মমতার জয়ের অন্যতম কান্ডারি অভিষেক! রাজভবনে দেখেই সাংসদকে জড়িয়ে ধরলেন রাজ্যপাল
করোনা আবহে ৫০ জন অতিথি নিয়ে অনাড়ম্বর আয়োজন করা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় বারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের। রাজভবনের অনুষ্ঠানে খোশমেজাজে দেখা গেল রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রশান
২০০ এরও বেশি আসন পেয়ে গড় বাঁচানোর লড়াইয়ে নেপথ্য নায়ক। মাঠে নেমে খেললেন তো বটেই, অন্যকে বল এগিয়ে করালেন গোলও। তৃতীয়বার নজির গড়ে বাংলার মসনদে তৃণমূল। আর জয়ের কৃতিত্বের সিংহভাগই ব্র্যান্ড মমতার পাশাপাশি 'ভাইপো' অভিষেককেই দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে তৃণমূল নেতারা স্বয়ং। একুশের ভোটময়দানে প্রার্থী না হয়েও মোদী থেকে শাহ, রাজনাথ -স্মৃতির আক্রমণের নিশানায় ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা ভোটপর্বে যতবার বিরোধীদের মুখে শোনা গিয়েছে 'দিদি' কটাক্ষ, তার থেকে অন্তত কয়েকগুণ বেশি বার উচ্চারিত হয়েছে ভাইপোর নাম। প্রবল চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে গিয়েছেন। দিনের শেষে স্বস্তির হাসি সবার মুখে।
চাপ ছিল অভিষেকের উপর
২০১৯। লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফল তৃণমূলের। এরপরেই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দ্বারস্থ হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে নিয়ে আসেন প্রশান্তকে। ভোট কৌশলীকে আনা নিয়ে কার্যত দলের মধ্যে চাপের মধ্যে পড়তে হয় অভিষেককে। প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে থাকেন। এমনকি প্রশান্ত কিশোর, অভিষেকের বিরদ্ধে অনেকেই খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ আনেন। ভোট যত এগিয়ে আসে একের পর এক প্রভাবশালী নেতা পদত্যাগ করতে থাকে। যা যথেষ্ট চাপ বাড়ায় অভিষেকের উপর। বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতা চলে যাওয়াটা বড় চাপের ছিল। কিতু মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে গিয়েছেন। আর সেটাই অভিষেকের সাফল্যের অন্যতম কারন হিসাবে মনে করছেন রাজনৈতিকমহল।
বাড়তি গুরুত্ব বেড়েছে পিসি মমতার কাছেও
২০০ এরও বেশি আসন। ১০০ আসন পাড় হতে পারেনি বিজেপি। এতবড় সাফল্যে খুশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, এত খুশি আর কোনওদিন হননি তিনি। এই অবস্থায় অভিষেকের উপরও ভরসা বেড়েছে পিসি মমতার। আর তাই ফল ঘোষণার পরেই একাধিকবার অভিষেকের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার ছবি ধরা পড়েছে। এমনকি ফল ঘোষণার পর থেকেই মমতার ছায়াসঙ্গী হিসাবেই রয়েছেন অভিষেক। শপথগ্রহণের সকালে রাজভবনে অভিষেকের সঙ্গেই গিয়েছেন মমতা। এমনকি, নবান্ন পর্যন্ত পিসি মমতাকে এগিয়ে দিয়েছেন অভিষেকই। কার্যত তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁকে নবান্নে ফেরানো। সেই কাজ আজ সম্পন্ন করলেন তিনি।
কাঁধে হাত দিয়ে আলাপচারিতায় মগ্ন রাজ্যপাল
করোনা আবহে ৫০ জন অতিথি নিয়ে অনাড়ম্বর আয়োজন করা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় বারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের। রাজভবনের অনুষ্ঠানে খোশমেজাজে দেখা গেল রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রশান্ত কিশোর- সকলের সঙ্গেই কথা বললেন তিনি। অভিষেককে ডেকে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন তিনি। এমনকি যুবনেতার কাঁধে হাত দিয়ে অনেকক্ষণই আলাপচারিতায় মগ্ন হলেন রাজ্যপাল। কুশল বিনিময়ের পর অভিষেকের রাজনৈতিক কেরিয়ারের প্রশংসা করেছেন ধনকড়, এমনই খবর সূত্রে। থ্রোন রুমে থাকা অন্যান্য অতিথিদের মাঝে এভাবে অভিষেকের সঙ্গে আলাদাভাবে আলাপচারিতা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশই।
বিরোধীরা ছিলেন না কেউ
বুধবারের শপথ অনুষ্ঠানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, কংগ্রেসের সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, সিপিএম-এর বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপি নেতা মনোজ টিজ্ঞা প্রমুখকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি বুদ্ধদেব। একমাত্র প্রদীপ ছাড়া আর কোনও বিরোধী নেতাকে দেখা যায়নি রাজভবনে। তবে অসুস্থতার জন্যে রাজভবনে যাননি বুদ্ধবাবু। অন্যদিকে দিলীপ ঘোষরা এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করেন।