'ব' হল 'র': জ্যোতিদাদুর জমানায় উঠে যাওয়া সেই ফুটকিই আজ ফুলকি হয়ে ফিরেছে বং রাজনীতিতে
ভগবান রাম অযোধ্যায় জন্মালেও আজকাল রাজনীতির দাপাদাপিতে তিনি প্রায় বাঙালিতে পরিণত হয়েছেন। একেই তো "জয় শ্রীরাম" স্লোগানের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠছে,
ভগবান রাম অযোধ্যায় জন্মালেও আজকাল রাজনীতির দাপাদাপিতে তিনি প্রায় বাঙালিতে পরিণত হয়েছেন। একেই তো "জয় শ্রীরাম" স্লোগানের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠছে, আর তার পরে এখন রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিশ্ব বাংলার লোগোকেও বিকৃত করার অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা লোকসভা নির্বাচনের ভোটের সময় থেকেই সরগরম। মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে স্লোগান-বাণ ছোড়া বা সরকারি লোগোকে বিকৃত করার কান্ড তাতে আরও ঘৃতাহুতি দিয়েছে। বিশ্ব-বাংলার 'ব'কে রং-তুলির টানে একেবারে 'রাম' করে দেওয়ার ফলে রাজ্য রাজনীতিতে যে পারদ আগামী দিনে আরও চড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু মজার কান্ড হচ্ছে, এই সেই বামেদের একদা সাজানো বাগান যেখানে এককালে ব-এর তলায় ফুটকি দেখলে শাসকরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন। হায় রে! কোথা গেল সেসব দিন?
এই প্রসঙ্গে একটি ছোট গল্প মনে পরে যাচ্ছে। প্রয়াত সিপিআই নেতা ভুপেশ গুপ্তর এক ঘনিষ্ঠ সহকারী মহাশয়ের সঙ্গে আমি একসময়ে একটি কলকাতার একটি দৈনিকে কাজ করতাম। একদিন তিনিই কাজের ফাঁকে এই মজার গল্পটি বলেছিলেন।
জ্যোতিবাবুর বিরক্তিতে চটজলদি 'হরে রাম' হয়েছিল 'হবে বাম'
পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তখন ক্ষমতায়। বামেদের প্রবল প্রতাপে তখন রাম-ডান কারওরই বঙ্গে অক্সিজেন নেওয়ার জো নেই। একদিন তিনি গাড়িতে করে যাচ্ছেন কলকাতার আশেপাশে কোথাও, কোনও কর্মিসভায়। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন যে রাস্তার দু'পাশে লেখা রয়েছে "হরে রাম", হয়তো বা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। বিলেত-ফেরত ব্যারিস্টার, তায় আবার কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী, জ্যোতি বাবুর সেই দেখে চিত্তসুখের কোনও কারণ ছিল না; হয়েওনি। তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা সহায়কের কাছে এই নিয়ে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সহায়ক বলেন তিনি ব্যাপারটা দেখবেন। পরের দিন সকালে যখন সেই একই রাস্তা দিয়ে জ্যোতিবাবু ফিরছেন, তিনি প্রসন্নচিত্তে লক্ষ্য করলেন সমস্ত লেখাগুলি তখন বলেছে "হবে বাম" অর্থাৎ সিপিএম-এর প্রবল পরাক্রমশালী মেশিনারি এক রাতের মধ্যে 'র'-এর ফুটকি তুলে দিয়েছিল আর প্রতিষ্ঠা করেছিল বাঙালির রাজনৈতিক রূপে আরাধ্য ঠাকুরকেই।
ফুটকির প্রত্যাবর্তন মানেই তো নতুন পরিবর্তন
আজকের মমতার শাসনকালে সেই ফুটকিকে ফিরে আসতে দেখে বেশ উদ্বিগ্ন লাগছে। ফুটকির প্রত্যাবর্তন মানেই তো ফের আরেক পরিবর্তন। একসময়ের বামঠাকুরকে এক ফুটকিতে রাম ঠাকুর বানিয়ে দেওয়ার এই জ্যোতিবিরোধী স্পর্ধা দেখিয়ে বাঙালি প্রমাণ করল যে বাকি দেশের সঙ্গে একাসনে বসতে তার কোনও অসুবিধে নেই; তা অমর্ত্য সেন কিছু বলুন না বলুন।