লক্ষাধিক দর্শনার্থী সমাগমে খালনার লক্ষ্মীপুজোর রাত হয়ে উঠবে আলোর রোশনাইয়ে মোহময়ী
আলোর রোশনাই ও মণ্ডপসজ্জার আতিশয্য তো ছিলই। সঙ্গে সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। সন্ধ্যা নামলেই আলোঝলমলে হয়ে উঠবে হাওড়ার জয়পুরের 'লক্ষ্মীগ্রাম' খালনা। কোজাগরীর চন্দ্রালোকিত রাতকেও ছাপিয়ে যাবে সেই আলোর রোশনাই। শনিবার সমৃদ্ধির দেবী আরাধনার এই বিশেষ দিনে বিকেল গড়াতেই মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়ে ভিড়।রাত্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে ভিড়ও। লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগমে কোজাগরী পূর্ণিমায় রমরমা জয়পুরের খালনা মনে করিয়ে দেবে শারদীয়ার কলকাতাকে।
নেহাতই
পুজো
নয়,
এ
গ্রামের
লক্ষ্মীপুজো
যে
আদ্যান্ত
একটা
উৎসব।
গ্রামজুড়ে
মেলার
বিস্তৃতি,
বাড়িতে
বাড়িতে
আত্মীয়-পরিজনের
ভিড়,
প্রতিবেশী
জেলা
এমনকী
মহানগর
কলকাতা
থেকেও
দর্শনার্থীদের
ভিড়ে
ঠাসা
খালনার
পুজো
তারই
প্রমাণ
দেয়।
একদিনের
লক্ষ্মীপুজো
নয়,
তিনদিনের
উৎসব
এই
গ্রামের
লক্ষ্মী
আরাধনায়।
খালনার
সুপ্রচীন
লক্ষ্মী
পুজোকে
ঘিরে
কোজাগরীর
এই
রাতে
প্রশাসনিক
ব্যবস্থাও
থাকে
নজরকাড়া।
গোটা
জেলা
প্রশাসন
উঠে
আসে
এই
পুজোর
নিরাপত্তায়।
আসলে স্বল্প পরিসরে অসংখ্য পুজো। দু'হাত ব্যবধানে মণ্ডপ। সারারাত ধরেই প্রতিমা দর্শন চলে। বারোয়ারি ও বাড়ির পুজো মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক পুজো হয় এই গ্রামে। তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা তো রাখতেই হবে। মাত্র দু-আড়াই বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থিম পুজের রমরমা। নানা রঙের আলোয় রোশনাইয়ের মধ্যে বিগত ১৮ বছর ধরে এলাকায় যেভাবে লক্ষ্মীপুজোয় থিমের জোয়ার এসেছে, তা নজর কাড়বেই কাড়বে দর্শনার্থীদের।
এবারও বিষয় ভাবনা ও বৈচিত্রে নূতনত্ব এনেছে খালনার পুজো কমিটিগুলো। তারা বিশালাকার মণ্ডপ উপহার দিয়েছে দর্শনার্থীদের। ১৫০ বছর পুর্তি উপলক্ষে খালনার ক্ষুদিরায়তলার কোহিনুর ক্লাবের লক্ষ্মীপুজোর থিম 'বিলুপ্ত প্রাণীর সন্ধানে'। ডাইনোসরের যুগ থেকে জীবকুলের বিবর্তনের প্রতিটি ধাপ তুলে ধরা হয়েছে ক্ষুদিরায়তলা। কালীমাতা তরুণ সংঘের চমক ৪০ ফুটের লক্ষ্মী প্রতিমা। সাবেকিয়ানায় বিশ্বাসী কৃষ্ণরায়তলা লক্ষ্মীপুজোয় লক্ষ্মী প্রতিমা এবার পুজিতা হবেন ইসকনের মন্দিরে।
বলাইস্মৃতি লক্ষ্মীমন্দির পুজো কমিটির থিমে উঠে এসেছে বৃক্ষ সংরক্ষণের ইতিবৃত্ত। 'আমরা সবাই' খড়ের চালার মাটির বাড়িতে এবার লক্ষ্মী আরাধনায় মেতেছে। সম্প্রীতির মেলবন্ধনে 'আমরা সকল'-এর লক্ষ্মী আরাধনায় মণ্ডপসজ্জা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আদলে। পদ্মফুলের আদলে মণ্ডপ তৈরি করে চমকে দিয়েছে করুণাময়ী কিশোর সংঘ। একইভাবে আনন্দময়ী তরুণ সংঘ এবার লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ গড়েছে ঘাসের শিল্পসুষমায়। মিতালী সংঘের উপস্থাপনা চারমিনার গেট।
পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হয়েছে তাদের এই মণ্ডপ। 'একতা'র মণ্ডপ সজ্জায় উঠে এসেছে আস্ত একটা রাজবাড়ি। এছাড়াও উল্লেখ্য বাদামতলা ইয়ং কর্নার, পূর্ব খালনা লক্ষ্মীপুজো কমিটি ও মালঞ্চ লক্ষ্মীমাতা কমিটির পুজোও। খালনার দুই শতাব্দী প্রাচীন চারুময়ী লক্ষ্মীমন্দিরের পুজোও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
খালনার এই লক্ষ্মীপুজেকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় এবারও রেকর্ড ছাড়াবে বলেই ধারণা উদ্যোক্তাদের। খালনার পাশাপাশি পাশের গ্রাম বাঁকুড়া, বাগনানের জোকা, শ্যামপুরের নাকোল গ্রামেও এখন সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজোর চল শুরু হয়েছে। দিন দিন এই গ্রামগুলিতেও লক্ষ্মীপুজো সর্বজনীন উৎসবের রূপ নিচ্ছে।