহ কমেনি বিজেপিতে। শান্তনু ঠাকুররা এখনও রয়েছেন গোঁসা ভরে। আর বিদ্রোহীদের তালে তাল ঠুকেছেন লকেটও। সেই লকেট-শান্তনুরা 'হেভিওয়েট' মর্যাদা খোয়ানোয় উঠেছে প্রশ্ন।
সবার থেকে বেশি আলোচিত হচ্ছেন লকেট
তবে কি জয়প্রকাশের পরও আরও অনেকে লাইনে রয়েছেন? লকেট চট্টোপাধ্যায় জয়প্রকাশ মজুমদারের তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা করলেও শান্তনু ঠাকুর, রীতেশ তিওয়ারিরা কেউই মুখ খোলেননি। মুখ খোলেননি আরও এক বিদ্রোহী সায়ন্তন বসু বা রাজু মুখোপাধ্যায়রাও। তবু সবার থেকে বেশি আলোচিত হচ্ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়।
আসন্ন উপনির্বাচনে লকেট বিজেপির প্রচারক নন
সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে বিজেপিক সাফল্য এনে দিয়েছেন লকেট। তারপর তিনি দিল্লিতে বড় দায়িত্ব পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে রাজনীতির অলিন্দে কান পাতলেই। কিন্তু বঙ্গ বিজেপিতে তিনি ব্রাত্য। তাঁকে রাখা হয়নি বঙ্গ বিজেপির তারকা প্রচারকের তালিকায়। আসন্ন উপনির্বাচনে লকেটকে বিজেপির প্রচারক হিসেবে দেখা যাবে না ফলে।
বঙ্গ বিজেপি লকেটকে গুরুত্ব না দেওয়ায় প্রচারে ব্রাত্য
বিজেপির তারকা প্রচারকের তালিকা প্রকাশের পর বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তালিকায় নাম নেই মানে দল আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ইচ্ছা থাকলেও আমি প্রচারে অংশ নেব না। প্রচার নিয়ে তাঁর সঙ্গে দলের দুই সাংসদের কথা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, সংসদের অধিবেশন চললেও তিনি ছুটির দিনগুলিতে প্রচারে যাবেন। কিন্তু বঙ্গ বিজেপি তাঁকে গুরুত্ব না দেওয়ায় প্রচার করবেন না।
বিজেপির এই ব্যবহারে ক্ষুণ্ণ লকেট চট্টোপাধ্যায়
বাংলায় দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য সম্প্রতি বিজেপি ৪০ জন প্রচারকের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় লকেট ছাড়া আরও অনেকে ব্রাত্য রয়েছেন। লকেটকে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গুরুত্ব দিয়ে ভিননাজ্যে সহ পর্যবেক্ষক করে পাঠালেও তাঁর নিজের রাজ্য তিনি ব্রাত্য। তাই তাঁকে নিয়ে ফের জল্পনার পারদ চড়েছে। তিনি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছিলেন আগেই। ফের তিনি বিজেপির এই ব্যবহারে ক্ষুণ্ণ।
আমার নাম নেই মানে নেতৃত্বের কোনও নির্দেশ নেই!
আসানসোল উপনির্বাচনে এবার প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যের আর এক সাধারণ সম্পাদিকা অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি দক্ষিণ আসানসোলের বিধায়ক। এবার তিনি আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন। আর বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন কেয়া ঘোষ। লকেট বলেন, আমাদের দলে ইচ্ছামতো কিছু করা যায় না। দলীয় নির্দেশ মান্য করতে হয়। তাই তালিকায় আমার নাম নেই মানে নেতৃত্বের কোনও নির্দেশ নেই। তাই আমি প্রচারে নামছি না।
উপনির্বাচন এমনকী পুর-নির্বাচনেও ব্রাত্য ছিলেন লকেট
লকেট নিজেই বঙ্গ বিজেপিতে তিনি গুরুত্বহীন বলে মনে করছেন। এরপর লকেটকে নিয়ে বিজেপিতে জল্পনা আরও বাড়বে বলই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তিনি বঙ্গ বিজেপি থেকে দূরে দূরে থাকছেন। কোনও উপনির্বাচন এমনকী পুরসভা নির্বাচনেও তিনি রাজ্যে প্রচার করেননি। আবারও তিনি ব্রাত্য থাকলেন।
বঙ্গ বিজেপির বৈঠকে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার লকেট
এর মাঝে আবার বঙ্গ বিজেপির ডাকা বৈঠকে গিয়ে তিনি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখে চলছেন বলে মনে করে দলের শাসকগোষ্ঠী। সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া জয়প্রকাশ মজুমদার থেকে শুরু করে সায়ন্তন বসু, রীতেশ তিওয়ারিদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ।
বিজেপিতে চোরা স্রোত তৈরি হয়েছে ভিতরে ভিতরে
শুধু লকেট চট্টোপাধ্যায় একা নন, আসন্ন দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির তারকা প্রচারকের তালিকায় নেই কেন্দ্রীয়মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এই তালিকা নিয়ে বিজেপি এখন মুখে কুলুপ এঁটেছে। এটা সাংগঠনিক বিষয় বলে অনেকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিজেপির অন্দরের কলহ বারবার সামনে চলে আসছে এই ঘটনা পরম্পরায়। এটা দলের সিদ্ধান্ত বলে সবাই এড়িয়ে গেলেও বিজেপিতে চোরা স্রোত তৈরি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিদ্রোহী বাড়ায় বিজেপিতে ভাঙন জল্পনা প্রকট
তাই বিজেপিতে ভাঙন জল্পনা রয়েই যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের মধ্যে জয়প্রকাশ মজুমদার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এখনও শান্তনু ঠাকুর-সহ মতুয়া গড়ের বিধায়করা কোন পথ অবলম্বন করবেন, তা বলা যাচ্ছে না। তারপর বিজেপির আদি নেতা সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রীতেশ তিওয়ারিরা এখন কী ব্যবস্থা নেন, তা বলবে ভবিষ্যৎ।