এক্সিট পোলের পরিসংখ্যান সত্যি হলে বামেদের সর্বনাশ। লোকসভার ইতিহাসে ঘটে যাবে বেনজির ঘটনা
এক্সিট পোল সত্যি হলে বামফ্রন্টের সর্বনাশ। বাংলা থেকে কার্যত মুছে যেতে চলেছে বামেরা। বামেরা ব্রিগেডে লোক জড়ো করলেও, সেই ভোটকে ভোটবাক্সে নিয়ে যেতে ব্যর্থ।
এক্সিট পোলের পরিসংখ্যান সত্যি হলে বামফ্রন্টের সর্বনাশ। বাংলা থেকে কার্যত মুছে যেতে চলেছে বামেরা। বামেরা ব্রিগেডে লোক জড়ো করলেও, সেই ভোটকে ভোটবাক্সে নিয়ে যেতে ব্যর্থ। উল্টে বামের ভোট যে 'রামে'র ভোট বাক্স পড়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে এক্সিট পোল মিললেই। এই প্রথম বামফ্রন্ট শূন্য হয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে।
এই পশ্চিমবঙ্গেই ৩৪ বছর শাসন করেছে বামফ্রন্ট। বাম আমলের ৩৪ বছরে তারা রেকর্ড আসন পেয়ে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। সর্বোচ্চ ৩৭টি আসন পেয়েছিল বামেরা। এবার সেই বামেরাই শূন্য হয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু কেন এই অবস্থা হল বামেদের? মাত্র ৮ বছরে সংগঠন ভেঙে তছনছ হয়ে গেল?
এর জন্য অবশ্যই দায়ী নেতৃত্বের সংকট। নেতৃত্বের সংকটে বামফ্রন্টের ক্যাডাররা এখন পদ্মমুখী। ভোট-ব্যাঙ্ক ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। নেতারা এখনও কমিউনিজমের গেরোয় আটকে থাকলেও সাঙ্গ-পাঙ্গরা সবাই অন্য আস্তানা বেছে নিয়েছেন। ৩৪ বছর শাসন করেও তৃণমূলের এক ধাক্কায় বামেরা লিলিপুটে পরিণত হল।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনেও সিপিএম ৪২টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটি আসন লাভ করে। এক রায়গঞ্জ, দুই মুর্শিদাবাদ। এই দুটিতেই কোনওরকমে জয় পেয়েছিল বামেরা। রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিম মাত্র ১৬০০ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। কংগ্রেস আর তৃণমূলের ভোট কাটাকাটির সুযোগে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সেলিম।
তেমনই মুর্শিদাবাদে বামেদের জয়ের পিছনে ছিল কংগ্রেসের কোন্দল। তারপর এমন কোনও নির্বাচনী কৌশল বাম পার্টি আমদানি করতে পারেনি, যা দিয়ে ফের কামব্যাক করতে পারে সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো পার্টিগুলি। শুধু বাংলাতেই কিন্তু নয়, বামেদের শোচনীয় হাল গোটা ভারতেই।
ত্রিপুরাত ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে গেরুয়া পার্টি ক্ষমতায় এসেছে। এখন শুধু টিমটিম করে জ্বলছে কেরালায়। সেখানে লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে। এবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই কেরালাতেও ধরাশায়ী হওয়ার সম্ভাবনা। এক্সিট পোল ঠিক হলে, গোটা দেশে বামেরা ১০টি আসন পাবে কি না সন্দেহ। আর বাংলায় তো শূন্য হয়ে যেতে পারে বামেরা।
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম যতই কামব্যাকের বুলি আওড়াক, সংগঠনকে বাড়াতে পরেনি। সিপিএমের সদস্য ছিল ২.৬৫ লক্ষ সদস্য। নতুন করে সেইসব সদস্যের প্রত্যেকের সদস্যপদ নবীকরণ হয়নি। সংগঠিত তো দূর অস্ত ২০১৭ সালের পর থেকে পার্টি ছাড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নিষ্ক্রিয় ক্যাডারের সদস্যপদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় নেতৃত্ব।
তার ফলে এবার প্রায় ২৫ শতাংশ বুথে এজেন্টও দিতে পারেনি বামেরা। আর সবথেকে বড় ক্ষতি হল, নতুন নেতা না তৈরি হওয়া। জ্যোতি বসু, অনিল বিশ্বাস, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়দের পর বাংলাতে সেই মানের নেতা তৈরি হয়নি।