মৌসুমি-সুস্মিতা-বিপাশা-রানির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর 'পঞ্চকন্যা'য় কোয়েল মল্লিক, যৌক্তিকতা আছে কি!
১৯তম কলকাতা চলচ্চিত্র উতসব সম্পর্কে এ প্রবাদটা অনায়াসেই খেটে যায়। সার্বজনীন তো বটেই, হলিউড-বলিউডও মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছে উতসবের সূচনা ও সমাপ্তিতে।
মুখ্যমন্ত্রীর পঞ্চ-বঙ্গ-কন্যা, অভিনয় জগতে উজ্জ্বল উপস্থিতিতে নিজেদের ছাপ রেখে গিয়েছেন বাংলার এই পাঁচ মেয়ে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তিদিনে এই পঞ্চকন্যাকেই সম্মান জানাল রাজ্য সরকার। এঁরা হলেন, মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়,সুস্মিতা সেন,বিপাশা বসু, রানি মুখোপাধ্যায় ও কোয়েল মল্লিক।
না, প্রথম চারটি নাম নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় ১৯৬৭ সালে বাংলা ছবি দিয়েই বড়পর্দায় অভিনয়ের হাতে খড়ি। তার পর ১৯৭২ সালে বলিউডে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে দেশের চলচ্চিত্র প্রেমিকদের মন জয় করেছেন। সুস্মিতা সেন, ১৯৯৪ সালে বিশ্বসুন্দরী হয়েই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলার নাম উজ্জ্বল করেছিলেন ইনি। এর পর অভিনয় জগতে সিনেমার ভাষায় 'বক্স-অফিস হিট ছবি' সে অর্থে দিতে না পারলেও অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছেন বারবার। রানি মুখোপাধ্যায়, অভিনয় দক্ষতায় জিতে নিয়েছেন দাদা-সাহেব ফালকে, রাজীব গান্ধী পুরস্কারের মতো সম্মান। পেয়েছেন আরও কত না জানি পুরস্কার। ব্ল্যাক ছবিতে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকের চোখে জল আনে। আর একজন হলেন, বিপাশা বসু। প্রথম হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেই ছিনিয়ে নিয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ নবাগতার পুরস্কার। ভারতীয় চলচ্চিত্রে বিপাশা বসু যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম তা আর আলাদা করে বলতে হয় না।
১৭ ও ১৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসবের থালি গার্ল ছিলেন কোয়েল মল্লিক
কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্রে কোয়েল মল্লিকের কৃতিত্ব কী? বেশকিছু বাংলা ছবি ও দু-তিনটি ওড়িয়া ছবিতে সাধারণ মানের অভিনয় ছাড়া আর কোন অবদান তাঁর রয়েছে কী? জাতীয় স্তরে ক'জন চেনেন তাঁকে? আচ্ছা জাতীয় স্তর নয় ছেড়ে দিলাম। বাংলা ছায়াছবিতে কোয়েলের যা অবদান রয়েছে স্বস্তিকা চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী,পায়েল সরকার সাম্প্রতিক এই সমস্ত বাঙালি অনস্ক্রিন নায়িকার কী অবদান তার থেকে কিছু কম। অন্যদিকে মেন স্ট্রিম ছবিতে সেভাবে নিজেদের ছাপ না রাখতে পারলেও অন্য ঘরানার ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা,শ্রীলেখা মিত্র-র মতো অভিনেত্রীরাও। তবু কোয়েল?
জনপ্রিয়তার নিরিখেও যদি বিচার করি, এমনটাও নয় যে বাংলা ছবিতে একচেটিয়া একাধিপত্য স্থাপন করেছেন কোয়েল, কোনও একসময় যা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে নিয়ে বলা যেত। এই মঞ্চে তাঁকেও আনা হলেও আপত্তির কোনও জায়গা থাকত না। কিন্তু যত বিবাদ কলকাতা চলচ্চিত্র উতসবের গত দুবছরের এই থালি গার্লকে নিয়ে।
থালি গার্ল পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পঞ্চ কন্যার তালিকায় জাতীয় স্তরে চার জনপ্রিয় অভিনেত্রীর পাশে কোয়েল মল্লিক একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না! বাবা রঞ্জিত মল্লিক মমতাপন্থী বুদ্ধিজীবী। সেইসূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্যা মেয়ে কোয়েলও। এই বিষয়টাই কী বাকি বাঙালি অভিনেত্রীদের পিছনে ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোয়েলের জন্য অ্যাডভান্টেজ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াল!
তর্কের স্বার্থে ধরে নিলাম, মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় হিন্দি ও বাংলা উভয় ছবিতেই সমানভাবে সাবলীল। কিন্তু বাকি তিন অভিনেত্রী বাঙালি হলেও বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে যোগটা কম। তাই মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন এমন এক বঙ্গললনা যার সঙ্গে বাংলার যোগটা হোক অত্যন্ত দৃঢ়। পঞ্চকন্যার জন্য প্রথমে কঙ্কনা সেনশর্মাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু উনি আসতে না পারায় অন্য কোনও বিরোধীপন্থী বুদ্ধিজীবী অভিনেত্রীর নাম না ভেবেই শেষমুহূর্তে এই তালিকায় কোয়েল মল্লিকের নাম ঢোকানোই শ্রেয় মনে করল রাজ্য সরকার। তাতে অবশ্য কোয়েলের ব্যক্তিগতভাবে কোনও অসুবিধা নেই। উল্টে বরং হঠাত পাওয়া এই সম্মানে গদগদ কোয়েল।