সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হলেও জনসংযোগে নন, একুশে ব্যর্থতার কারণ দর্শালেন বামেরা
সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হলেও জনসংযোগে নন, একুশে ব্যর্থতার কারণ দর্শালেন বামেরা
একুশের নির্বাচন আসলে সাম্প্রদায়িক শক্তির মধ্যে যুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। বামফ্রন্ট চিরকাল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছে। রাজনীতি যখন ধর্ম ও বর্ণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন কমিউনিজমের খুব স্বল্প জায়গা থাকে। তাই শত চেষ্টা করেও সাফল্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে! কতজন বিধায়ক-সাংসদ রয়েছেন তালিকায়, জল্পনা বাড়ালেন কুণাল
বিজেপিতে মোহভঙ্গ! তৃণমূলে ঘরওয়াপসির হিড়িক পড়তে চলছে একুশের ভোট শেষে
বাম রাজনীতি অবশ্য এখানেই শেষ হবে না
বামফ্রন্ট তথা সিপিএম এবার নতুন মুখ আনার জন্য প্রবীণ প্রার্থীদের আড়ালে করেছিল। প্রায় ৯০ জন তরুণ প্রার্থীকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল এবার। কিন্তু তারা ভোটে আঁচড় কাটতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রাক্তন বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, বাম রাজনীতি অবশ্য এখানেই শেষ হবে না। এটি আবার ফিরে আসবে। তবে নেতাদের অবশ্যই মানুষের হারানো বিশ্বাস ফিরে পেতে হবে।
দুটি সাম্প্রদায়িক দলের লড়াইয়ে প্রান্তিক শক্তি বামে
বামফ্রন্টের পক্ষে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লাও উপরিউক্ত মতামতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, দুটি সাম্প্রদায়িক দলের লড়াইয়ে প্রান্তিক শক্তি হয়ে উঠেছিল বামফ্রন্ট। কমিউনিস্ট পার্টি এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে আটকা পড়ে গিয়েছিল। রাজ্য বহু স্তরে মেরুকৃত হয়েছিল। ফলে আমরা প্রান্তিক শক্তি হয়ে গিয়েছি।
ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘুদের ভোট তৃণমূলের দিকে
তিনি বলেন, বিজেপিকে আটকাতে সংখ্যালঘু ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষেরা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। যদিও হিন্দু ভোটের বেশিরভাগ গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। আসলে, আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘুদের ভোট তৃণমূলের দিকে গিয়েছে। সিপিআইয়ের সন্তোষ রানা বলেছেন, বামফ্রন্ট রাজ্যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মেরুকরণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বামেরা
তাঁর কথায়, "বাংলায় নিরঙ্কুশ ধর্মীয় মেরুকরণ হয়েছে। আমরা কমিউনিস্ট হিসাবে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ের দ্বারা এই মেরুকরণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা আমাদের কর্মী-নেতাদের সমর্থন করতে পারিনি। যারা গত দশ বছরে রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছিল, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। তবে আমরা আবার লড়াই করে ফিরে আসব। আমরা শীঘ্রই ক্ষমতায় ফিরতে না পারলেও আমরা অবশ্যই একটি বড় শক্তি হিসাবে বাংলার রাজনীতিতে ফিরে আসব।
জনগণের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন বামেদের
তবে বামেরা সাম্প্রদায়িক শক্তির লড়াই বা ভোট মেরুকরণের দোহাই দিলেও বাম দলগুলি যে মানুষের কাছে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে, ভোটারদের সংস্পর্শে আসতে পারেনি, তাও স্বীকার করে নিয়েছে। নিজেদের ব্যর্থনা মেনে নিয়ে তাঁরা বলেছেন, বাম প্রার্থীরা মানুষের দরবারে পৌঁছতে পারেনি এবং বাংলার পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অধ্যয়ন করেনি।
বামেরা অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে একুশের নির্বাচনে, তবু আলোর রেখার খোঁজ চলছে
সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়, জনসংযোগে নন
বামেরা উপলব্ধি করেছে, তরুণ মুখগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়, কিন্তু সমাজে ততটা সক্রিয় নয়। নেতারা ফেসবুক বা টুইটারের মাধ্যমে তাঁদের বেস তৈরি করতে পারবেন না। তাঁদের মাটিতে নেমে বেস তৈরি করতে হবে। রাজনীতেত নবাগত তরুণ-তুর্কি নেতাদের সেই কাজটা করতে হবে বলে মনে করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সিনিয়র নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়।
বাংলার বিধানসভা একুশের নির্বাচনে বামফ্রন্ট-শূন্য
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ 'বাম-মুক্ত' হয়েছে। একইসঙ্গে ৩৪ বছর ধরে রাজ্য শাসন করা কমরেডদের ভবিষ্যতের জন্য রোডম্যাপও তৈরি করে দিয়েছে এবারের নির্বাচন। নির্বাচনের ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপিকে দু-হাত ভরে দিলেও কমিউনিজমের জন্য কোন স্থান রাখেনি। ফলাফল দেখে আর বিশ্বাসই করা যাচ্ছে না বামেরা ফিরতে পারে।
১৯৫২ সালের নির্বাচনের পর প্রথমবার বিধানসভা বামশূন্য
বামেরা শেষপর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে ফিরে যায় না।। কিন্তু বেঙ্গল কমরেডদের জন্য সেই সামান্য জায়গাটুকুও রাখেনি একুশের নির্বাচন। ১৯৫২ সালের নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট শূন্য হয়ে গিয়েছে বিধানসভায়। এতদিন মনে হচ্ছিল বামপন্থীরা যে কোনও সময় ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে। এবার যেন বামেদের কোনও সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না।
বিজেপি এখন প্রাক্তন তৃণমূলীদের লড়াইয়ের মঞ্চ! শুভেন্দুর উত্থানে মুকুল-ঘনিষ্ঠরা ব্যাকফুটে
২০১১-য় ৬২, ১০ বছরেই শূন্যে নেমে এসেছে বামেরা
২০১১ সালে বামপ্রন্টকে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্য ক্ষমতায় এসেছে। বামফ্রন্ট ২০১১ সালে ৬২টি আসন জিতেছিল। আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার পরে ২০১৬ সালে তা ৩২-এ নেমে এসেছিল। আর ২০২১-এ কিছুই নেই। শূন্য। বামফ্রন্টের হারানো জায়গা নিয়েছে বিজেপি। ভোটব্যাঙ্কেও চূড়ান্ত ধস নেমেছে।
বামেরা অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে একুশের নির্বাচনে, তবু আলোর রেখার খোঁজ চলছে
ভোট শতাংশ তলানিতে, আত্মবিশ্বাসও! বিশ্বাস কি ফিরবে
২০১১ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা। ২০১৬ সালে তা প্রায় ২০ শতাংশে নেমে এসেছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তা মাত্র পাঁচ শতাংশে নেমে গিয়েছে। বামফ্রন্ট নেতারা ভোটের আগে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও ভোটের ফল দেখে তাঁদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে গিয়েছে। বামপন্থীদের উপর কেন বিশ্বাস রাখল না বাংলার মানুষ? এর ব্যাখ্যায় বাম নেতারা বলেন, আমরা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছতে পারিনি। পতন অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল।
বিশ্বাস আছে, বিশ্বাস থাকবে নিশ্চিহ্ন হবে না তাঁরা
বাম নেতারা মনে করছেন, "আমরা আমাদের ক্যাডারকে তৃণমূলের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে পারিনি, তাই তাদের কেউ কেউ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং কেউ কেউ তৃণমূলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফলে আমাদের সংগঠনগুলি ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁরা কখনই পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হবেন না। বাংলায় সিপিএমকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। কমিউনিস্ট রাজনীতি বা বামপন্থী চিন্তাভাবনা কখনওই থেমে থাকে না। পুরনো মুখ সরিয়ে নতুন মুখ আনতে হবে।