বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে ধরপাকড় অসাংবিধানিক, আর কি বলল হাইকোর্ট
বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে পুলিশ যে জোর-জবরদস্তি করেছে তা কার্যত প্রমাণিত হল। কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে যা জানিয়েছে তাতে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য পুলিশ।
ফের আদালতে কার্যত ধাক্কা খেল রাজ্য পুলিশ। এবার বালুরঘাট ফেসবুকাণ্ডে ধাক্কা খেতে হল তাদের। পুজোর সময় বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ড সামনে আসে। পুলিশের যান নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা ফেসবুকে করে কী ভাবে কিছু মানুষ প্রশাসনের হুমকি-র সামনে পড়েছিলেন তাও প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনা নিয়ে অক্টোবরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন দুই প্রতিবাদী অনুপম তরফদার ও দেবজিৎ রায়। এরপর পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করলে এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। জামিন পেয়ে প্রায় মাসখানেকের মাথায় ১৫ নভেম্বরে নতুন করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন অনুপমরা।
বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট পুলিশি সক্রিয়তাকে ঠিক নয় বলে মন্তব্য করে। এমনকী, বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে যে ভাবে কিছু মানুষকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, থানায় ডেকে জেরা করা হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে তারও সমালোচনা করেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। গোটা বিষয়টিকে অসাংবিধানিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিন এই বিষয়ে অবশ্য কোনও রায় শোনায়নি আদালত। বালুরঘাট পুলিশ প্রশাসনকে এফিডেভিট জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য তিন সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফেসবুককাণ্ডে দুই প্রতিবাদী অনুপম তরফদার ও দেবজিৎ রায়-এর হয়ে মামলা লড়া আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
ফেসবুককাণ্ডে আইনি লড়াইয়ে প্রথম থেকেই আছেন হাইকোর্টের আইনজীবী শতদ্রু শাস্ত্রী। বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে সঙ্গে শতদ্রু এই মামলায় অনুপম, দেবজিৎ-দের আইনজীবী। শতদ্রু জানিয়েছেন, 'এফিডেভিট জমা পড়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীরা তাঁদের বক্তব্য পেশ করার সময় পাবেন। এর পরেই বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডের রায় ঘোষণার সম্ভাবনা প্রবল। বলতে গেলে নতুন বছরের শুরুতেই বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে রায় শোনাতে পারে কলকাতা হাইকোর্ট।'
বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট আরও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেয়। বিচারপতি জানান, হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া কোনওভাবেই পুলিশ ফেসবুককাণ্ডে চার্জশিট জমা দিতে পারবে না। তবে, তদন্ত চলতে কোনও অসুবিধা নেই।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের শুনানিতে নিজেদের নৈতিক জয় হয়েছে বলেই মনে করছেন বালুরঘাট ফেসবুক কাণ্ডের অন্যতম মামলাকারী অনুপম তরফদার। ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, 'মহামান্য আদালত যেভাবে আমাদের অবস্থানকে মান্যতা দিয়েছে তাতে এটা বড় জয়। গণতন্ত্রের জয়। এই প্রতিবাদে যেভাবে আমাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সামিল হয়েছিল তাতে কলকাতা হাইকোর্টের এদিনের বক্তব্য তাঁদেরকে শক্তি জোগাবে। বলতে গেলে এটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ।'
ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার সঙ্গে কথা হয় অন্যতম মামলাকারী দেবজিৎ রায়-এর। তিনি জানান, 'আইনকে চিরকালীন বিশ্বাস করে এসেছি। কিছু মানুষ ক্ষমতার শীর্ষে বসে তার অপব্যবহার করেছিলেন। আদালতের এদিনের অবস্থান তাঁদেকে সঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনবে।'
এই মামলায় রাজ্যের পক্ষে থেকে আইনজীবী দাঁড় করানো হয়েছে, তেমনি অভিযুক্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, আইসি সঞ্জয় ঘোষ, এসআই সমীর মণ্ডলরাও আলাদা করে আইনজীবী দিয়েছেন। এফিডেভিট-এ রাজ্য পুলিস প্রশাসন কি অবস্থান নেয় সেটাই এখন দেখার।
[আরও পড়ুন:বালুরঘাট ফেসবুককাণ্ডে এসপি-র বিরুদ্ধে নয়া মামলা হাইকোর্টে, ২১ তারিখে শুনানি]