রেকর্ড ভিড়ে কলকাতার পুজোগুলোকে চ্যালেঞ্জ এলাচি মিলন সংঘের, দেখুন ভিডিও
এলাচি পুজো ভিড়ে কলকাতার পুজোগুলোকেও টেক্কা দেবে। রীতিমতো টেবিল ঠুকে পুজোর আগে এই দাবি করেছিলেন নরেন্দ্রপুর এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয়কুমার সেনগুপ্ত।
এলাচি পুজো ভিড়ে কলকাতার পুজোগুলোকেও টেক্কা দেবে। রীতিমতো টেবিল ঠুকে পুজোর আগে এই দাবি করেছিলেন নরেন্দ্রপুর এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয়কুমার সেনগুপ্ত। তাঁর এই দাবি যে হাওয়ায় আওয়াজ তোলা নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছে এলাচি মিলন সংঘ। তৃতীয়াতে জোর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এই পুজোর উদ্বোধন হয়েছিল। কিন্তু, বৃষ্টি থামতেই পঞ্চমী থেকে জনজোয়ার শুরু হয়ে যায় এখানে। এখন প্রতিদিন সাররাত ধরে দর্শনার্থীদের ঢল নামছে। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গল-এর শারদ অর্ঘ্য ২০১৮ সম্মানেও সম্মানিত হয়েছে এলাচি মিলন সংঘ।
গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতার শহরতলির পুজোগুলির মধ্যে একটা জায়গা করে নিয়েছে এলাচি মিলন সংঘ। ঝুলিতে এসেছে একাধিক পুজো সম্মান। এমনকী, ভিড়ের মিটারে কলকাতার সেরা পুজোগুলোকেও চ্য়ালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। ক্লাব সদস্যদের দাবি, এবার প্রতি রাতে কয়েক লক্ষ মানুষ ভিড়় জমাচ্ছেন এখানকার মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শন করতে। অষ্টমীর রাত পর্যন্ত অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ এখানকার পুজো দেখে গিয়েছেন। মহানবমীর রাতেও এই ভিড় আরও বাড়বে বই কমবে না বলেই দাবি তাঁদের।
আস্ত একটা পৃথিবী নেমে এসেছে
মাঠের আয়তন কত হবে? মেরে কেটে ২ বিঘা। কিন্তু, এই দুই বিঘা জমিনেই এখন বসত গেড়েছে আস্ত একটা পৃথিবী। ঘন নীল রঙ। তার শরীর জুড়ে জল ও স্থলের চিহ্নগুলো স্পষ্ট। ঠিক যেমনটা নাসার ভিডিও-তে দেখা যায়। তবে আস্ত পৃথিবী গ্রহের উপরে স্থাপিত হয়েছে একটা বিশাল-বিশাল ইমারতের শহর। কংক্রিটের জঙ্গলের সেই শহরকে আবার সাপের মতো পেচিয়ে রেখেছে উঁচু উঁচু সব ফ্লাইওভার। বলতে গেলে 'আনরিয়াল' কাঠামোতে যেন 'রিয়াল-আরবানাইজেশন'।
থিম 'নীল গ্রহের অতলে'
বিশ্ব-উষ্ণায়ণে রিক্ত পৃথিবী এবং তার প্রকৃতির মায়াজালকে এভাবেই মেলে ধরেছে এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘ। আর এই পুরো ভাবনাটাকেই মেলে ধরা হয়েছে 'নীল গ্রহের অতলে'-র ট্যাগ লাইনে।
'রিসাইকেলের মণ্ডপ'
পুজো কমিটির সম্পাদক সঞ্জয়কুমার সেনগুপ্ত জানিয়েছে, এমন এক মণ্ডপ গড়ে তুলতে এমন এমন জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে যে তার সম্পর্কে সকলে জানলে অবাক হবেন। যেমন পৃথিবীর আদল গড়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে, একধরণের পলিমারযুক্ত নীল শিট। এই শিট সাধারণত কোনও ধরনের প্যাকেট তৈরিতে কাজে লাগে। এছাড়াও রয়েছে ক্যাডবেরির মোড়ানোর আংতা। এতে আবার নীল রঙ করতে বিশেষভাবে তাতে কাজ করতে হয়েছে। পৃথিবীর বুকে স্থল বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে কুঁকড়ে যাওয়া খবরের কাগজ। মণ্ডপের ভিতরে প্রকৃতির সাজ-সজ্জার জন্য যে জিনিসগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে টিস্যুপেপার, কান চুলকানোর বার্ডস, ফোম। তেমনি রয়েছে ইলেক্ট্রিক্যাল কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সাদা পাইপ। এছাড়়াও ব্যবহার করা হয়েছে পাটকাঠি, সাইকেলে তেল দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত টিউবের কৌটো।
আরও চমক
এখানেই চমক শেষ নয়। নরেন্দ্রপুর এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘ আরও অনেক কিছু সাজিয়ে রেখেছে পুজো দর্শনার্থীদের জন্য। যেমন আস্ত এই পৃথিবীর পেট-চিরে ভিতরে ঢুকলেই দেখা মিলবে এক অনিনন্দ্য সুন্দর প্রকৃতির। যেখানে খেলা করে লতা-পাতা আর গাছেরা। নাচের ছন্দে বয়ে যায় নীল স্বচ্ছ জল। এহেন এক প্রকৃতির মাথায় থাকা নীল-আকাশে গাভির মতো ভেসে বেড়়ায় মেঘ। কল-কোলাহল আর কিচিরমিচির আওয়াজে চারিদিক মুখরিত করে তোলে পাখির দল। আর এমন এক প্রকৃতির মাঝে অধিষ্ঠাত্রী হয়েছেন মা-দুর্গা।
উৎসবের মধ্যে দিয়ে সচেতনতার বার্তা
কথা হচ্ছিল এলাচি রামচন্দ্রপুর মিলন সংঘের অন্যতম সদস্য শ্যামল-এর সঙ্গে। তিনি জানিয়েছন, বিশ্ব-উষ্ণায়ণে আজ পৃথিবী উপরে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে এখানে। কংক্রিটের জঙ্গলে কীভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি তা দেখানো হয়েছে। কিন্তু, পৃথিবীর প্রকৃতির বিরাজমানা রূপ এতটাই সুন্দর ও মায়াময় যে তা সকলকে মাত করে দেবে। সুতরাং, প্রকৃতি প্রেমেই যে পৃথিবী রক্ষার আসল রহস্য লুকিয়ে আছে সেটাকেই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।