বাঙালির মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী জায়গা লতার, বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি আমৃত্যু ছিলেন শ্রদ্ধাশীল
বাঙালির মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী জায়গা লতার, বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি আমৃত্যু ছিলেন শ্রদ্ধাশীল
ভারতীয় সঙ্গীত জগতের সম্রাজ্ঞী তিনি। বাংলা গানেও ছিল তাঁর বিশেষ দখল। সেখানেও তিনি সাফল্যের সরণিতে উত্তরণের গল্পগাথা রেখে গিয়েছিলেন। শুধু হিন্দি জগতেই নয়, বাংলা সঙ্গীতজগতেও বহু অসাধারণ গান তিনি উপহার দিয়েছেন। তাঁর কণ্ঠ-মাধুর্যে মোহিত হয়েছে আপামর বাঙালি। আজও তাঁর কালজয়ী গান বাঙালির মনের মণিকোঠায় বাঁধানো রয়েছে।
লতার ‘কোকিলা’-কণ্ঠে কালজয়ী বাংলা গান
বাংলার সঙ্গে তাঁর তো আজকের সম্পর্ক নয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে যে কালজয়ী গান লতা মঙ্গেশকর গেয়েছিলেন আনন্দমঠে, সেই বন্দেমাতরমের সৌজন্যে বাংলার সঙ্গে গেঁথে গিয়েছিল লতা মঙ্গেশকরের নাম। শুধু বোম্বে বা মুম্বইয়ে নয়, কলকাতা তথা বাংলাতেও সাড়া ফেলে দিয়েছিল সেই গান। তার সূত্র ধরে বাংলায় পা রেখেছিলেন লতা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে তিনি বাংলা গানও উপহার দিয়েছেন তাঁর ‘কোকিলা'-কণ্ঠে। তিনি গেয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। শান্তিনিকেতনের সঙ্গেও গড়ে উঠেছিল তাঁর সম্পর্ক।
৩০ হাজারেরও বেশি গান ৩৬টি ভাষায়
বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে। লতার সঙ্গীত জগতে পা দেওয়ার পর আট দশক অতিবাহিত। আজও তাঁর গান বেজে চলেছে। আজও নিঝুম সন্ধ্যার পান্থ পাখিরা তাঁর গান শুনে পথ খুঁজে পায়, আজও তাঁর গানে আকাশ প্রদীপ জ্বলে ওঠে। আজও রঙ্গিলা বাঁশিতে মন হারিয়ে যায়। তিনি ৩০ হাজারেরও বেশি গান ৩৬টি ভাষায় উপহার দিয়েছে। শুধু বাংলা বা ভারত নয়, বিশ্বের ভিন্ন রাজ্যেও তাঁর গান স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
লতার সব গানেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বাঙালির মন
মোট ১৫০টি ভিন্ন সুরে বন্দেমাতরম গান হয়েছিল। কিন্তু বাঙালি তথা ভারতবাসীর মনে চিরকালীন স্থান করে নিয়েছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর করা লতা মঙ্গেশকরের সেই গান। যে গান ব্যবহার করা হয়েছলি আনন্দমাঠ ছবিতে। তারপর বহু গান লতা মঙ্গেশকর গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, রবীন চট্টোপাধ্যায়, সুধীন দাশগুপ্ত, সলিল চৌধুরী, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়দের সুরে। সব গানেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বাঙালির মন।
হেমন্ত-লতার দাদা-বোনের সম্পর্ক, বেলাকে খাইয়েছিলেন সাধ
লতা মঙ্গেশকর সবথেকে বেশি গান গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যাযের সুরে। পরিচয় হওয়ার পর থেকে হেমন্তদার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অবিনশ্বর। একেবারে ঘরোয়া সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁদের। দাদা-বোনের সম্পর্কই শুধু নয়, হেমন্ত-জায় বেলাদেবীর সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের সম্পর্কও ছিল গভীর বন্ধুত্বের। রানুর জন্মের আগে থেকে তাদের পরিচয়। তারপর বেলাদেবীকে সাধ খাইয়েও ছিলেন লতা।
বাংলা সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন লতা, তার উদাহারণও কম নয়
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে তাঁর এতটাই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল যে, বেলাদেবীর সঙ্গে একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়া, হোটেলে খাওয়া কোনও কিছুই বাদ ছিল না। আর লতা মঙ্গেশকর রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছেই। শুধুই রবীন্দ্রসঙ্গীতই নয়, বাংলা সাহিত্যের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। তিনি পড়তে ভালোবাসতেন, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথকে। তাঁদের সাহিত্যের নানা মারাঠি অনুবাদ তাঁর পড়া। তাঁর বাড়িতে রয়েছে উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত বহু বাংলা ছবির ক্যাসেট। বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তিনি ছিলেন অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল। পছন্দ করতেন বাংলার তাঁতের শাড়ি। তাঁর বাংলা গানের সংখ্যা ১৮৫। তার মধ্যে দেড়শো গান মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।