বাম-কংগ্রেস আর সিদ্দিকির লক্ষ্য একই আসনে, একুশের নির্বাচনে ফায়দা লুটবে কি মহাজোট
বাংলায় মহাজোটের পথ চলা কি প্রভাব ফেলতে সমর্থ হবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে? পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়তে উৎসাহী হলেও রাজনৈতকি মহল কিন্তু এই জোটের প্রভাব নিয়ে ধন্দে রয়েছে। তার কারণ বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের যেসব আসনে শক্তিশালী, সেই সব আসনই দাবি করছেন পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি।

বাম-কংগ্রেস ও সিদ্দিকির লক্ষ্য একই জেলায়
বাম-কংগ্রেসের মূল শক্তি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত তিন জেলায়। মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর- এই তিন জেলায় বিশেষ করে কংগ্রেসের শক্তি এখনও শাসকদল তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে। সংখ্যালঘুরা সবাই এখনও কংগ্রেস থেকে সরে যায়নি, এটাই তার প্রমাণ। এই অবস্থায় পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নতুন দল গড়ে এই তিনি জেলাতেই বেশি আসন দাবি করছেন।

তৃণমূল বা বিজেপির কাছে বিরাট ফ্যাক্টর হবে জোট?
ফলস্বরূপ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা জোটের থিম যদি এটাই হয়, একুশের নির্বাচনে তৃণমূল বা বিজেপির কাছে বিরাট ফ্যাক্টর হবে না। মুর্শিদাবাদ, মালদহ বা উত্তর দিনাজপুরে এতদিন কংগ্রেস বা সিপিএমকেই বেশি আসনে জিততে দেখা গিয়েছে, এমনকী ২০১১ ও ২০১৬ সালেও তাঁদের বেশিরভাগ আসন ছিল ওই তিন জেলায়।

সিদ্দিকি তিন জেলা থেকেই বেশি আসনের ভাগ চান
এখন আব্বাস সিদ্দিকি যদি ওই তিন জেলা থেকে আসন ভাগ পান, তাহলে সেই আসন জিততে পারে মহাজোট। কিন্তু তৃণমূলের খুব বেশি ক্ষতি হবে কি। তবে সামান্য ক্ষতি হলে তৃণমূলেরই হবে। কিছু আসনে ভোট কাটাকাটিতে বিজেপিও বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আদতে মহাজোট সে অর্থে প্রভাব ফেলতে পারবে না।

বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকির জোট হলে
তবে আব্বাস সম্প্রতি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট তৈরি করার পর ফলাও করে জানিয়ে দিয়েছেন, মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি তাঁকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন। আর বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে আব্বাস সিদ্দিকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় বলে পরিচিত দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারেও প্রার্থী দেবেন।

যদি শুধু স্ব-স্ব দলের কথাই ভাবা হয়...
কংগ্রেসও সিদ্দিকির সঙ্গে জোট চেয়ে হাইকম্যান্ডকে চিঠি লিখেছিল। আর বামেদের চিঠি দিয়েছে আব্বাস সিদ্দিকি স্বয়ং। ফলে তাঁরা গাঁটছড়া বাঁধতেই পারে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা না করে যদি শুধু স্ব-স্ব দলের কথাই ভাবা হয়, তাহলে জোটের প্রভাব লঘু হয়ে যাবে। আদতে লড়াই দাঁড়াবে তৃণমূল বনাম বিজেপির।

একই আসন আর একই ভোট নিয়ে কাড়াকাড়ি হবে
কংগ্রেস যেমন সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটের উপর ভিত্তি করেই তিন জেলায় সিংহভাগ আসন পায়, তেমনই বামফ্রন্টও সংখ্যালঘু মুসলিম-সহ, আদিবাসী, দলিত, তফশিলি ভোট পায়। আব্বাস সিদ্দিকি আবার সংখ্যালঘু ভোট বলতে পাশাপাশি তফশিলি, দলিত, আদিবাসীদেরও টার্গেট করেছেন। ফলে একই আসন আর একই ভোট নিয়ে কাড়াকাড়ি হবে জোটের তিন দলের।

তিন দলেরই লক্ষ্য এক, প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জে ফেলা কঠিন
বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই আব্বাসের। বাম-কংগ্রেসের লড়াইও বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারপর কংগ্রেস ও বামেরা আগ্রহ দেখিয়েছে তাঁদের সঙ্গে জোটে। তাই এই জোটে তাঁরাও আগ্রহী। কিন্তু আসন আর ভোটে লক্ষ্য যখন জোটের তিন দলেরই এক, তখন প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জে ফেলা কঠিন।