'বরাত জোরে বেঁচেছিলাম, সত্যজিৎ পারল না', আর কি বললেন 'শ্যুট আউট অ্যাট জয়নগর'-এর বিধায়ক
সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার জন্য এখন দলীয় কর্মসূচিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনই এক কর্মসূচি সেরে বাড়ি ফিরছিলেন আর তখনই সত্য বিশ্বাস,-এর খবরটা পেয়েছিলেন জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস।
সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার জন্য এখন দলীয় কর্মসূচিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনই এক কর্মসূচি সেরে বাড়ি ফিরছিলেন আর তখনই সত্য বিশ্বাস,-এর খবরটা পেয়েছিলেন জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস। নিজের কানে শোনা কথাটা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। বিধানসভায় সত্যজিৎ-এর পাশেই বসতেন বিশ্বনাথ। দু'জনের মধ্যে প্রচুর গল্পও হত। সেই সত্যজিৎ-কে সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে কেউ গুলি করে খুন করেছে! এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না বিশ্বনাথের। খেয়াল পড়ে যাচ্ছিল মাস দুয়েক আগেপ ১৩ ডিসেম্বরের সন্ধেটা। রক্তের মধ্যে দিয়ে আচমকাই হিমেল স্রোত বয়ে গিয়েছিল বিশ্বনাথের।
রাতে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতার কাহিনি বলেই ফেলেন বিশ্বনাথ। ১৩ ডিসেম্বর দলীয় কর্মসূচি সেরে বাড়ি ফিরছিলেন বিশ্বনাথ দাস। জয়নগরের বিধায়ক রাস্তার মাঝে দলের একটি অফিসে নেমে গিয়েছিলেন। তাঁকে নামিয়ে দিয়েই গাড়িটি গিয়েছিল পেট্রোল পাম্পেতেল ভরতে। আর সেখানেই দুষ্কৃতীদের একটি তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে রীতিমতো হিন্দি ফিল্মের কায়দায় সমানে গুলি ও বোমাবাজি করতে থাকে। গুলিতে গাড়ি পুরো ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের গাড়ির চালক এবং সেই দিন তাঁর সঙ্গী হওয়া স্থানীয় এক যুব তৃণমূল নেতা এই ঘটনায় প্রাণ হারান। মারা পড়ে এক স্থানীয় নিরীহ যুবক। যে মেয়ের স্কুলের ভর্তির জন্য প্রধানের কাছ থেকে শংসাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পুলিশ এই ঘটনায় পরে দুষ্কৃতীদলের একটা বিশাল সংখ্যক লোকেদের গ্রেফতার করলেও এখনো স্পষ্ট নয় যে হামলার পিছনে আসলে কারা ছিল। বিশ্বনাথ সেদিন গাড়ি থেকে রাস্তার মাঝে না নেমে দাঁড়ালে তাঁর পরিণতিও ভয়ঙ্কর হতে পারত।
বলতে গেলে শ্য়ুট আউট অ্যাট জয়নগরের সেই ঘটনা চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছিল। কারণ এক বিধায়কের গাড়িতে এভাবে দুষ্কৃতী হামলার নজির বাংলার রাজনীতিতে ছিল না। বিশ্বনাথ দাস নিজেও সেই সন্ধ্যায় তাঁর গাড়িতে হওয়া হামলার আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুন যেন তা ফের ফিরিয়ে আনে তাঁর মনে।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বনাথ দাস বলেন, 'আমরা জনগণের কাজ করার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করি। এতে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। কিন্তু তা বলে জনপ্রতিনিধিদের উপরে প্রাণঘাতী হামলার করার এই যে একটা চল শুরু হয়েছে তা বন্ধ হওয়া উচিত। এমন খুনে রজনীতি দিয়ে কারোরই কিছু পাওয়া হয় না।' বিশ্বনাথ দাস আরও জানিয়েছেন, সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের ঘটনা সামনে আসতেই জয়নগর থানার আইসি তাঁকে ফোন করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন তিনি নিরাপদ আছেন কি না এবং তাঁর অবস্থানও জানতে চেয়েছিলেন। খোদ পুলিশ সুপার নাকি ফোন করেছিলেন জয়নগর থানায়। বিশ্বনাথ দাসের মতে, তাঁর উপরে যে বড় হামলা হয়েছিল সেটাই হয়তো সত্যজিৎ খুনের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশের মনে একটা উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তাই পুলিশ সুপার জয়নগরের বিধায়কের নিরাপত্তা ঠিক আছে কি না তা নজরে রাখতে চাইছিলেন। পরে বাড়ি ফিরে অবশ্য পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথাও বলেন বিশ্বনাথ।
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং ২০১৮ সালের শেষে বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের উপরে হামলার ঘটনাকে ব্যতিক্রমী বলেই মনে করেছিল পুলিশ-প্রশাসন। কারণ একজন বিধায়কের গাড়িতে প্রাণঘাতী হামলার করার আগে দুষ্কৃতীরা হয়তো তার পরিণামটা আন্দাজ করতে পারেনি, তদন্তে এমনই মনে করেছিল পুলিশ। কিন্তু, খুনে রাজনীতি যে বিধায়ক নামক স্টেটাসটাকেও পাত্তা দেয় না তা প্রমাণ করে দিল কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের উপরে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা। যার জেরে প্রাণ হারালেন বিধায়ক সত্য়জিৎ বিশ্বাস।