দুর্গার পায়ের তলায় শায়িত কোট-প্যান্ট পরা অসুর, দে বাড়িতে পুজো হয় দেড়শো বছরের পুরনো কাঠামোতে
উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ, শহর থেকে শহরতলী। বনেদি বাড়ির পুজো মানেই লুকিয়ে থাকা ইতিহাস। লুকিয়ে থাকা কত শত গল্প। যেমন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জী রোডের দে বাড়ির পুজো।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ, শহর থেকে শহরতলী। বনেদি বাড়ির পুজো মানেই লুকিয়ে থাকা একাধিক না বলা ইতিহাস। লুকিয়ে থাকা কত শত গল্প। যেমন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জী রোডের দে বাড়ির পুজো। এ বাড়ির পুজোয় ব্রিটিশরূপী অসুরকে দমন করেন দুর্গা। আরও রয়েছে, এবাড়িতে শুরু থেকে প্রতি বছর পুরনো একই কাঠামোতেই পুজো হয়ে আসছে। এবার ভবানীপুরের দে বাড়ির পুজো পা দিল ১৫০ তম বর্ষে।
পুজো শুরু কবে ও কীভাবে
ভবানীপুরে দে বাড়ির দুর্গা পুজো ১৮৭০ সালে রামলাল দে'র হাত ধরে শুরু হয়। পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম সুমন্ত দে'র মুখেই জানা গেল, এ বাড়ির পুজো শুরুর ইতিহাস। এ বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু স্বপ্নাদেশে। ইংরেজ আমলে কলকাতায় তুলোর ব্যবসা করতেন রামলাল। তাঁর স্ত্রী একদিন সকালবেলায় ঘর থেকে বেড়িয়ে জনৈক এক ভদ্রমহিলাকে দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। পরে সেই ভদ্রমহিলার আর খোঁজ মেলেনি। পরে রামলাল দে, বাড়িতে দুর্গাপুজো করার স্বপ্নাদেশ পান। এরপর তিনি ভবানীপুরের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন।
এই বনেদি বাড়ির পুজোয় ব্রিটিশরূপী অসুর বধ করেন দুর্গা
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। এবাড়ির এই ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে। এ বাড়ির পুজোয় ব্রিটিশরূপী অসুর। অসুরের গায়ে রয়েছে ইংরেজদের কোট-প্যান্ট। পায়ে ইংরেজদের জুতো। অসুরের মুখের গড়ন ও মাথার চুলেও ব্রিটিশদের ছাপ। অসুরের মাথার চুল ও গোঁফ খয়েরি রঙের। পরিবারের সদস্য সুমন্ত জানালেন ,প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাড়ির দুর্গা পুজোয় অসুরকে এই রুপেই দেখে আসছে। এর সঠিক কারণ জানা না থাকলেও পূর্বপুরুষদের থেকে জানা তথ্য অনুয়ায়ী ব্রিটিশ সামাজ্যের পতন চেয়ে অসুরকে ব্রিটিশদের কোট প্যান্ট পরিয়ে মায়ের পায়ের কাছে রাখা হয়েছিল।
বাড়িতেই ঠাকুর তৈরি হয়, দেড়শো বছরের কাঠামোয়
এবাড়িতে দেড়শো বছর পুরনো কাঠামোয় পুজো হয়ে আসছে। বিসর্জনের সময় মূল কাঠামো জল থেকে তুলে আনা হয়। সেই কাঠামোতেই পরের বছর বাড়িতেই প্রতিমা তৈরি করা হয়। প্রতিমা তৈরির পর পুজোর সময় বাড়ির ছেলেরাই রাত জেগে ঠাকুর সাজান।
পুজোর খাবার
চতুর্থীর দিন বাড়ির বউয়েরা নারকেলের বিভিন্ন পদ তৈরি করে থাকেন। সারা রাত ধরে নারকেলের নাড়ু, চালের নৈবেদ্য তৈরি করা হয়। পুজোর চারদিন দেবীকে রাতে লুচি ও বিভিন্ন রকমের মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। সঙ্গে ৫ রকমের নারকেলের জিনিস থাকে। ভোগে নারকেলের সব উপকরণ বাড়িতেই তৈরি হয়।
বাড়ির মহিলাদের ধুনো পোড়ানোর রীতি
এবাড়িতে অষ্টমীর দিন বাড়ির মেয়েরা মাথায় ও দুহাতে দুটো সড়া নিয়ে বসে ধুনো পোড়ান। পুজোয় ২১ কেজি চালের নৈবদ্য হয়। নবমীর দিন চালকুমড়ো বলি হয়। আগে পশুবলির নিয়ম থাকলেও এখন আর নেই।
কাঁধে করে বিসর্জন
প্রাচীন রীতি আজেও মেনে আসছে দে পরিবার। আজও কাঁধে করে প্রতিমা বিসর্জন হয়। শোভাযাত্রার মাধ্যমে ভবানীপুর অঞ্চলের দে পরিবারের বাড়িগুলির সামনে দিয়ে প্রতিমাকে ঘুরিয়ে তারপর নিরঞ্জনের জন্য ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়।
দুর্ভোগ কাটিয়ে সৌভাগ্য ফেরাতে তৃতীয়াতে দুর্গা কী রূপে পূজিতা হন! নেপথ্যে রয়েছে কোন পৌরাণিক কথা
দর্জিপাড়ার এই বনেদি দুর্গাপুজোর পা ২১৩ তম বর্ষে, পদ্ম নয় এখানে দুর্গা পূজিত হন ১০৮ অপরাজিতা ফুলে