কোচবিহার থেকে কলকাতা, শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বনধে উত্তপ্ত হল বাংলা
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, কেন্দ্রীয় নয়া শ্রম ও কৃষি আইনের প্রতিবাদ, মূল্যবৃদ্ধি, শাসন ব্যবস্থার অবনতি সহ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক নীতির বিরোধিতায় সাত দফা দাবিতে দশ শ্রমিক সংগঠনের ডাকে বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে বাম-কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটে পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, কেরল, রাজস্থান, ওডিশা, ছত্তিসগড় সহ বিভিন্ন অবিজেপি শাসিত রাজ্যের পাশাপাশি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পড়ল এ রাজ্যেও।

এদিন সকাল না হতেই কলকাতার যাদবপুর, করুনাময়ী মোড়-সহ একাধিক এলাকায় টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো ধর্মঘটীরা। বনধের সমর্থনে বামফ্রন্টের তরফ থেকে বেহালা ট্রামডিপো ডায়মন্ড হারবার রোড অবরোধ হয়। প্রথমে একটি মিছিল শুরু করে পাঠক পাড়া থেকে, সেই মিছিল বেহালা ট্রামডিপো পর্যন্ত এসে রাস্তা অবরোধ করে। লেলিন সরণীতে দোকানে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। কলকাতার সাদার্ন অ্যাভেনিউতে বনধের সকালে রাস্তায় টায়ার ফেলে আগুন ধরানোর অভিযোগ ওঠে বনধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পরে রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ধর্মঘটকে সফল করতে নিউটাউন নারকেল বাগান মোড়ে দীর্ঘক্ষন টায়ার জ্বালিয়ে বামেদের বিক্ষোভ চলে। বামেদের সাত দফা দাবিতে নিউটাউন গৌরাঙ্গ নগর অটো স্ট্যান্ডে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ। গাড়ি আসলে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তায় সরকারি-বেসরকারি বাস থেকে শুরু করে সমস্ত গাড়ি থামিয়ে দেয়া হয়। এরপর বিশ্ববাংলা সরণি দিয়ে মিছিল করে নিউ টাউন সিবি মার্কেটে এসে দোকান বন্ধ করতে বলা হয়, মার্কেটের সাটার বন্ধ করে সাটারে বাঁশ দিয়ে মারা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নিউটাউন থানার পুলিশ।

অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত - বসিরহাট - বনগাঁ একাধিক জায়গায় দেখা যায় বন্ধ ঘিরে ধর্মঘটিদের অবস্থান। বারাসতে মিছিল থেকে জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর চলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ করে গাড়ি থামিয়ে বনধ সফল করার মরিয়া প্রয়াস। আর তা ঘিরে ধুন্ধুমার বাঁধে বারাসতের কলোনি মোড় ও হেলাবটতলা মোড়ে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, লাঠিচার্জ কিছুই বাদ যায়নি।

হাবরা স্টেশনে ভাঙচুর বনধ সমর্থনকারীদের। টিকিট কাউন্টারের জালানার কাচ ভেঙে দেয় উত্তেজিত সমর্থনকারীরা। এরপর রেললাইনের উপর বসে পড়েন তাঁরা। বসিরহাটের রেললাইন আটকে রেখে দীর্ঘক্ষন বিক্ষোভ অবরোধ করে বাম কর্মী সমর্থকরা। রীতিমতো বনধ সমর্থক কারীদের তাড়া করে লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। শ্যামনগরে ট্রেন অবোরোধ করে বনধ সমর্থকরা। এর জেরে শিয়ালদহ মেইন শাখায় রেল পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে।

এদিন সকাল থেকেই ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড এলাকার হাড়োয়া রোডের একাধিক জায়গায় গাছের গুড়ি, বাঁশের ব্যারিকেড করে অবরোধে বসে পড়েন জমি কমিটির সদস্যরা। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে যায় অবরোধ কর্মসূচি। অবরোধের ফলে নাস্তানাবুদ হতে হয় সাধারণ পথ চলতি মানুষকে। রাস্তার দুই দিকে সারি সারি যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়ে। অবরোধ তুলতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কাশীপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী।পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুরের পরে অবরোধ তুলে নেয় জমি কমিটি। এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগানার ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, বিষ্ণুপুর, বারুইপুর, বজবজ, মহেশতলাতে বনধের স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমেছিলেন বাম এবং কংগ্রেস কর্মীরা। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লক্ষীকান্তপুর, বারাসাত, ডায়মন্ড হারবার-সহ একাধিক স্টেশনে অবরোধ বিক্ষোভ চলতে থাকে। বজবজ স্টেশনেও ট্রেন অবরোধ করেন বাম কর্মীরা। পরে অবশ্য বিক্ষোভ উঠে যায়।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বামপন্থীদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই জেলার মধ্য দিয়েই ৬ ও ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক গেছে। এই দুটি জাতীয় সড়কে যাত্রীবাহী বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। তবে দুই একটি সরকারি বাস যেতে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে। পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাও কম। সাধারণ ধর্মঘট কে সামনে রেখে রাস্তাঘাটে পথচলতি মানুষদের দেখাও তেমন ভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। শহিদ মাতঙ্গিনী ও কোলাঘাট বিডিও অফিস থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি অফিস খোলা থাকতে দেখা যায়। কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল ভালো।

তবে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল। বন্ধের প্রভাব ২ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতে ও পড়েনি। গ্রাম গঞ্জের হাট বাজার সম্পূর্ণভাবেই খোলা ছিল। এই দুটি ব্লক ছাড়া মেচগ্রাম, তমলুক, ময়না, ব্রজলাল চক, রামনগর, এগরা সহ বিভিন্ন স্থানে বামপন্থার পক্ষ থেকে রাস্তা অবরোধ করতে দেখা যায় কর্মী-সমর্থকদের। কোন কোন স্থানে কর্মী-সমর্থকরা রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।

বনধ ঘিরে হাওড়ার একাধিক জেলায় অশান্তি ছড়ায়। হাওড়া দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ডোমজুড় ও বীরশিবপুর স্টেশনের কাছে রেল অবরোধ করেন ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। ৬ নম্বর ও ২ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করা হয়। হাওড়ার দাসনগর শানপুর মোড়ে নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল দাহ করা হয়। উলুবেড়িয়া স্টেশনের কাছে ডোমপাড়ায় হাওড়া-খড়গপুর শাখায় ট্রেন বন্ধ করলেন বাম সর্মথকরা। উলুবেড়িয়ার বানিতবলায় এসবিআই ব্যাঙ্কের শাটার নামিয়ে বন্ধ করে দিলেন বনধ সমর্থকরা।

মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন ধর্মা মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন বনধ সমর্থনকারীরা। দাসপুরেও রাজ্য সড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন বনধ সমর্থনকারীরা।

কোচবিহারের রাস্তায় গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করল বনধ সমর্থকরা। রাজবাড়ির সামনে কেশব রোডে এই ঘটনায় সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। পাশাপাশি, কোচবিহার শহরে সকালেই বিক্ষিপ্ত অশান্তি। এনবিএসটিসি একটি ডিপোয় দাঁড়িয়ে থাকা বাসে বনধ সমর্থকরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।

তবে অন্যদিকে বনধ ঘিরে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও কলকাতা বিমানবন্দরে বনধের কোন প্রভাব নেই। সকাল থেকেই চেনা ছন্দে কলকাতা বিমানবন্দর। চলেছে অধিকাংশই ওলা - উবের - ট্যাক্সি। উত্তরে চা বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম। উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্তবানিজ্যেও কোনও প্রভাব পড়েনি।
