বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘হঠাৎ দেখা’ কল্যাণের, আবেগমথিত আলোচনা এজলাসে
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘হঠাৎ দেখা’ কল্যাণের, আবেগমথিত আলোচনা এজলাসে
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একের পর এক মামলায় রাজ্য সরকারকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছেন। সম্প্রতি তিনি তৃণমূল সরকারের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন। এসএসসি নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে এখন উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে বিচারপতির এজলাসে হঠাৎ হাজির আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘হঠাৎ দেখা’ কল্যাণের
কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হঠাৎ দেখা' হয়ে গেল। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ঢুকতেই শুরু হল তাঁদের আলাপচারিতা। কল্যাণকে দেখেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আরে কল্যাণদা কেমন আছেন? কল্যাণ তার জবাবে বলেন, আপনি যেমন রেখেছেন। তারপর তাঁদের মধ্যে বেশ খানিকক্ষণ কথা হয়।
নাটকীয় কথোপকোথন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে
ক'দিন ধরেই হাইকোর্টে ঘটনা পরম্পরায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। কিন্তু দেখা মেলেনি বর্ষীয়ান আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এদিন একেবারে নাটকীয় কায়দায় তিনি প্রবেশ করলেন হাইকোর্টে। সটান ঢুকলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। এতদিন যাঁর নামও শোনা যায়নি, কোনও দৃশ্যেই তাঁকে দেখা যায়নি, তাঁকে হঠাৎ শুক্রবার দেখা গেল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে।
বলেছি তো, পারলে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিন! বললেন কল্যাণ
তখন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি মামলা চলছিল, তখনই ঢুকে পড়েন কল্যাণ। আর কল্যাণবাবুকে দেখে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কল্যাণদা কেমন আছেন। কল্যাণের উত্তর শোনার পর বিচারপতি ফের তাঁর উদ্দেশ্য বলেন, আপনি নাকি আমরা নামে কী সব বলেছেন, শুনলাম। তা শুনে কল্যাণ একেবারে নিজস্ব স্টাইলে বলেন, হ্যাঁ বলেছি তো, পারলে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিন।
আপনি বলতেই পারেন, আপনার অধিকার রয়েছে! বিচারপতি
গোটা এজলাস তখন কল্যাণের দিকে তাকিয়ে। তা শুনে বিচারপতিও খানিকটা স্তম্ভিত হয়ে যান। তারপর বলেন, কী বলছেন, আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। আমি এমনিই বলেছি। কল্যাণ বলেন, আমি যা বলেছি, ডিভিশন বেঞ্চে বলেছি। বিচারপতি তা শুনে বলেন, তা আপনি বলতেই পারেন। আপনার অধিকার রয়েছে।
শুধু কালী নয়, আমি রামেরও ভক্ত! বিচারপতিকে কল্যাণ
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমি যখন আইনজীবী হিসেবে বার অ্যাসোসিয়েশনে ছিলাম, তখন থেকে আপনাকে পছন্দ করি। আমি জনপ্রতিনিধিদেরও শ্রদ্ধা করি। আপনি, সুখেন্দুশেখর রায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য- সবাইকেই আমি শ্রদ্ধা করি। এরপর তাঁদের আলোচনা অন্য মাত্রা পায়। বিচারপতি বলেন, আপনি তো শুনছি মা কালীর ভক্ত। তার জবাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শুধু কালী নয়, আমি রামেরও ভক্ত। দিনে দুবার হনুমান চাল্লিশা পাঠ করি।
আইনজীবী হিসেবে কাজ ও রাজনীতি ছাড়তে চান কল্যাণ!
এরপরই আবেগঘন হয়ে পড়েন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিচারপতিদের উদ্দেশে বলেন, আমি যাঁদের জন্য করেছি, তাঁদের কাছে এখন খারাপ। আর যাঁদের জন্য করিনি, তাঁরাই এখন আমায় ভালোবাসেন। এরপরই এজলাসে দাঁড়িয়ে কল্যাণ বলেন, আমি আইনজীবী হিসেবে কাজ ও রাজনীতি দুটোই ছাড়তে চাই। কিন্তু উপায় নেই যে!
শুধু আদালতকেই শোনালেন, নাকি অন্য কেউ কল্যাণের উদ্দেশ্য
এখন প্রশ্ন হঠাৎ কেন হাইকোর্টে গিয়ে তাঁর আবেগের কথা এ ভাবে ব্যক্ত করলেন কল্যাণ? তিনি কি তাঁর এই আবেগমথিত বাক্য শুধু আদালতকেই শোনালেন, নাকি অন্য কারও কানে তুলতে চাইলেন এই কথা। একটা সময় দল ও সরকারের হয়ে আইনি লড়াইয়ে তিনিই ছিলেন মুশকিল আসান। এখন তাঁর সঙ্গে দূরত্ব, তাই কি এ কথা বললেন কল্যাণ, জল্পনার পারদ চড়ছে তাঁর এই কথায়।
আরও বিপাকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়! এসএসসি মামলায় রক্ষাকবচের আবেদন খারিজ হাইকোর্টে