সারদা কান্ডে মদন মিত্রের নামে তোপ দাগলেন কুণাল ঘোষ
এদিন কুণাল ঘোষ বলেন, ''দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুর থেকে কী করে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের উত্থান তা ভাল করে জানেন মদন মিত্র।'' তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদের এই মন্তব্যে যার পর নাই ক্ষুব্ধ পরিবহনমন্ত্রী। অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ''কুণালবাবুকে এই নিয়ে প্রায় ১৩-১৪ বার ডাকা হল জেরায়। ১৪ বারের বার আমার কথা মনে পড়ল তাঁর? এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কুণাল ঘোষকে কটাক্ষ করে মদন মিত্রর জবাব, আমরা মানুষের ভোট জিতে আসিন। ওঁনাকে (কুণাল ঘোষ) তো আর মানুষের ভোটে জিততে হয় না। কাঁচের ঘরে বসে ছিল ছোঁড়া ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন পরিবহন মন্ত্রী।
অন্যদিকে প্রাক্তন আইপিএস কর্তা রজতবাবু সম্পর্কে কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ''সুদীপ্তবাবু লাস ভেগাসে কী অনুষ্ঠান করেছিলেন, তাতে কত খরচ হয়েছিল, সেসব বলতে পারবেন রজত মজুমদার৷'' আদতে রজতবাবু সারদা গোষ্টীর মিডিয়া গ্রুপের এক শীর্ষকর্তা ছিলেন। পরে তিনি সেখানকার মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক হন। লাস ভেগাসের অনুষ্ঠানটি ২০১২ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স (এনএবিসি) শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ছিল সারদা গোষ্ঠী। সারদার টিভি চ্যানেল , 'চ্যানেল ১০'-কে এই অনুষ্ঠানের একক টেলিভিশন সত্ত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছিল না চ্যানেলটির। কুণাল ঘোষ সারদার গ্রুপ মিডিয়ার সিইও হওয়া সত্ত্বেও লাস ভেগাসে তিনি যাননি। কিন্তু রজতবাবু লাস ভেগাসে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। রজতবাবু এনএবিসি-র কলকাতা চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান ছিলেন। এবং পদত্যাগ না করা পর্যন্ত সারদা গোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন। কুণাল ঘোষের অভিযোগের পাল্টা জবাবে রজতবাবু বলেন, 'ওই অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচারের ব্যাপারে এনএবিসির সঙ্গে সারদা সংস্থার একটি চুক্তি হয় প্রায় ৪-৫ কোটি টাকার৷ তার মধ্যে আড়াই কোটি টাকা ভারতীয় অ্যাকাউন্টে জমাও দেওয়া হয় চেকের মাধ্যমে৷ ওই সব চেকে সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের সই ছিল৷'
রজতবাবু আরও জানান, 'কলকাতার শিল্পীদের যাতায়াত, দেখভাল, খরচের বিষয় দেখার কথা ছিল আমার৷ এছাড়া অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের জন্য সে দেশের নিয়মমতো সেখানকার টেকনিশিয়ানদের নেওয়া হয়েছিল৷ এই দায়িত্ব ছিল চ্যানেল টেন-এর৷ ওই সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচারের জন্য সারদা গোষ্ঠী প্রচুর খরচ করেছিল। এই সম্প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন কুণালবাবু। এ জন্য কোন খাতে কী খরচ হয়েছিল, সেটা উনিই ভাল বলতে পারবেন।"
এ দিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)-এর জেরার পরে বাইরে এসে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এই সাংসদের মন্তব্য, এই তিন জন সারদা কাণ্ডের অনেক কিছু জানেন। এর আগে কুণালবাবু বলেছিলেন, সারদা কাণ্ড থেকে ন'জন ব্যক্তি উপকৃত হয়েছেন এবং তাঁরা সারদা কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিস্তারিত জানেন। তাঁদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না, সে সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন ওই ন'জনের নাম মনে না করতে পারলে তিনি তাঁদের নাম বলে দেবেন বলেও ওই সময়ে জানিয়েছিলেন কুণালবাবু।
মঙ্গলবার
সকাল
সাড়ে
১০টা
নাগাদ
সল্টলেকের
ইডি-র
দফতরে
আসেন
কুণালবাবু।
সারদা
কেলেঙ্কারি
নিয়ে
জিজ্ঞাসাবাদের
জন্য
তাঁকে
ডেকে
পাঠিয়েছিলেন
ইডি-র
আধিকারিকেরা।
দফতরে
ঢোকার
আগে
তিনি
সাংবাদিকদের
বলেন,
"আমি
ইডি-র
আধিকারিকদের
বলব,
আমাকে
আর
সুদীপ্ত
সেন-কে
মুখোমুখি
বসিয়ে
জেরা
করতে।"
পাঁচ
ঘণ্টা
পর
দফতর
থেকে
বেরিয়ে
আসেন
কুণালবাবু।
সূত্রের
খবর,
সুদীপ্ত
সেনের
সঙ্গে
মুখোমুখি
বসিয়ে
জেরা
করা
নিয়ে
তাঁর
আবেদনে
সাড়া
দেননি
ইডি-র
আধিকারিকেরা।
সুদীপ্ত
সেনও
এতে
রাজি
নন
বলেই
ইডি
সূত্রে
জানা
গিয়েছে।
এর
আগে
দেবযানী
মুখোপাধ্যায়কে
ইডি-র
আধিকারিকেরা
নিজেদের
হেফাজতে
নিয়ে
জিজ্ঞাসাবাদ
করেছিলেন।
এর আগে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট ৯ বার এবং কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনস্থ সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও) দিল্লিতে ২ বার কুণালবাবুকে ডেকে জেরা করেছে৷ এদিনও কুণালবাবু অভিযোগ করেন, খুব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সারদা-কাণ্ডে তাকে জড়ানো হয়েছে৷ তাঁর মন্তব্য, 'সিবিআইকে দেওয়া সুদীপ্তবাবুর চিঠিটি কার কথায় বা কাদের আড়াল করতে লেখানো হয়েছে, তা জানার ব্যাপারে আমার কৌতূহল রয়েছে৷ আমার মনে হয়, সুদীপ্তবাবুকে যাঁরা চেনেন, তাঁদের এই তদন্তে সাহায্য করা উচিত৷'