জেলেই খুন হয়ে যেতে পারি, আদালতে আশঙ্কা কুণাল ঘোষের
সারদা-কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে গ্রেফতার হন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ। তার আগেই অবশ্য দল তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল। তার পর থেকে বিভিন্ন সময় বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তিনি। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলেছেন। এ ছাড়া মুকুল রায়, মদন মিত্র, সৃঞ্জয় বসু প্রমুখদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছেন।
আরও পড়ুন: জেল হেফাজতে কি আদৌ নিরাপদ সুদীপ্ত সেন, উঠছে প্রশ্ন
এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে তোলা হয় তাঁকে। তিনি বলতে থাকেন, "কিছু লোক পুজোর উদ্বোধন করে বেড়াচ্ছে। এরা সারদা গোষ্ঠীর থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছে। অথচ আজও কারাগারের বাইরে। আর আমি জেলে বসে ঢাকের আওয়াজ শুনছি। এটা চলতে পারে না। আমি আবার সিবিআই হেফাজতে যেতে চাই। সিবিআইকে অনেক তথ্য দিতে চাই। আমার ধারণা, 'সিট' সব তথ্য সিবিআইকে দেয়নি। আদালতকেও আমি গোপন জবানবন্দি দিতে চাই। এই কারণে জবানবন্দি দেওয়ার কথা বলছি যে, আমি আশঙ্কিত।"
বিচারক জিজ্ঞেস করেন, "আপনি হঠাৎ আশঙ্কিত কেন?" সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে কুণালবাবু বলেন, "আমি যে কোনও সময় খুন হয়ে যেতে পারি। সেটা হলে অনেক তথ্য চাপা পড়ে যাবে। যারা সারদা গোষ্ঠীর থেকে গোপনে প্রচুর সুবিধা নিয়েছে, তাদের আর ধরা সম্ভব হবে না।" এ কথা বলেই এজলাসে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন কুণাল ঘোষ। কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, সিবিআই তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে। যে অফিসাররা এখন তদন্ত করছেন, তাঁরা বদলি হয়ে যেতে পারেন। কুণাল ঘোষের সিবিআই হেফাজতের আর্জি খারিজ করলেও গোপন জবানবন্দির আবেদন মেনে নেন বিচারক। জেল হেফাজতেই তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হবে। সিবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট অফিসার সেটা করবেন।
"কিছু লোক পুজোর উদ্বোধন করছে, আমি জেলে বসে ঢাকের আওয়াজ শুনছি। এটা চলতে পারে না"
কুণাল ঘোষ ছাড়াও এ দিন আদালতে পেশ করা হয়েছিল সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনকে। তিনি বলেন, "সংবাদমাধ্যমে আমার মুখ দিয়ে অনেক কিছুই চালানো হচ্ছে। অথচ নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকায় আমি জবাব দিতে পারছি না। তাই লোককে সত্যিটা জানাতে আমি সাংবাদিক বৈঠক করতে চাই। আদালত এই মর্মে অনুমতি দিক। সেই বৈঠকের ভিডিও রেকর্ডিং হোক। আমার সব কথা এখনও বলা হয়নি।"
কুণালবাবুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফের তোলপাড় হয়েছে রাজনীতিক মহল। বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, "কুণাল ঘোষ যে আশঙ্কা করেছেন, তার ভিত্তি আছে। আমি আগেই বলেছি যে, সুদীপ্ত সেন, কুণাল ঘোষ, অরবিন্দ সিং চৌহান এবং আসিফ খান যে কোনও সময় খুন হয়ে যেতে পারেন। তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে এটা করা হতে পারে। আমি আজই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে গোটা ঘটনা জানিয়ে চিঠি লিখব।"
সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী বলেছেন, "মাফিয়ারা কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে তার প্রমাণ রাখতে চায় না। এক্ষেত্রেও চাইবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কুণাল ঘোষের আশঙ্কা অমূলক নয়।"
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, "কুণাল ঘোষ যা বলেছেন, তা সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। সিবিআইয়ের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। আর মুখ্যমন্ত্রী নীরব কেন? কুণাল ঘোষ এর আগেও যা বলেছেন, তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী চুপ থেকেছেন। কেউ ভয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে কুণাল ঘোষের বক্তব্যের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।"