তৃণমূলের ৩২ আসন জয়ের আশায় জল ঢালছে মোদী হাওয়া ও সারদা কেলেঙ্কারি
বাংলায় এই অনিশ্চিত তৃণমূল হাওয়ার একটা কারণ তো বিজেপি বটেই। প্রথম থেকে বাংলায় বিজেপির সংগঠন নড়বড়ে বলে মোদী ঝড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল নেতৃত্ব পাত্তা না দিলেও সেটা যে দলের বড় ভুল ছিল তা এখন হারে হারে বুঝতে পারছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের আশা ছিল লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে ৩২টি আসন পাবে তারা। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের বেশ কিছু শীর্ষ নেতাই এখন তৃণমূলের সে দাবীতে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
২০১১ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের হাওয়ায় ছিটকে গিয়েছিল বামফ্রন্ট। তবুও, এটা ভুললে চলবে না যে রাজ্যে বামেদের ৪১ শতাংশ ভোট ভাগ রয়েছে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মহাজোট ছিল। বিজেপি ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ত না। এ পরিস্থিতিতে তৃণমূলের একমাত্র প্রতিপক্ষ ছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু এবারের চিত্রটা অনেকটাই আলাদা। কংগ্রেস গোটা বাংলায় শক্তিশালী না হলেও, উত্তরবঙ্গে কংগ্রেস দূর্গ বেশ মজবুত। এবারে জোট না থাকার ফলে কংগ্রেস তৃণমূলের বেশ কিছুটা ভোট কাটবে। আর অন্যদিকে মোদী হাওয়ায় ভর করে বিজেপিও জোর টক্কর দেবে বলেই আশা করা হচ্ছে। তার উপরে ভোটের মুখে সারদা কেলেঙ্কারি যে তৃণমূলকে বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট ভেঙে কংগ্রেসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন : অধীর চৌধুরি
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির কথায়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে জোট ভেঙেছেন। এবার নির্বাচনের ফলেই নিজের সেই ভুলটা বুঝবেন। এবারের লড়াই আর দ্বিমুখী লড়াই নয়, বরং চতুর্মুখী লড়াই, যেখানে কংগ্রেসও একটা ফ্যাক্টর। যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। আমরা আমাদের ৬টা আসন ধরে রাখতে পারব সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত, একইসঙ্গে আমাদের ভোট ভাগ বাড়বে বলেও আমরা আশাবাদী।"
গত বছর লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিংয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থন পেয়ে মাত্র একটি আসনই জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এবার রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা বাড়বে বলেই আশাবাদী বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিনহা বলেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের যত বেশি আক্রমণ করবেন, তত আমাদেরই লাভ। যদি মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারেন তাহলে একের বেশি আসনই আমরা পাব।"
বিজেপির পাশাপাশি অবশ্যই আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর সারদা কেলেঙ্কারি। হয়তো এই প্রথমবার কোনও দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারির ঘটনা লোকসভা নির্বাচনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।যার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। আর সেই সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছেন বিরোধীরা। আর সেই কারণেই ২০০৯ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যে পরিমাণ আসন তৃণমূল পেয়েছিল তা অন্ততপক্ষে ধরে রাখার জন্য মরিয়া তৃণমূল হিংসা ও সন্ত্রাসের পথ নিয়েছে।
মূলত আজ রাজ্যের যে যে জায়গায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে সারদা ক্ষতিগ্রস্তদের সিংহভাগই সেই সব এলাকার বাসিন্দা। গত পঞ্চায়েত ভোটে ২৪ পরগনা, নদিয়াতে ভাল ফল করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের দাবী, অবাধ নির্বাচন হলে লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের একই ফল হবে।