মমতার মুখের কথা এখন আর মানুষ গুরুত্ব দিয়ে শুনছে না; অতিরিক্ত মোদী বিরোধিতা করতে গিয়েই এই হাল
এক বছরের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিরাচরিত শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ, সেই ২১ জুলাইএর সম্মেলনের গুরুত্ব বদলে গিয়েছে অনেকটাই।
এক বছরের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিরাচরিত শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ, সেই ২১ জুলাইএর সম্মেলনের গুরুত্ব বদলে গিয়েছে অনেকটাই। এক বছর আগেও তিনি শহীদ দিবসের মঞ্চকে হাতিয়ার করতেন তাঁর জাতীয় রাজনীতির আকাঙ্খাকে আকার দেওয়ার জন্যে; নিজের 'অগ্নিকন্যা' ভাবমূর্তিটিকে ফের চাঙ্গা করে। আপোসহীন সংগ্রামের কথা বলতেন।
ফিকে অগ্নিকন্যার ভাষণ
দু হাজার ঊনিশের ২১ জুলাইতে সেই অগ্নিকন্যাকে অনেকটাই ফিকে লাগল, বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর। তাঁর মুখে যে সমস্ত কথা শোনা গেল, তা বামেদের শেষ সময়ে শোনা যেত। এই যেমন কৰ্মী-নেতাদের "জনসংযোগ বাড়ান" বলা বা নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেসের শুদ্ধিকরণের প্রস্তাব। এক দশক আগে বামপন্থী নেতারাও এই সমস্ত নিদান দিতেন তৃণমূলের দ্রুত উত্থানকে আটকানোর লক্ষ্যে, যদিও তাতে কাজ হয়নি কিছু আখেরে। আর এবারে তৃণমূলের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে সেই একই প্রবণতা। ইতিহাস কি তাহলে মমতার দলকেও ছেড়ে কথা বলবে না?
অতিরিক্ত মোদী বিরোধিতার প্রয়োজন ছিল না মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বেশ বিপাকে পড়েছেন। আর তার জন্যে তিনি নিজে দায়ী অনেকটাই। কয়েক মাস আগে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হন মমতা। মোদী হারবেনই ধরে নেন তিনি; নানা দলের সঙ্গে জাতীয় ক্ষেত্রে মোদী-বিরোধী জোটের প্রচেষ্টাতেও নেমে পড়েন। কিন্তু অতিরিক্ত মোদী বিরোধিতা করতে গিয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন। যদি দুশমনকে তার প্রাপ্য গুরুত্বটুকু দিতেন, তার অস্তিত্বকে নস্যাৎ না করতেন কথায় কথায়, তাহলে মমতার কথার দাম এখনও থাকতো। যেহেতু তাঁর সমস্ত হিসেবে নিকেশই জলে গিয়েছে গত ২৩ মে এবং তাঁর নিজের দলের মধ্যেই দেখা গিয়েছে মাত্রাছাড়া ভাঙন, তাই তাঁকে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিতে রাজি নন রাজ্যের বহু মানুষই। প্রশান্ত কিশোরকে ডেকে আনাও মমতার নেতৃত্বের ভাবমূর্তিকেও দুর্বল মনে করাচ্ছে। যিনি গোটা রাজ্যকে চেনেন নিজের হাতের তালুর মতো, তাঁকে এখন উপদেষ্টা ডাকতে হচ্ছে কেন?
দুশমনকেও তার প্রাপ্য গুরুত্ব দিতেই হবে
মমতা সরকার যে আট বছরে কাজ কিছুই করেনি, তা নয়। গ্রামবাংলার অনেকটা শ্রী তাঁর আমলে ফিরেছে। কিন্তু নিজের সরকারের ভালো কাজ বা যে কাজ করা হয়নি তার খতিয়ান নিয়ে মানুষের কাছে না গিয়ে মমতা নিজের রাজনীতিকে সম্পূর্ণ বিজেপি-বিরোধিতায় পর্যবসিত করেই ডুবেছেন। মোদীকে অবজ্ঞা করা মানে মূর্খামি। এই মুহর্তে তিনিই এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা একথা মানতেই হবে। সত্যকে অবজ্ঞা করে যে আখেরে কোনও লাভ হয় না, তা তৃণমূল নেত্রী কি বুঝছেন?