অষ্টমীর দিনে কুমারী পুজোই রীতি বেলুড় মঠে, আগে নয় কন্যার পুজোর প্রচলন ছিল
বেলুড়, ৮ অক্টোবর : অষ্টমীর দিনে কুমারী পুজোর চিরাচরিত রীতি আজও চলে আসছে বেলুড় মঠে। সারদা মায়ের উপস্থিতিতে স্বামীজি নিজে কুমারী কন্যাকে পুজো করেছিলেন। নয় ব্রাহ্মণ কন্যাকে পুজোর মধ্য দিয়েই মঠে কুমারী পুজোর রীতি চালু হয়েছিল। এখন অবশ্য আর নয় কন্যার পুজো হয় না। স্বল্প বয়সী এক ব্রাহ্মণ কন্যাকে পুজো হয় রীতি মেনে।
১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ শুরু করেছিলেন বেলু়ড় মঠের দুর্গাপুজো। সেই বছরই কুমারী পুজোর প্রচলন করেছিলেন তিনি। মহাষ্টমীতে একই সঙ্গে ন'জন কুমারীকে বেলুড়মঠে পুজো করা হয়েছিল। বেলুড়মঠের পুজোর প্রধান বিশেষত্ব কুমারী নির্বাচন। গোটা দেশ থেকে, এমনকী বিদেশ থেকেও কুমারী হওয়ার আবেদন আসে মঠ কর্তৃপক্ষের কাছে। মঠের অধ্যক্ষ মহারাজের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিই বাছাই করেন কুমারী। রবিবার এই কুমারী পুজোকে ঘিরে দর্শানর্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। সকাল থেকেই গোটা দেশের মানুষ বেলুড় মঠের কুমারী পুজো দর্শন করার জন্য মুখিয়ে থাকেন।
আগে কলকাতার কুমারটুলি থেকে প্রতিমা আনা হত। এখন মঠ প্রাঙ্গনেই প্রতিমা তৈরি হয়। এই পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এখনও সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে। জন্মাষ্টমীর দিন থেকে সূচনা বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোর। ওই দিন কাঠামো পুজো হয়। দুর্গাষষ্ঠীর আগের দিন অর্থাৎ পঞ্চমীতে স্থানীয় জগন্নাথ মন্দির থেকে শালগ্রাম শিলা আনা হয় মণ্ডপে। দুর্গাষষ্ঠী থেকে বিজয়াদশমী পর্যন্ত শাস্ত্রবিধি অনুসারে পুজো হয়। বিজয়াদশমীর দিন সন্ধ্যায় মঠের ঘাটেই গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনই রীতি।
সঙ্ঘের সব কেন্দ্রেই মহাষ্টমীর দিন বিশেষ পুজো হয়ে থাকে। এ রাজ্য ছাড়াও ভিনরাজ্য, এমনকী বিদেশেও রামকৃষ্ণ আশ্রমে সমস্ত কেন্দ্রে পুজো হয়। বেলুড়ের জগন্নাথ মন্দির থেকে যেমন নারায়ণ আনা হয় শোভাযাত্রা করে সারদাদেবীর মন্দির থেকে আসে বাণেশ্বর শিব। প্রত্যেকদিনই ভোগারতির পর ভক্তরা অঞ্জলি দেন। তারপর প্রসাদ বিতরণ করা হয়। অষ্টমীতেই প্রায় ৫০ হাজার ভক্ত সমাগম হয় বেলুড় মঠে। সকাল ন'টায় শুরু কুমারী পুজো।
সকলের মঙ্গলের কামনায় অর্থাৎ শ্রীদুর্গা প্রীতি কামনার্থেই এই পুজো। নিষ্ঠা, ভক্তি ও আন্তরিকতাই এই পুজোর মূল মন্ত্র। সপ্তমী থেকে অন্ন, ব্যঞ্জনাদির সঙ্গে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। শিব ও নারায়ণকে দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ। নবমী পুজোর শেষে শ্রী শ্রী সারদা দেবীর বিশেষ পুজো হয়। দশমীর দিন আবার শোভযাত্রা করে নারায়ণ মন্দিরে পৌঁছে দেওয়া হয়। ভক্তদের কাঁধে চড়ে মা গঙ্গার ঘাটে যান মা। সেখানে ধুনুচি নাচে মেতে ওঠেন সন্ন্যাসী ও ভক্তরা। নিরঞ্জন শেষে বেলপাতায় দুর্গানাম লিখে সমাপন হয় দুর্গোৎসবের।