বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে এসপি-র বিরুদ্ধে নয়া মামলা হাইকোর্টে, ২১ তারিখে শুনানি
বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট। এই নিয়ে মামলার শুনানি ২১ নভেম্বর বলে ধার্য করা হয়েছে। পুলিশ সুপার-সহ ৩ অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর কাছে মামলার সমন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বালুরঘাটের ফেসবুককাণ্ডে ফের দায়ের হল নয়া মামলা। ফেসবুককাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া দুই প্রতিবাদী অনুপম তরফদার এবং দেবজিৎ রায় এই মামলা দায়ের করেছেন। বালুরঘাট পুলিশ ১৯ অক্টোবর অনুপম তরফদার ও দেবজিৎ রায়-কে গ্রেফতার করেছিল। এই গ্রেফতারির আগেও অনুপম এবং দেবজিৎ একটি মামলা দায়ের করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে। ওই মামলাতেও মূল অভিযুক্ত করা হয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই নতুন মামলাতেও পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযুক্তর তালিকায় রয়েছেন আরও দুই পুলিশ কর্মী। এরা হলেন বালুরঘাট থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষ এবং এসআই সমীর মণ্ডল। নতুন মামলা দায়ের হওয়ায় অনুপম ও দেবজিৎ-দের পুরনো মামলাকে এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
২১ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক-এর এজলাসে বেলা সাড়ে দশটায় মামলার শুনানি হওয়ার কথা। বলতে গেলে বালুরঘাটের ফেসবুককাণ্ড নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যে মৌলিক অধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে তা এবার শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট। ওই দিনের শুনানির উপরেই মামলার পরবর্তী অগ্রগতি নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন অনুপম ও দেবজিৎ-এর আইনজীবী শতদ্রু শাস্ত্রী।
মামলার শুনানির কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ দিনাজপুর পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, আইসি সঞ্জয় ঘোষ এবং এসআই সমীর মণ্ডলের কাছে সমন পৌঁছে গিয়েছে বলেও খবর। তবে, বালুরঘাট পুলিশ প্রশাসন এই মামলা নিয়ে কী পদক্ষেপ নিতে চলেছে তা এখনও জানা যায়নি।
দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, আইসি সঞ্জয় ঘোষ এবং এসআই সমীর মণ্ডলের বিরুদ্ধে সংবিধানে বর্ণিত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আক্রমণ করা থেকে শুরু করে গ্রেফতারির মাধ্যমে ব্যক্তির ও তাঁর পরিবারের শান্তি হনন-এর মতো অভিযোগ। এমনকী, ফেসবুকে মত প্রকাশের বিনিময়ে দুই প্রতিবাদী অনুপম তরফদার ও দেবজিৎ রায়-এর উপর যে ধারায় বালুরঘাট পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছে তা কোনওভাবেই এক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না বলেও মামলার আবেদনপত্রে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন আইনজীবী শতদ্রু শাস্ত্রী। ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই দুই প্রতিবাদীর উপরে বালুরঘাট পুলিশ কার্যত ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগ জানানো হয়েছে মামলার আবেদনপত্রে। এমনকী, অনুপম ও দেবজিৎ-দের গ্রেফতারির প্রতিবাদে শান্তি মিছিলের উদ্যোগকেও কী ভাবে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে আটকে দিয়েছিল মামলার আবেদনে সেই প্রসঙ্গও টানা হয়েছে।
দুর্গাপুজোর সময় পুলিশ বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত বালুরঘাট শহরে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটরবাইক ও চার চাকার গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতেই ফেসবুকে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন অনুপম তরফদার ও দেবজিৎ রায়-দের মতো বালুরঘাটের বেশকিছু বাসিন্দা। অভিযোগ, এতে পুলিশ প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়ে প্রতিবাদীদের থানায় ডেকে পাঠায়। ঘটনা পরম্পরায় অনুপম তরফদার, দেবজিৎ রায়-রা পুলিশকে কাঠগড়ায় দাড় করান। তাঁদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট ডিলিট করে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিয়েছে। এরপরই অনুপম, দেবজিৎ-সহ আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করে। অনুপম ও দেবজিৎপাল্টা পুলিশ সুপার ও দুই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। এর কয়েক দিন পরেই অনুপম ও দেবজিৎকে পুলিশ গ্রেফতার করে ৪দিন লকআপ-এ রেখে দেয়। আপাতত জামিন পেলেও ফেসবুককাণ্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে নৈতিক লড়াই থেকে পিছু না হঠতে অনড় অনুপম ও দেবজিৎ।
[আরও পড়ুন:ফেসবুকাণ্ডে প্রতিবাদ সভা নিয়ে উত্তপ্ত বালুরঘাট, অম্বিকেশ-বিকাশদের কালো পতাকা]