কৃষ্ণনগরে এবারে তৃণমূল-বাম-বিজেপির লড়াই; ভোট ২৯ এপ্রিল
এবারের লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের লড়াইটি খুব চিত্তাকর্ষক হতে চলেছে। আগামী ২৯ এপ্রিলের চতুর্থ দফার এই নির্বাচনে নদীয়া জেলার এই কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় সাঁইত্রিশ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের এলাকা এই কৃষ্ণনগর। সেখানে এবারের লড়াই প্রধানত ত্রিমুখী: তৃণমূল কংগ্রেস, বাম ও বিজেপির মধ্যে।

মহুয়া মৈত্র এবারে লড়ছেন তাপস পালের জায়গায়
গত দু'বার কৃষ্ণনগর থেকে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের অভিনেতা -প্রার্থী তাপস পাল। ১৯৭১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত টানা এই কেন্দ্রে জেতে মার্ক্সবাদীরা। ১৯৯৯ সালে তাঁদের হাত থেকে এই কেন্দ্রটি কেড়ে নেয় তৃণমূল-বিজেপি জোট এবং কৃষ্ণনগরে প্রথমবারের জন্যে জয়ের স্বাদ পায় বিজেপি, নির্বাচিত হন জুলুবাবু অর্থাৎ সত্যব্রত মুখার্জি। ২০০৪ সালে জুলুবাবুকে হারিয়ে কৃষ্ণনগর ফের হাসিল করে সিপিএম; তাদের প্রার্থী ছিল প্রাক্তন এথলিট জ্যোতির্ময়ী শিকদার। আর জ্যোতির্ময়ীকে হারিয়ে ২০০৯ সালে যেতেন তাপস পাল। সেবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল তৃণমূলের। ২০১৪ সালেও তাপস জেতেন কিন্তু তারপর আইনি যাঁতাকলে তিনি ফেঁসে যাওয়ার পর এবারে তৃণমূল কৃষ্ণনগর থেকে প্রার্থী করেছেন প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ এবং করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক মহুয়া মৈত্রকে। মহুয়াকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ অনেকদিনই কৃষ্ণনগরের সংগঠন চাঙ্গা করার দায়িত্ব দেন, যদিও করিমপুরে কাজ করার অভিজ্ঞতা মহুয়ার বিশেষ কাজে লাগবে না এখানে কারণ করিমপুর নদীয়া জেলার অন্তর্গত হলেও লোকসভাতে তা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের অন্তর্গত। তাতে অবশ্য মহুয়া অসুবিধা মানতে নারাজ; তাঁর মতে, কৃষ্ণনগর তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন।
মহুয়া যেমন অক্লান্তভাবে সারা কেন্দ্র চষে ফেলছেন, এমনকী, তাঁর দ্রুতগতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও; তেমনই, অপরদিকে, টুকটাক মনস্তাত্বিক লড়াইতেও তিনি রয়েছেন। এই যেমন বলছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শান্তনু ঝা শিক্ষিত, রুচিশীল মানুষ। অনেকের কাছে মহুয়ার এই বক্তব্য বেমানান ঠেকলেও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে তিনি জেনে বুঝেই এই মন্তব্য করছেন যাতে তৃণমূল-বিরোধী ভোটটি সিপিএম পায় এবং তাতে কাটাকুটি হয়ে তিনিই জিতে যান। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির এই অঞ্চলে উত্থানে তৃণমূল এবং বাম -- দুই পক্ষই যে জল মেপে চলতে চাইছে, সে ইঙ্গিত পরিষ্কার।

বামেরা এবারেও দাঁড় করিয়েছে আগেরবারের পরাজিত প্রার্থী শান্তনু ঝা-কে
বামেদের এবারে কৃষ্ণনগর থেকে শান্তনুবাবুকে দাঁড় করানোর পিছনেও পরোক্ষে ওই বিজেপি জুজুই। বামেদের সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁরা একবার ভেবেছিলেন একজন সংখ্যালঘু মুখ এখান থেকে দাঁড় করবেন, কিন্তু পরে ভেবে দেখলেন যে তাতে হয়তো হিতে বিপরীত হয়ে জেতে পারে; হিন্দু ভোট চলে যেতে পাত্রে বিজেপির দিকে। তা গতবার তাপসের কাছে ৭১ হাজার ভোটে হারা শান্তনুবাবু, যিনি পেশায় একজন অধ্যাপক, তাঁকেই ফের দাঁড় করিয়েছে বামেরা। মুখে বলছেন ধর্মীয় নয়, তাঁরা লড়ছেন রাজনৈতিক লড়াই। তবে বিজেপি জুজু দেখে যে মহামহিম মার্ক্সবাদীরাও সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিশ্লেষণে নেমে পড়েছেন , সেটা দেখেই চমৎকৃত হতে হয়।

জুলুবাবু এবার আর লড়াইতে নেই, আছেন কল্যাণ চৌবে
বিজেপিরও রয়েছে নিজের সমস্যা। জুলুবাবু নিজে এবারও কৃষ্ণনগরে প্রার্থী হতে চাইলেও সাতাশি বছরের মানুষটিকে ফের টিকিট দিতে চায়নি দল। বছর তেতাল্লিশের ক্রীড়াবিদ কল্যাণ চৌবে এবারে কৃষ্ণনগরে বিজেপির প্রার্থী যদিও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জুলুবাবুর শিবির এই পদক্ষেপটিকে ভালো চোখে নেয়নি। চৌবে কোন্দল এড়াতে মনোনয়ন পেয়েই দৌড়ে গিয়েছেন জুলুবাবুর কাছে আশীর্বাদ নিতে এবং তিনি তা নির্দ্বিধায় দিলেও চোরাস্রোত তাতে কতটা প্রশমিত হয়েছে তা বলা চলে না। জুলুবাবুর প্রার্থীত্বের বিরোধীরা এও বলেছেন যে ওই ১৯৯৯ সালে তৃণমূলের হাত ধরে যেটা ছাড়া তিনি আর একবারও বিজেপিকে জেতাতে পারেননি কৃষ্ণনগর থেকে, এমনকী ২০১৪ সালে মোদী হাওয়াতেও শেষ করেন তৃতীয় স্থানে। তাঁর সঙ্গে আরএসএস-এর যোগাযোগও সেরকম নয় যে তাঁদের সমর্থন তিনি পাবেন।
গতবার চতুর্থ স্থান পাওয়া কংগ্রেস এবারে এই কেন্দ্রে দাঁড় করিয়েছেন ইন্তাজ আলী শাহকে। তবে, লড়াই সীমিত ওই তৃণমূল, বাম এবং বিজেপির মধ্যেই।